দুই হাত না থাকলেও জীবনযুদ্ধে অদম্য জসিম
প্রকাশ :
জন্ম থেকেই দুই হাত নেই জসিম মাতুব্বরের (১৭)। তারপরও দমে যায়নি সে। দুই হাত না থাকলেও পা দিয়ে লিখে এসএসসি পাস করেছে। এখন দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র জসিম। লেখাপড়ার পাশাপাশি অভাবের সংসারে হাল ধরেছে। নগরকান্দা উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে বাঙ্গি, তরমুজ ও বিভিন্ন মৌসুমি ফল বিক্রি করেছে সে।
জসিম মাতুব্বরের বাবা হানিফ মাতুব্বর পেশায় একজন গরিব কৃষক। নিজের জমিজমা বলতে আছে শুধু বাড়ির ভিটাসহ ৮ শতক জমি। পরিবারে সদস্য সংখ্যা সাতজন। সংসার চালাতে সারা বছরই পরের জমিতে দিনমজুরের কাজ করতে হয়।
দিনমজুরের শ্রমের টাকা দিয়েই খেয়ে না খেয়ে কোনোমতে চলে তাদের সংসার। এজন্য লেখাপড়ার পাশাপাশি হাট-বাজারে সবজিসহ বিভিন্ন ফলমূল বিক্রি করে জসিম।
স্থানীয় নিজাম নকিব জাগো নিউজকে বলেন, ‘জসিমের দুই হাত নেই। তাই বলে সে মোটেও দমে যায়নি। পড়ালেখায় বেশ ভালো। পা দিয়ে পড়ালেখা, মোবাইল চালানো, টাকা-পয়সা লেনদেন থেকে শুরু করে প্রায় সব ধরনের কাজকর্মেই সে পারদর্শী।’
জসিম মাতুব্বর জাগো নিউজকে বলে, ‘মানুষের ইচ্ছা শক্তি থাকলে সবই সম্ভব। আল্লাহ আমার দুই হাত দেননি। এতে আমি দুঃখী নই। আমি লেখাপড়া করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। মা-বাবার মুখে হাসি ফোটাতে চাই। তাদের মুখ উজ্জ্বল করতে চাই। লেখাপড়া শেষ করে আমি একজন শিক্ষক হতে চাই। এজন্য আল্লাহর কৃপা ও সবার দোয়া চাই।’
জসিম মাতুব্বরের বাবা হানিফ মাতুব্বর জাগো নিউজকে বলেন, ‘সংসারে অনেক অভাব। পরের জমিতে কাজ করে যা পাই, তা দিয়েই কোনোমতে চলে অভাবের সংসার। তার মধ্যেও সন্তানদের লেখাপড়া করানোর চেষ্টা করি। যত কষ্টই হোক ছেলেমেয়েরা যেন মানুষের মতো মানুষ হয়।’
জসিম ছাড়াও হানিফ মাতুব্বরের অন্য তিন ছেলে ও এক মেয়ে পড়াশোনা করছে।
জসিমের মা মোসা. তছিরন বেগম পেশায় একজন গৃহিণী। তিনি বলেন, ‘জসিমের জন্মগতভাবেই দুই হাত নেই। তবে লেখাপড়ার প্রতি তার বেশ আগ্রহ। কষ্ট করে নিজ উদ্যোগে সে এত দূর এসেছে।’
এ ব্যাপারে তালমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘জসিম মেধাবী ও পরিশ্রমী একজন মানুষ। আমার কাছে কোনো কাজে এলে তাকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করে দেই। তার সব ধরনের ভালো কাজে আমার সহযোগিতা থাকবে।’
নগরকান্দা পৌরসভার মেয়র নিমাই চন্দ্র সরকার বলেন, জসিমকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ কোনো কাজে সে সহযোগিতা চাইলে তাকে সহযোগিতা করা হবে।
এ বিষয়ে নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেতী প্রু বলেন, জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন থেকে এর আগে তাকে প্রতিবন্ধী ভাতাসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা হয়েছে। আগামীতে তার কোনো যৌক্তিক আবেদন থাকলে তা পূরণে চেষ্টা করা হবে।