০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২০, ২২:৫৭ মিঃ
অভিব্যক্তি দেখে মনে হচ্ছে প্রিয় কোনো স্মৃতিতে কোথাও যেন হারিয়ে গেছেন
বলিউড তারকা হৃতিক রোশন। ছবিটি হৃতিক নিজের ভেরিভায়েড ইনস্টাগ্রাম পেজে
পোস্ট করে লিখেছেন ছেলেবেলার বিস্ময় এবং পরবর্তী সময়ে প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে
আশার কথা। ধন্যবাদ দিয়েছেন ছবিটির ‘নাম না–জানা’ আলোকচিত্রীকে। হৃতিকের
পোস্টের সুবাদে সেই ছবি এখন আলোচিত ছবিতে পরিণত হলেও তাঁর মতো অনেকেই জানেন
না ছবিটি তুলেছেন একজন বাংলাদেশি আলোকচিত্রী। মার্কিন প্রতিষ্ঠান
ফ্ল্যাশব্রাশ প্রোডাকশনের হয়ে বাংলাদেশি আলোকচিত্রী অভিজিৎ চৌধুরী ছবিটি
তুলেছিলেন গত ২৫ জানুয়ারি। তাঁর প্রতিষ্ঠান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রথম
আলোকে।
ছবিটি নিয়ে গত রোববার কথা হয় যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী অভিজিৎ
চৌধুরীর (৩১) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি যে ভাবনা থেকে ছবিটি তুলেছিলাম, সেটা
হৃতিকের ভাবনার সঙ্গে মিলে গেছে বলে সম্মানিত বোধ করছি। তিনি আমাদের
প্রতিষ্ঠানকে হ্যাশট্যাগ দিয়েছেন। তবে তিনি জানেন না আলোকচিত্রী কে।’
অভিজিৎ আরও বলেন, ‘আমি এমন কিছু করতে চাই, যা নিয়ে আমার দেশ আমার জন্য গর্ব
করতে পারে এবং পাশাপাশি আমিও যেন গর্বভরে বলতে পারি যে আমি একজন
বাংলাদেশি।’
হৃতিক রোশনের অভিনয়জীবনের ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ডালাসের হিলটন হোটেলে গত ২৫ জানুয়ারি সানগ্লো ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড প্রোডাকশন একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। হৃতিক রোশনের উপস্থিতিতে ‘অ্যা চ্যারিটি গালা উইথ হৃতিক রোশন’ নামের অনুষ্ঠানটির ছবি তোলা ও ভিডিওর দায়িত্ব ছিল ফ্ল্যাশব্রাশ প্রোডাকশনের। হৃতিক ছবিটি তাঁর ইনস্টাগ্রামে প্রকাশ করেন অনুষ্ঠানের পরদিন, ২৬ জানুয়ারি। ছবিটির ভূয়সী প্রশংসা করে হৃতিক লেখেন, ‘আমার কী সুন্দর একটি ছবি। আমার ছেলেবেলার বিস্ময়ের কথা মনে করিয়ে দেয়, প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে আমার অপরিমেয় আশার কথা মনে করিয়ে দেয়। মাঝেমধ্যে আমাদের সবার স্মরণে রাখা প্রয়োজন জীবনে আমরা সবচেয়ে বেশি যা চাই তা আমাদের হৃদয়ে ও মনে ধরে রাখতে হবে। যদি আপনি ভয় ও রাগ নিয়ে চলেন, তাহলে আপনি ভয় ও রাগই খুঁজে পাবেন, এমন পরিস্থিতিকে সঙ্গে নিয়ে চলুন, যা আপনি পেতে চান। যা কিছুতে আলোকপাত করবেন, তা–ই পাবেন। ছবিটি যিনি তুলেছেন, তাঁকে ধন্যবাদ, সেই বিস্ময় ও আশা বাঁচিয়ে রাখতে আজ আমাকে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য। আজ এটার দরকার ছিল।’
অভিজিৎ জানান, তিনি এক বছর ধরে ওই প্রোডাকশন টিমের সঙ্গে কাজ করছেন। এর আগে তিনি সাইফ আলী খানসহ আরও অনেক বলিউড সেলিব্রিটির ছবি তুলেছেন। তবে হৃতিকই প্রথম, যিনি এত দারুণ প্রতিক্রিয়া দেখালেন। ছবি তোলার সময়ের কথা বলতে গিয়ে অভিজিৎ বলেন, হৃতিকের অভিনয়জীবনের শুরুর দিকের নানা গানের সঙ্গে স্টেজে নাচের অনুষ্ঠান হচ্ছিল। ছোট ছেলেমেয়েরা ‘কাহো না পেয়ার হে’ গানের সঙ্গে যখন নাচছিল, তখন দর্শকের সারিতে বসা হৃতিক যেন কোথায় হারিয়ে গেলেন! তাঁর সেই দৃষ্টি দেখে আমি ঠিক সেই মুহূর্তটি ধারণ করতে চাইলাম। ছবিটি তোলার পর দেখলাম “পারফেক্ট”, যা চেয়েছিলাম তাই! একদম ক্যানডিট শট। অনুষ্ঠান শেষে আমাদের টিম এই ছবিটিকেই সেরা হিসেবে বাছাই করল।’
অভিজিৎ জানান, হৃতিকের ম্যানেজার অনুষ্ঠান শেষে যখন ছবির জন্য এলেন, তখন তাঁকে ওই একটি ছবিটিই দিলেন ফ্ল্যাশব্রাশ প্রোডাকশনের প্রধান র্যাচেল প্রিয়া বেনসন। তবে ইনস্টাগ্রামে ছবিটি পোস্ট করে যে এত আবেগময় বার্তা লিখবেন হৃতিক, তা ভাবেননি অভিজিৎ এবং তাঁর টিম। তাঁরা সবাই অভিভূত।
এ ব্যাপারে র্যাচেল প্রিয়া বেনসনের সঙ্গে ই–মেইলে প্রশ্ন পাঠিয়ে যোগাযোগ করা হলে তাঁর পক্ষ থেকে ফ্ল্যাশব্রাশ প্রোডাকশন টিমের প্রাতিষ্ঠানিক ই–মেইল থেকে জবাবে বলা হয়, অভিজিৎ তাঁদের অন্যতম একজন সেরা আলোকচিত্রী। তাঁর টিমের পক্ষ থেকে এর আগে ডালাসে সালমান খান, সোনু নিগাম থেকে শুরু করে আরও অনেক সেলিব্রেটির শো কাভার করা হয়েছে। সেসব ছবি তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পেজেও দেওয়া হয়েছে। হৃতিক রোশনের অনুষ্ঠানে তাঁদের আটজন আলোকচিত্রী ও ভিডিও ক্রু কাজ করেছিলেন। আটজনের একজন ছিলেন অভিজিৎ। সেদিনের অনুষ্ঠান শেষে হৃতিকের সেরা ছবিটি তাঁর জনসংযোগ টিমের কাছে পাঠানো হয়। ছবিটি ছিল অভিজিতের তোলা। হৃতিক ছবিটি তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশের পর তা যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতে সাড়া ফেলে। ই–মেইলে আরও বলা হয়েছে, ‘অভিজিৎকে আমাদের টিমে পেয়ে আমরা গর্বিত। সামনে তাঁর আরও সফল অনুষ্ঠান আসতে পারে!’
রাজধানীর
উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল থেকে এসএসসি ও নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের
পর নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন অভিজিৎ। ২০১৩ সালে
তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যান। ইউনিভার্সিটি অব দ্য কাম্বারল্যান্ড থেকে এমবিএ
করেছেন। এখন টেক্সাস অঙ্গরাজ্য ডালাস শহরে থাকেন। তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে
মাস্টার্স করছেন। পাশাপাশি আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ করছেন ফ্ল্যাশব্রাশ
প্রোডাকশনে।
অভিজিতের পড়াশোনা ভিন্ন বিষয়ে হলেও ছবি তুলতে আগ্রহ ছিল ছোটবেলা থেকেই।
হেমন্ত কুমার নামে এক বড় ভাইয়ের উৎসাহে ২০০৮ সালে জড়িয়ে পড়েন
আলোকচিত্রে। এ–বিষয়ক কর্মশালায় যোগ দেন। ২০১০ সালে হেমন্ত কুমারের সঙ্গে
প্রতিষ্ঠা করেন ফটোপ্ল্যাশ কোম্পানি। দেশে থাকা অবস্থায় বিয়ে, বিভিন্ন
অনুষ্ঠান ও পণ্যের ছবি তোলার কাজ করেন। ২০১১ সালে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর
পরিচালনায় রবির থিম সং নির্মাণের কাজেও যুক্ত ছিলেন। তাঁর আলোকচিত্র
দেশে–বিদেশে কয়েকটি প্রদর্শনীতে স্থান পায়।
ঢাকার মিরপুরে অভিজিৎদের
বাসা। বাবার নাম বিমান বড়ুয়া চৌধুরী ও মায়ের নাম পারমিতা বড়ুয়া চৌধুরী।
দুই ভাই–বোনের মধ্যে অভিজিৎ বড়। বাবা বাংলাদেশ সেন্টার ফর কমিউনিকেশন
প্রোগ্রামের (বিসিসিপি) উপপরিচালক। বোন অদিতি বড়ুয়া চৌধুরী একাডেমিয়ার
ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক।
হৃতিক ছবিটি দিয়ে ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করায়
তা দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া, ফিল্মফেয়ারসহ ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে
প্রচার করা হয়। তবে সেসব খবরে ফ্ল্যাশব্রাশ প্রোডাকশনের নাম থাকলেও অজানাই
রয়েছে আলোকচিত্রীর নাম।
অভিজিৎ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের
বন্ধুদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। সবাই অভিনন্দন জানাচ্ছেন। পরিবারের
সবাই বেশ খুশি। তবে পরবর্তী কোনো অনুষ্ঠানে হৃতিকের সঙ্গে দেখা হলে অবশ্যই
তাঁকে গিয়ে বলব, “আমিই সেই আলোকচিত্রী”।’
সর্বস্বত্ব: এমআরএল মিডিয়া লিমিটেড
ঢাকা অফিস: মডার্ণ ম্যানসন (১৫ তলা), ৫৩ মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০
ময়মনসিংহ অফিস: হাসনাইন প্লাজা (দ্বিতীয় তলা), ৭ মদন বাবু রোড, ময়মনসিংহ-২২০০
সেলফোন: ০৯৬১১-৬৪৫২১৫, ০৯৬৯৭-৪৯৭০৯০
ই-মেইল: jagrota2041@gmail.com
ফোন :
ইমেইল :