রমজানে ওমানের দান-সদকায় বিশেষ রীতি
প্রকাশ :
মুসলিম বিশ্বের মহিমান্বিত মাস রমজান। এ মাস ঘিরে নানা অনুষ্ঠান আর রীতি-রেওয়াজ আছে। রোজা রাখা, ইফতারের পর তারাবির নামাজ পড়া ইত্যাদি ছাড়াও আনন্দ-উৎসবের মাধ্যমে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয় খুশির আমেজ। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের চেয়েও এসব রীতি সাংস্কৃতিক উদযাপন হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। মুসলিম অধ্যুষিত দেশ ওমান। সেখানকার মুসলিমরা কীভাবে রমজান পালন করেন, তা নিয়ে লিখেছেন মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ
মধ্যরাতের কাসিদা
রমজান শুরু হতেই ওমানের
পাড়া-মহল্লায় তরুণ-যুবকরা রাত আড়াইটার পর থেকে দলবেঁধে গান গেয়ে
এলাকাবাসীকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলে। কোনো দুয়ারে করাঘাত না করেও শুধু গান
গেয়ে এবং গানের ফাঁকে ফাঁকে সঠিক সময় জানান দিয়ে তারা এলাকাবাসীকে
শয্যাত্যাগের অনুরোধ জানায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তারা হামদ, নাত, গজল
ইত্যাদি গায়। কোথাও কোথাও এ উপলক্ষে বিশেষভাবে রচিত গানও তারা গায়।
এলাকাবাসী তাদের ওপর ভরসা করে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারে। এই স্বেচ্ছাশ্রমের
বিনিময়ে তারা ঈদের দিন নামাজ পড়ে ঘরে ঘরে গিয়ে মুরুব্বিদের কাছ থেকে ঈদি
আদায় করে।
সপরিবারে সাগর সৈকতে
রোজার মাসে আরেক ধরনের
গান-বাজনার প্রচলন আছে ওমানে। তারাবির নামাজের পর ওমানিরা অনেকে সপরিবারে
কোনো পার্কে অথবা সাগর সৈকতে যায়। সঙ্গে থাকে তাদের এক ধরনের দেশি
বাদ্যযন্ত্র। উপসাগরীয় অন্যান্য আরব দেশের তুলনায় ওমানিরা সঙ্গীত ও
বাদ্যযন্ত্রের প্রতি অধিকতর সহনশীল। তাদের ট্রাডিশনাল মিউজিকেও আছে অনবদ্য
রিদম। সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান (যেমন বিয়ে, খৎনা), এমনকি শোকদিবস পালনেও
তারা যুবক-বুদ্ধ, নারী-পুরুষ সবাই মিলে দিবস অনুযায়ী বিশেষ ধাঁচের
নৃত্যগীতে অংশ নিয়ে থাকে।
সাগর তীরে পুলিশি টহল
সাগর তীরে বসে ওমানি পুরুষরা
আনমনে ঊদ বাজায়। সঙ্গে কণ্ঠ মেলায় তাদের স্ত্রী ও সন্তানরা কিংবা সঙ্গে আসা
পারিবারিক বন্ধুরা। বয়স্কদের কেউ কেউ সীসা খায়। কম বয়সীরা সিগারেট টানে।
সেহরির আগ পর্যন্ত বীচে থাকা যায়। ভয়ের কোনো কারণ নেই। ঘোড়ায় চড়ে মাউন্টেড
পুলিশ সাগরের তীর ঘেঁষে টহল দিয়ে যায়। কাউকে কিছু বলে না। তবে তাদের
উপস্থিতিই অপরাধ ঠেকানোর জন্য যথেষ্ট। কেউ কেউ কিছুক্ষণ গান করে আর সাগর
তীরের হাওয়া খেয়ে শপিংমলে চলে যায় কিংবা কোনো রেস্টুরেন্টে সেহরি খেতে অথবা
কোনো আত্মীয়-স্বজনের বাসায় সামাজিক কল অন করতেও যায়।
বিনামূল্যে সেহরি ও ইফতার
সেহরি খেয়ে বাসায় ফেরে
ওমানিরা। তাহাজ্জুদ আর ফজর পড়ে ঘুমিয়ে পড়ে তারা। কেউ কেউ বাচ্চাদের নিয়ে
মাস্কাটের রিয়াম পার্কে কিংবা কুরম বীচ অথবা আল খুওয়াইর বীচে চলে যায়।
বাচ্চারা ছুটোছুটি করে ক্লান্ত হয়। মাস্কাটের বেশির ভাগ বড় মসজিদগুলোতে
সেখানকার গণ্যমান্যদের বদান্যতায় মুসল্লি ও মুসাফিরদের জন্য বিনামূল্যে
ইফতারি সরবরাহ করা হয়। কোনো কোনো মসজিদে বিনামূল্যে সেহরিও দেওয়া হয়।
তারাবির পর প্রত্যেককে জুসের বোতল কিংবা সফট ড্রিঙ্কস দেওয়া হয়। নামাজের পর
জুসপানের সময় মুসল্লিরা নিজেদের মধ্যে সংক্ষেপে ভালোমন্দ আলাপচারিতা সেরে
নেন।
দানের সময় শর্ত
আমাদের দেশে রমজান এলে নিত্যপণ্যের
দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। ঠিক উল্টো চিত্র দেখা যায় ওমানে। রমজান উপলক্ষে
সেখানে বিভিন্ন কোম্পানির থাকে বিশেষ ছাড়। রমজান শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে
ওমানের বিভিন্ন রাস্তার পাশে সারি সারি তাঁবু দেখা যায়। এসব তাঁবু
রোজাদারদের ইফতার করানোর জন্য বিশেষভাবে তৈরি। এখানকার মানুষ এ সময় বেশি
পরিমাণে দান করেন। দানের সময় শর্ত জুড়ে দেন, যেন তার নাম প্রকাশ না করা হয়।
রসিদে লেখা হয়, একজন দাতা কিংবা আবদুল্লাহ (আল্লাহর বান্দা)।