2024-03-29 12:20:43 pm

এক দলিলেই রাজস্ব ফাঁকি ১৭ লাখ!

www.focusbd24.com

এক দলিলেই রাজস্ব ফাঁকি ১৭ লাখ!

২৯ নভেম্বার ২০২১, ২০:১৩ মিঃ

এক দলিলেই রাজস্ব ফাঁকি ১৭ লাখ!

বগুড়ার শেরপুর সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয় অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে টাকা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, নানা অজুহাতে ঘুষ নেওয়া ওপেন সিক্রেট হয়ে দাঁড়িয়েছে। একইসঙ্গে, জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে দলিল রেজিস্ট্রি করে সরকারকে রাজস্ব ফাঁকিও অভিযোগ রয়েছে। ভূমি কার্যালয়ের একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দলিল লেখকদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা একটি চক্র এরসঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ।

গত ২৪ নভেম্বর শেরপুর সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে এক দলিলেই ১৭ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকির ঘটনা নিয়ে হইচই শুরু হয়। বাণিজ্যিক শ্রেণির জমিকে ধানি দেখিয়ে রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে প্রায় ১৭ লাখ টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে সরকার।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের দড়িমুকুন্দ মৌজায় এসএম কামাল হোসেনের মালিকানাধীন দুই একর চার শতক বাণিজ্যিক শ্রেণির জমি ক্রয় করে বগুড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২। সমিতির পক্ষে ক্রেতা ছিলেন পদাধিকার বলে জেনারেল ম্যানেজার। সর্বশেষ জমির কাগজপপত্রে বাণিজ্যিক হিসেবেই নামজারি ও খাজনা পরিশোধ করা হয়। অথচ বিক্রির সময় রাজস্ব ফাঁকি দিতে ওই জমি ধানি শ্রেণি হিসেবে উল্লেখ করে রেজিস্ট্রি করে নেওয়া হয় (দলিল নম্বর-১১০৯০)। শেরপুর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার নূরে আলম সিদ্দিকী, অফিস সহকারী তাজুল ইসলাম ও অফিস সহায়ক আব্দুর রউফের বিরুদ্ধে এ অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে বগুড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর জেনারেল ম্যানেজার এমএ কুদ্দুস জাগো নিউজকে বলেন, ‘রাজস্ব ফাঁকির বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। যেভাবে আমাদের হিসাব দেওয়া হয়েছে, সেভাবেই আমরা টাকা জমা দিয়েছি। এরপরও দলিল নিবন্ধনে ভুলক্রমে রাজস্ব কম হলে এবং সেটি আমাদের জানালে অবশ্যই পরিশোধ করবো। আমরা কারো সঙ্গে অবৈধ লেনদেন করিনি।’

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, জমি নিবন্ধন করতে প্রতি লাখে ৫০০ টাকা, এন-ফির নামে ৫০০ টাকা, প্রতি দলিলের নকল নিতে ২০০০-২৫০০ টাকা, ওসিয়তনামা দলিল নিবন্ধনে বাড়তি ৩০০-৪০০ টাকা এবং দলিলের রসিদ হারিয়ে যাওয়ার অজুহাতে ৫০০-৬০০ টাকা করে ঘুষ নেওয়া হয়। নির্ধারিত ফির কম টাকা দিলেই হয়রানি শিকার হতে হয়। কাগজপত্র সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও নানা অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করা হয়।

অসাধু এ চক্রের সঙ্গে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দলিল লেখকদের একটি অংশ জড়িত বলে জানা গেছে। তারাই ভুয়া নামজারি, ডিসিআর, খাজনার রসিদ, আরএস রেকর্ডের জাল কাগজ তৈরি করে জমি নিবন্ধন করে দেন। এমনকি এসব জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করেও সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ভুয়া কাগজপত্র তৈরির মাধ্যমে চক্রটি জমি নিবন্ধনের এই রমরমা বাণিজ্য চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন দলিল লেখকরা।

জমি নিবন্ধন করতে আসা খন্দকারটোলা গ্রামের রাসেল মাহমুদ, ভবানীপুর এলাকার সোলাইমান আলী, মির্জাপুর গ্রামের জাহিদুল ইসলাম, পালাশন গ্রামের আব্দুস সাত্তার অভিযোগ করে বলেন, ‘শেরপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে কী হয় না! টাকা হলে এখানে বাঘের চোখও মেলানো সম্ভব। সরকারি নিয়মনীতির কোনো বালাই নেই। বিভিন্ন অজুহাতে টাকা নেওয়া হয়। এরমধ্যে অফিসের খরচা, মসজিদের চাঁদা, রসিদের চাঁদাসহ বকশিশ রয়েছে। অথচ সাব-রেজিস্ট্রি অফিস দুর্নীতিমুক্ত এমন ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো।’

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী, দলিল লেখক ও সেবা নিতে আসা ব্যক্তিরা ছাড়াও দালালদের আনাগোনা রয়েছে। তারা কার্যালয়ের ভেতরে-বাইরে জটলা করে বসে আছেন। তারা কম টাকায় দলিল নিবন্ধন করে দেওয়ার কথা বলে পছন্দের দলিল লেখকদের কাছে মক্কেল ধরে এনে দেন। বিনিময়ে কমিশন পান তারা।

ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জমি নিবন্ধন করতে এলেই সরকার নির্ধারিত ফির পরিবর্তে দলিল লেখকরা তাদের ইচ্ছেমাফিক ফির হিসাব হাতে ধরিয়ে দেন। এর বাইরে জমি নিবন্ধন হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন। এতে করে সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষকে হাজার হাজার টাকা অতিরিক্ত ফি গুনতে হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন দলিল লেখক জাগো নিউজকে বলেন, ‘এক লাখ টাকা মূল্যের জমি নিবন্ধন করতে কবলার জন্য ৬৫০০ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হয়। অর্থাৎ চালানের মাধ্যমে ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়। এরসঙ্গে দলিল লেখকের সম্মানীসহ আরও দেড় হাজার টাকা হলেই যথেষ্ট। অথচ সেখানে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে প্রতি লাখে ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা।’

জানতে চাইলে শেরপুর সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ের অফিস সহকারী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘কিছু দলিল লেখক তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছেন। নিজেদের অপকর্ম আড়াল করার জন্য এবং অফিসে অবৈধ সুযোগ-সুবিধা নিতে ব্যর্থ হয়েই তারা এসব ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলেছেন। উল্টো ওই দলিল লেখকরাই সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। অথচ এসব দেখার কেউ নেই। কিন্তু অফিসে খুশি হয়ে খরচ বাবদ দুই একশ টাকা নেওয়া হলে সেটি নিয়েই তারা উঠেপড়ে লাগেস।’

একই কথা বলেন অভিযুক্ত অফিস সহায়ক আব্দুর রউফ।

অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শেরপুর রেজিস্ট্রি কার্যালয়ের সাব-রেজিস্ট্রার নুরে আলম সিদ্দিকী। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি এখানে যোগদানের পর কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি হয়নি। যথযাথ নিয়ম মেনেই সবকিছু করা হয়েছে। এছাড়া রাজস্ব ফাঁকির কোনো ঘটনা ঘটেনি।’

তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে একটি স্বার্থান্বেষী মহল মিথ্যাচারে নেমেছেন। আমি থাকাতে দলিল লেখকরা কোনো অবৈধ সুযোগ-সুবিধা নিতে পারেননি। এসব কারণে তারা আমার ও সাব-রেজিস্ট্রি অফিস সম্পর্কে মিথ্যা অভিযোগ তুলেছেন।


উপদেষ্টা সম্পাদক: ডি. মজুমদার
সম্পাদক: মীর আক্তারুজ্জামান

সর্বস্বত্ব: এমআরএল মিডিয়া লিমিটেড
ঢাকা অফিস: মডার্ণ ম্যানসন (১৫ তলা), ৫৩ মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০
ময়মনসিংহ অফিস: হাসনাইন প্লাজা (দ্বিতীয় তলা), ৭ মদন বাবু রোড, ময়মনসিংহ-২২০০
সেলফোন: ০৯৬১১-৬৪৫২১৫, ০৯৬৯৭-৪৯৭০৯০ ই-মেইল: jagrota2041@gmail.com
ফোন :
ইমেইল :