০৮ নভেম্বার ২০২১, ১৯:২৮ মিঃ
চার্লি চ্যাপলিন বলেছিলেন, ‘আমার সব থেকে ভালো বন্ধু হলো আয়না, কারণ আমি যখন কাঁদি তখন সে হাসে না!’ তুমুল জনপ্রিয় ব্রিটিশ মূকাভিনেতা যা বলেছেন, তার অর্থ দাঁড়ায়- আমি যেমন, আয়না দেখাবে ঠিক তেমন। আমি যদি হাসি, সে অবশ্যই কাঁদবে না। কাঁদলে কান্নার ছবিটাই দর্পনে ধরা দেবে। কিন্তু আমরা ঠিক এই ব্যাপারটাই বুঝি না, নিজেকে কখনোই দাঁড় করাতে চাই না আয়নার সামনে। বরং অন্যদের বলি- তোমরা দাঁড়িয়ে দেখো, এরপর কথা বলতে এসো!
বাংলাদেশ ক্রিকেটে অবশ্য বেশ কিছুদিন ধরে ট্রেন্ডিং হয়ে আছে ‘আয়না।’ জাতীয় দলের তারকা ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিমের একটা মন্তব্য মুখে মুখে সবার। এবার পাকিস্তানি তারকা শোয়েব মালিকও দিলেন আয়না তত্ত্ব। পাকিস্তানের এই তারকা ব্যাটসম্যান ৩৯-এ এসেও কীভাবে ধরে রেখেছেন নিজেকে, সেটা জানাতে গিয়ে যা বললেন, তাতে কিছুটা হয়তো লজ্জাই পাবেন মুশফিক।
রানে ফিরে তিনি যেন উড়ছিলেন। তারপরই সমালোচকদের অভিনব পরামর্শ দেন মুশি, ‘মাঠের বাইরে কী কথা হচ্ছে? এমন কথা তো হবেই। ভালো করলে তালি দেবে, খারাপ করলে গালি দেবে। আমি ১৬ বছর ধরে খেলছি, আমার জন্য এসব নতুন কিছু না। আমার কাছে এসব খুবই স্বাভাবিক মনে হয়। যারাই এমন কথা বলেন, তাদের নিজেদের মুখটা একটু আয়নায় দেখা উচিত। কারণ, তারা বাংলাদেশের হয়ে খেলে না, আমরাই খেলি। শুধু আমি না, ১৬ বছর ধরে যারা খেলছেন কিংবা তারও আগে থেকে, যারা টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার আগেও খেলেছেন, সবাই কিছু করার চেষ্টা করেছেন। কোনো দিন হয়, কোনো দিন হয় না। তবে দিন শেষে আমরা দেশের প্রতিনিধিত্ব করি, আমাদের কাছে সবচেয়ে গর্বের বিষয় এটিই।’
কিন্তু এরপরই মুশফিকের সেই আত্মবিশ্বাসের বেলুন প্রতিটি ম্যাচেই চুপসে গেছে। বলার মতো কিছুই আর করতে পারেননি ছয়টি বিশ্বকাপের অভিজ্ঞতা সঙ্গী করে মাঠে নামা এই স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান। বরং এমন দৃষ্টিকটুভাবে আউট হয়েছেন, এরপর পুরো ব্যাপারটা বুমেরাংয়ের মতো তার দিকেই এসেছে। বিশেষ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচটা তো জিততেই পারত দল। তিনি যখন ফেরেন তখন জিততে বাংলাদেশে চাই ৩৯ বলে ৫৩ রান। রবি রামপালের বলে স্কুপ খেলে দলের সর্বনাশ ঢেকে আনেন তিনি। অথচ এভাবে এমন দায়িত্ব জ্ঞানহীন শট খেলার কোনো মানেই ছিল না! ৭ বলে ৮ রানের ইনিংস খেলে ফেরেন তিনি।
মুশির ব্যর্থতার কাব্য এখানেই শেষ নয়, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পরের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ০ ও শেষটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১ রানে বিদায়। কে জানে তারপর আয়নায় নিজের মুখটা তিনি দেখেছেন কি না! এবার তো স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবেই খেলতে এসেছিলেন বিশ্বকাপে। এমন যদি হয় পারফরম্যান্স আর একদিন একটু ভালো খেললেই আকাশে উড়তে থাকেন তখন তো বিশ্লেষকরা বলতেই পারেন, ‘বিবেকের আয়নায় এবার মুখটা দেখা উচিত মুশফিকের।’
রোববার রাতে তিনি ফের বুঝিয়ে দিলেন বয়সটা তার জন্য শুধুই সংখ্যা। ৩৯ বছর ২৭৯ দিনে এসেও ২২ গজে রানের ফোয়ারা ছুটাচ্ছেন তিনি। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ১৮ বলে করলেন অর্ধশতক। ছুঁয়ে ফেলেন এই বিশ্বকাপেই করা ভারতের লোকেশ রাহুলের কীর্তি। এটিই চলতি বিশ্বকাপের দ্রুততম অর্ধশতরানের রেকর্ড। এটি পাকিস্তান ক্রিকেটারদের মধ্যে টি-টোয়েন্টিতে দ্রুততম অর্ধশতরানের রেকর্ড।
১৮ বলে অপরাজিত ৫৪ রান করেন শোয়েব মালিক। যে বয়সে অন্যরা চলে যান সাবেকদের তালিকায়, তখন কি না সানিয়া মির্জার জীবনসঙ্গী চুটিয়ে খেলে যাচ্ছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। তার এমন ফিটনেস, একাগ্রতা আর দারুণ নৈপুন্যের পেছনে রহস্যটা হলো আয়না। যা কি না সমালোচকদের দেখতে বলেছিলেন বাংলাদেশের মুশফিক। শোয়েব মালিক অবশ্য নিজেকেই দেখেন। আরশিতে চোখ রেখেই শুধরে নেন নিজেকে।
শোয়েব মালিক যা বলেছেন তা যে কোন পেশার মানুষের জন্যই বেশ মানানসই, ‘দেখুন, সত্যি বলতে, যখন আমি নিজেকে আয়নার দেখি, তখন নিজেকে ফিট দেখতে চাই। এই নিয়ে একটা খুতখুতে বিষয় রয়েছে আমার। যদি কেউ নিজেকে ফিট দেখতে চায়, তা হলে তাকে নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে। নিজেকে ফিট দেখার এক ধরনের আত্মমগ্নতা আছে আমার। সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো-ক্রিকেট খেলাটা এখনও উপভোগ করছি এবং দিনশেষে এটা দলকেও সহায়তা করছে।’
সর্বস্বত্ব: এমআরএল মিডিয়া লিমিটেড
ঢাকা অফিস: মডার্ণ ম্যানসন (১৫ তলা), ৫৩ মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০
ময়মনসিংহ অফিস: হাসনাইন প্লাজা (দ্বিতীয় তলা), ৭ মদন বাবু রোড, ময়মনসিংহ-২২০০
সেলফোন: ০৯৬১১-৬৪৫২১৫, ০৯৬৯৭-৪৯৭০৯০
ই-মেইল: jagrota2041@gmail.com
ফোন :
ইমেইল :