2024-04-18 11:27:26 am

ঈদে তাদের দায়িত্ব বেশি আনন্দ কম

www.focusbd24.com

ঈদে তাদের দায়িত্ব বেশি আনন্দ কম

০৩ মে ২০২২, ২০:৪৯ মিঃ

ঈদে তাদের দায়িত্ব বেশি আনন্দ কম

ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানে পরিবার আর প্রিয়জনদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়া। তাইতো খুশির এ ঈদ উদযাপন করতে অনেকে গেছেন গ্রামে-গঞ্জে। পরিবার, আত্মীয় স্বজন আর বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে মেতে উঠেছেন ঈদ আনন্দে। ঠিক সে সময়ই তাদের রেখে যাওয়া বাসা, বাড়ি, অফিস আদালতের নিরাপত্তায় কাজ করছেন নিরাপত্তা প্রহরীরা।

ঈদের দিন মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব ছেড়ে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে ঈদ উদযাপন করছেন প্রহরীরা। ঈদের দিনটিও তাদের জন্য অন্য দিনগুলোর মতোই কর্মমুখর। পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব সবাই যখন ঈদের খুশি ভাগাভাগিতে ব্যস্ত, পেশাগত কারণে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন তারা বিরতিহীনভাবে। 

রাজধানীর মতিঝিল দিলকুশায় বাংলাদেশ কমার্শিয়াল ব্যাংকের সামনে দায়িত্বে আছেন একদিল ভূঁইয়া। অন্য দিনগুলোর মতোই সকাল ৬টায় কাজে যোগ দিয়েছেন। দায়িত্ব পালন করবেন টানা ১৬ ঘণ্টা। একদিল ভূঁইয়া বলেন, ব্যাংকের নিরাপত্তা জন্য আমাদের বাধ্যতামূলক দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। ঈদের সময় ব্যাংক বন্ধ। রাস্তাঘাট ফাঁকা, টাকা পয়সার বিষয় যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে; এজন্য ডিউটিতে আছি। সকাল ৬টা এসেছি রাত ১০টা পর্যন্ত ডিউটি পালন করতে হবে।

dhakapost

পরিবার-পরিজন ছেড়ে ঈদের দিনটি কেমন যাচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু করার নেই চাকরি যেহেতু করি ডিউটি করতেই হবে। সকালে ফোনে ছেলে মেয়েদের সঙ্গে কথা বলেছি সবাই ভালোই আছে। ঈদের আগে সবার জন্য জামা কাপড় ও কেনাকাটার জন্য টাকা পাঠিয়েছি। তারা ভালো আছে। আমিও ভালো আছি।  

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফটকে দায়িত্ব পালন করছেন শহিদুল। ঈদের দিনে ডিউটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চাকরি তাই দায়িত্ব পালন করতেই হবে। এখানে চাকরির টাকা দিয়েই আমারা ফ্যামিলি চালাই। তাই আগে চাকরি ঠিক রাখতে হবে। ঈদের দিন পরিবার রেখে এসে ডিউটি করা একটু তো খারাপ লাগে। কিন্তু তারপরও কিছু করার নেই। সবাই তো আর ছুটিতে গেলে হবে না। আমি না থাকি কাউকে তো থাকতেই হবে। এটা ভেবে নিয়েই ডিউটি করছি।     

ঈদের দিন মতিঝিল পূবালী ব্যাংকের বুথের সামনে দায়িত্ব পালন করছিলেন হানিব ও নাছিব নামে দুই নিরাপত্তাকর্মী। বুথের সামনে গিয়ে দেখা যায় নাছিব মোবাইলে কথা বলছেন। ফোনের এ প্রান্ত থেকে তিনি বলছেন, ‘সেমাই খাইছো। আমি সেমাই খাইছি। ঢাকায় বৃষ্টি হচ্ছে। ভালো আছি। বইসা আছি। শনিবার বাড়ি আসব। চিন্তা কইরো না, ভালোই আছি। রাখি ভালো থাইকো।’ পরে জানা গেলো, নাছিব কথা বলছিল গ্রামে থাকা তার মা, ছোট ছেলে আর স্ত্রীর সঙ্গে। 
নাছিব বলেন, গ্রামে থাকা পরিবারের সঙ্গে ফোনে খোঁজ-খবর নিচ্ছি। তারা সবাই ভালোই আছে। ব্যাংক ও বুথের নিরাপত্তার জন্য ঈদের আগের দিন থেকে টানা ছয় দিন দায়িত্ব পালন করব। এখন আমরা দুইজন ডিউটিতে আছি। ১২ ঘণ্টা করে দুই শিফটে চার জন ডিউটি করি। দুজন সকালে থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাকি দুই জন রাতে।  

dhakapost

বেসরকারি সিকিউরিটি প্রতিষ্ঠান আইএসএসএলের পরিদর্শনের দায়িত্বে থাকা ফারুকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, যেহেতু আমাদের কর্মীদের কাজ প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা দেওয়া। ২৪ ঘণ্টাই আমাদের সেবা দিতে হয়। ঈদ, উৎসব, বিভিন্ন দুর্যোগ যাই হোক না কেন সেবা বন্ধ করা যাবে না। তাই ইচ্ছা করলেও সবার এক সঙ্গে ছুটি দেওয়া যায় না। আমরা রোস্টারিং করে ঈদের ছুটি দিই। এ ঈদের যাদের ছুটি দিয়েছি আগামী ঈদে তারা ডিউটি পালন করবে।
 
তিনি বলেন, ঈদের ডিউটি যারা পালন করেন কোম্পানির পক্ষ থেকে তাদের কিছু বাড়তি সুবিধা দেওয়া হয়। যারা ঈদের ডিউটি পালন করছেন তাদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঈদের ডিউটি হিসাবে বাড়তি টাকাও পাবেন। বড় কর্মকর্তারা তাদের সেলামিও দিচ্ছে। তাই পরিবার পরিজনদের ছেড়ে ঈদ করতে কষ্ট হলেও এসব বাড়তি সুবিধা পেয়ে অনেকে খুশিও হন। এছাড়া এখন ইন্টারনেটের যুগ অনেকে ভিডিও কলে গ্রামে থাকা ছেলে মেয়েদের সঙ্গে কথা বলছে। তারপরও পরিবার রেখে ঈদ করাটা কষ্টের। কিন্তু কিছুই করার নেই।      

ব্যাংক বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মতো ঈদের বাসা বাড়ির নিরাপত্তা দায়িত্ব পালন করছেন অনেক কর্মী। তাদের আমরা ‘দারোয়ান’ নামেই চিনি। রাজধানীর পূর্ব বাসাবোর ‘মা ভিলায়’ দায়িত্ব পালন করছেন কবির খান। ঈদ কেমন কাটছে জানতে চাইলে একটু হেসে তিনি বলেন, ভালোই কাটছে। সকালে সেমাই খেলাম। এক একজন খিচুরি গোস্ত দিয়ে গেছে। দুই স্যার ঈদের বখশিশও দিছে।

dhakapost

পরিবার কোথায় জানতে চাইতে তিনি বলেন, ওরা গ্রামে। ওখানেই ঈদ করছে। আমি যেতে পারিনি। কারণ আমরা দুইজন এখানে কাজ করি। দুইজন তো এক সঙ্গে যাওয়া যাবে না। তাই এবার আমার অপর সহকর্মী রজন গ্রামে গেছে ঈদ করতে। আমি কোরবানিতে গ্রামে ঈদ করব। এখানে চার বছর চাকরি করছি এভাবে আমাদের ঈদ করতে হয়।

dhakapost

ঈদের দিন সকালে রাজধানীর সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) দায়িত্ব পালন করছেন আব্দুল শুকুর। তিনি বলেন, এখানে যারা কাজ করে তাদের মধ্যে তিনজন ছাড়া সবাই ছুটিতে বাড়ি গেছেন। আমি সকাল থেকে আছি। ৮ ঘণ্টা করে আমরা তিনজন ডিউটি করছি।

আব্দুল শুকুর বলেন, ঈদে সবাই ছুটিতে গেলে এ জায়গার নিরাপত্তা থাকবে কে? আমরা তিনজন আছি। আমি সকাল থেকে ৮ ঘণ্টা ডিউটি করব। মেয়ে ও মেয়ের জামাই বিদেশ থাকে। তাদের সঙ্গে কথা বললাম। ভালোই লাগছে।


উপদেষ্টা সম্পাদক: ডি. মজুমদার
সম্পাদক: মীর আক্তারুজ্জামান

সর্বস্বত্ব: এমআরএল মিডিয়া লিমিটেড
ঢাকা অফিস: মডার্ণ ম্যানসন (১৫ তলা), ৫৩ মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০
ময়মনসিংহ অফিস: হাসনাইন প্লাজা (দ্বিতীয় তলা), ৭ মদন বাবু রোড, ময়মনসিংহ-২২০০
সেলফোন: ০৯৬১১-৬৪৫২১৫, ০৯৬৯৭-৪৯৭০৯০ ই-মেইল: jagrota2041@gmail.com
ফোন :
ইমেইল :