সরিষাবাড়ীতে ঘরে চেতনানাশক স্প্রে করে অহরহ হচ্ছে চুরি
প্রকাশ :

জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে সম্প্রতি বাসাবাড়িতে চুরি ও রাস্তাঘাটে ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েই চলেছে। অধিকাংশ ঘটনাই চেতনানাশক ওষুধ প্রয়োগ এবং জানালার গ্রিল কেটে ঘটলেও সংঘবদ্ধ চক্রের কাউকেই শনাক্ত করতে পারছে না পুলিশ। অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার না পাওয়ায় থানার দ্বারস্থ হতেও চান না ভুক্তভোগীরা। এতে উপজেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করছে সচেতন মহল।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সংঘবদ্ধ একটি চক্র বিভিন্ন বাসাবাড়িতে সন্ধ্যার আগে কৌশলে রান্না ঘরের জানালা দিয়ে খাবারের সঙ্গে এবং রুমের মধ্যে চেতনানাশক ওষুধ স্প্রে করে রাখে। রাতে পরিবারের লোকজন খাবার খেয়ে অচেতন হয়ে পড়লে চোর চক্র জানালার গ্রিল কেটে ঘরে ঢুকে নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও মূল্যবান মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়।
চোরের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না সাংবাদিক, সরকারি কর্মকর্তা, ডাক্তার, শিক্ষক-ব্যবসায়ী কেউই। গত ছয়মাসে পৌরসভা ও আশপাশের এলাকায় একই কায়দায় অন্তত অর্ধশতাধিক চুরির ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও দিনে-দুপুরে চালকদের খাবারের সঙ্গে কৌশলে চেতনানাশক মিশিয়ে ভ্যান-রিকশা, ইজিবাইক চুরির ঘটনাও ঘটছে।
সর্বশেষ গত শনিবার (১৯ মার্চ) দিনগত রাতে উপজেলার কামরাবাদ ইউনিয়নের বীর বড়বাড়িয়া গ্রামের পাট ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমানের বাড়িতে চোর ঢুকে মূল্যবান মালামাল এমনকি কম্বল, কাঁথা, চাল, ডাল, তেলও চুরি করে নিয়ে যায়। একইরাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রাস্তার পাশে অবস্থিত দি ঢাকা ডেন্টাল ও মডার্ন ডেন্টাল কেয়ারের দুটি ক্লিনিকে গুরুত্বপূর্ণ মেডিকেল সরঞ্জাম চুরি হয়। এছাড়া একটি মুদি দোকানের মালামাল চুরি হয়।
চুরির বিষয়ে ডেন্টিস্ট শাহনেওয়াজ সোহাগের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দি ঢাকা ডেন্টাল ও মডার্ন ডেন্টাল কেয়ার পাশাপাশি দুটি ক্লিনিক। শনিবার (১৯ মার্চ) সারাদিন চেম্বারে রোগী দেখে রাতে দুজনেই বাসায় যাই। সকালে গিয়ে দেখে উপরে টিনের চাল কেটে মূল্যবান যন্ত্রাংশ চুরি করে নিয়ে গেছে।
এছাড়াও একই রাতে হাসপাতাল গেট সংলগ্ন ব্রিজের উত্তর পাশের জুয়েলের মনোহারি দোকানে নগদ টাকা, সিগারেট, সয়াবিন তেলের বোতল চুরি হয়েছে।
বীর
বড়বাড়িয়া গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে আতিক রহমান বলেন, এই
ঘটনায় তিনি ও তার পরিবার খুবই শঙ্কিত। ভাগ্য ভালো পরিবারের কারও প্রাণনাশ
হয়নি।
প্রতিদিন সরিষাবাড়ীতে এমন চুরির ঘটনায় মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, কবে কার বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটবে তা কেউ জানে না। অনেকের বাড়ি থেকে স্বর্ণালংকারসহ সর্বস্ব লুট করে নিয়ে যাচ্ছে, এমনকি চেতনানাশক ওষুধ প্রয়োগ করে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে জীবন। বিষয়টি যত দ্রুত সম্ভব প্রতিকারের দাবি জানান তিনি।
এরআগে বুধবার (১৬ মার্চ) মধ্যরাতে উপজেলা পরিষদের কাছে অবস্থিত নাসিম উদ্দিনের ভাড়া বাসায় সংঘবদ্ধ চক্রটি চেতনানাশক ওষুধ প্রয়োগ ও জানালার গ্রিল কাটে। পরে তার স্ত্রীর গলার ১ ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন নিয়ে যায়। চেতনানাশকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন সাংবাদিক নাসিম উদ্দিন (৩৬), তার স্ত্রী শামসুন্নাহার (২৩) ও শাশুড়ি শবজান বেগম (৭০)। কয়েকদিন আগে সরিষাবাড়ী প্রেস ক্লাবের সভাপতি সোলায়মান হোসেন হরেকের শিমলাপল্লীর নিজ বাসায় চুরি হয়।
এমন ঘটনার শিকার সরিষাবাড়ী পৌরসভার আরামনগর হাজিবাড়ি সংলগ্ন বাসার মালিক আদ্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জিয়াউল হক জিয়া। তিনি বলেন, গত বছরের ১১ অক্টোবর মধ্যরাতে চেতনানাশক বিষাক্ত স্প্রে করে সবাইকে অজ্ঞান করে জানালা কেটে বাসায় ঢোকে চোর। বাসার কাজ করার জন্য ব্যাংক থেকে লোন নেওয়া ১২ লাখ টাকা ও ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে যায় চোর। এ ঘটনায় থানায় জিডি করলেও ছয়মাসেও কোনো তথ্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি পুলিশ।
এমন ঘটনার শিকার হয়ে গত বছরের ১৮ নভেম্বর উপজেলার সাতপোয়া গ্রামের সোলার ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক (৫৫), তার স্ত্রী রিনা খাতুন (৫০) ও মেয়ে মাওয়াসহ (১৫) একই পরিবারের তিন সদস্য সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন
ওই ভুক্তভোগীর বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়ার পর সকালে দেখেন তারা হাসপাতালে। বাসার গ্রিল কেটে মধ্যরাতে একদল চোর বাসায় প্রবেশ করে মোবাইলসহ নগদ টাকা চুরি করে নিয়ে যায়।
একই বছরের ১৯ নভেম্বর বিষাক্ত স্প্রের শিকার হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয় উপজেলার ধানাটা গ্রামের চঞ্চল কর্মকারের স্ত্রী সুরভী এবং কাশি কর্মকারের মেয়ে স্বপ্না।
এছাড়াও এমন ঘটনার শিকার হয়ে ২৬ নভেম্বর আরামনগর বাজার এলাকায় জুয়েল রানার স্ত্রী ইতি (৩২), ৩০ নভেম্বর পৌরসভার দিয়ারকৃষ্ণ এলাকার আব্দুল্লাহ আল হারুন ও ৯ ডিসেম্বর টিঅ্যান্ডটি মোড় এলাকায় নাজিমউদ্দীনের পরিবারের সদস্যদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন স্থানীয়রা। এ সময় তাদের বাসা থেকে নগদ টাকা লুট হয়।
আরামনগর বাজারের এসএম টেলিকমের মালিক মোরশেদ আলম জানান, তার দোকানের চাল ও সিলিং কেটে ৬ লাখ টাকার মোবাইল ও সরঞ্জাম চুরি হয়। থানায় জিডি করার ছয়মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও লাভ হয়নি।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. দেবাশীষ রাজবংশী বলেন, অপারেশন থিয়েটারে ব্যবহৃত চেতনানাশক কোনো ওষুধ পানির সঙ্গে মিশিয়ে স্প্রে করলে যে কেউ অজ্ঞান হয়ে পড়া স্বাভাবিক। মাঝেমধ্যেই চেতনানাশক ওষুধে অজ্ঞান হয়ে পড়া রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে, সবগুলো রোগীর ধরন একই। তবে কোন ওষুধে এসব করা হচ্ছে তা ফরেনসিক ল্যাবে পরীক্ষা করলে জানা যাবে।
এ ব্যাপারে সরিষাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর রকিবুল হক বলেন, সাংবাদিক নাসিম উদ্দিনের বাসায় চুরির ঘটনায় মামলা হয়েছে, বিষয়টি তদন্ত চলছে। কোনো ঘটনার লিখিত অভিযোগ না পেলে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না। তবে সার্বিকভাবে চুরি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ তৎপর রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপমা ফারিসা বলেন, চেতনানাশক ওষুধ স্প্রে করে কয়েকটি চুরির ঘটনা শুনেছি। বিষয়টি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে। চুরি নিয়ন্ত্রণে কঠোর হওয়ার জন্য পুলিশকে বারবার বলা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
এ ব্যাপারে জামালপুর জেলা পুলিশ সুপার নাছির উদ্দিন আহমেদ মুঠোফোনে বলেন, সুনির্দিষ্ট মামলা বা লিখিত অভিযোগ না থাকলে তো বলার সুযোগ নাই যে কতটা চুরির ঘটনা ঘটেছে। তবে বিষয়টি নিয়ে আরো তৎপর হওয়ার জন্য থানার ওসিকে বলা হবে।

ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতা নিরসন করায় প্রশংসা

প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন মসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহব্বত আলী

করোনা মহামারী মোকাবিলায় টিকা প্রদানের পরিসর বৃদ্ধি করা হয়েছে : মসিক মেয়র টিটু
