১৩ এপ্রিল ২০২২, ১৫:৩৮ মিঃ
বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে আছে নানা লোকগান। বেশিরভাগ গান কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে নড়াইলের অষ্ট সখীসহযোগে লোকসংস্কৃতির অন্যতম অষ্টকগান এখনো মন মাতায় বাঙালির। সাধারণত চৈত্র মাসের শেষ দিকে চৈত্র সংক্রান্তিকে সামনে রেখে গ্রামে গ্রামে হাটবাজারে এ গান পরিবেশিত হয়ে থাকে। তবে দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ অষ্টক গান।
জানা গেছে, নড়াইলের রাধা-কৃষ্ণ, শিব-দুর্গা, রামায়ণ-মহাভারতের কাহিনি ছাড়াও পণপ্রথা, সাম্প্রদায়িক প্রসঙ্গ, কৃষি সমস্যা, বৃক্ষরোপণ, সমাজের অসঙ্গতি বা শিক্ষামূলক বিষয় প্রভৃতি অষ্টকগানের বিষয়বস্তু। অষ্ট সখীসহযোগে এই গান পরিবেশিত হয় বলে একে অষ্টক গান বলা হয়। এটি একটি গোষ্ঠীবদ্ধ নৃত্যসহ সাংগীতিক পরিবেশনা।
সামনে অষ্ট সখী এবং পেছনে হারমোনিয়াম, বেহালা, বাঁশি, কাসি, কর্তালসহযোগে এ গান পরিবেশিত হয়। অষ্টক গান বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির একটি অংশ। নড়াইল সদরের বাহিরডাঙ্গা গ্রামের প্রয়াত স্বভাবকবি বিপিন সরকার অসংখ্য অষ্টকগান ও অষ্টক যাত্রাপালা লিখেছেন এবং সুর করেছিলেন।
স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিদের থেকে জানা যায়, যুগ যুগ ধরে নড়াইল পৌর এলাকার বাহিরডাঙ্গা, দুর্গাপুর, বাঁশভিটা, মুলিয়া, এগারখানসহ বিভিন্ন এলাকার নমঃশুদ্র সম্প্রদায় লোকসংস্কৃতির এ ঘরানাকে লালন করে আসছে। অষ্টকগানের দলের এক সদস্য বলেন, শহরের বিভিন্নস্থানে তাদের মতো অনেক দল অষ্টকগান পরিবেশ করত এক সময়। এখন আর আগের মতো অষ্টক গানের দল নেই।
দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ অষ্টক গান। বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে অষ্টকগান পরিবেশন করেন। এসময় বাসা-বাড়ির মালিক বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ওই গানের দলকে খুশি মনে অর্থ প্রদান করা হয়। এ অর্থ দিয়ে পূজা পার্বন করা হয় বলে তারা জানান।
অষ্টক গানের শিল্পী রবিন্দ্রনাথ বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, চৈত্রমাস যাওয়ার শেষের দিকে তাদের দল প্রতিবছরই এ গান পরিবেশন করেন তারা। স্মৃতি বিশ্বাস বলেন, দশবছর আগেও নড়াইলে অনেকগুলো দল ছিল যারা অষ্টকগান পরিবেশন করত। এখন হাতে গোনা কয়েকটি দল বিভিন্ন বাসা বাড়ি ও বাজারে অষ্টক গান পরিবেশন করে।
বাহিরডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা সহকারী অধ্যাপক গোলকচন্দ্র বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, ‘মুরুব্বিদের কাছে শুনেছি, নড়াইল অঞ্চল থেকেই অষ্টকগানের সৃষ্টি এর ধারাবাহিকতা এখনো বহমান রয়েছে। এটি নড়াইলের একটি ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ সংস্কৃতি।
নড়াইল মূর্ছনা সংগীত নিকেতনের সভাপতি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শামীমূল ইসলাম টুলু জাগো নিউজকে বলেন, দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ অষ্টক গান। আমাদের আগামী প্রজন্মকে ঐতিহ্যবাহী এ অষ্টক গানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে এবং অষ্টকগানকে ধরে রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান তিনি।
সর্বস্বত্ব: এমআরএল মিডিয়া লিমিটেড
ঢাকা অফিস: মডার্ণ ম্যানসন (১৫ তলা), ৫৩ মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০
ময়মনসিংহ অফিস: হাসনাইন প্লাজা (দ্বিতীয় তলা), ৭ মদন বাবু রোড, ময়মনসিংহ-২২০০
সেলফোন: ০৯৬১১-৬৪৫২১৫, ০৯৬৯৭-৪৯৭০৯০
ই-মেইল: jagrota2041@gmail.com
ফোন :
ইমেইল :