, ২২ বৈশাখ ১৪৩১ অনলাইন সংস্করণ

‘রান্দনে অহন তেলের বদলে পানি দিতে অইব’

  নিজস্ব প্রতিবেদক

  প্রকাশ : 

‘রান্দনে অহন তেলের বদলে পানি দিতে অইব’

‘বাজারে কোন জিনিসটার দাম কম? সবই তো বাড়তি। আমাগো সাধ্যের মধ্যে কোন জিনিসটা পাওয়া যায়? অহন আবার তেলের দাম লিটারে ৩৮ টাকা বাড়ছে। আমাগো আর তেল কিনন লাগব না, রান্দনে তেলের বদলে পানি দিতে অইব।’

সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে শুক্রবার (৬ মে) দুপুরে রাজধানীর শাহজাদপুর বাঁশতলা বাস স্ট্যান্ডে ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদকের কাছে এমন প্রতিক্রিয়া জানান রিকশাচালক আব্দুল রাজ্জাক (২৮)।

বৃহস্পতিবার (৫ মে) বিকেলে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৮০ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন ১৯৮ টাকা ও পাম সুপার ১৭২ টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স ও বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। সর্বশেষ সরকারি সিদ্ধান্তে সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটার ছিল ১৬০ টাকা। সে হিসেবে এক মাসের ব্যবধানে ভোজ্যতেলের দাম লিটারপ্রতি ৩৮ টাকা বেড়েছে। 

বাড্ডা নতুন বাজারের সাঈদ নগর এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকেন আব্দুল রাজ্জাক। প্রতি মাসে রিকশা চালিয়ে তার আয় হয় ১০ হাজার টাকার মতো। এর মধ্যে ৫ হাজার টাকা যায় বাসা ভাড়া, বাকি টাকা দিয়ে চলে তিন সদস্যের পরিবারের বাজার।

এমনিতেই বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে আব্দুল রাজ্জাকের মতো নিম্ন আয়ের মানুষদের সংসার চালাতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। এর মধ্যে নতুন করে আবার তেলের মূল্যবৃদ্ধি বজ্রাঘাতের মতো মনে হচ্ছে তাদের কাছে। 

আব্দুল রাজ্জাক আক্ষেপ করে বলেন, ‘বাজারে জিনিসপত্রের দামের লাইগা এমনিতেই সংসার চালাতে পারি না। এর মধ্যে তেলের দাম আবারও বাড়ল। বাসায় পরিবারকে বলছি, আগের মতো ৪-৫ লিটার তেলে দিয়ে মাস চালান যাইত না, ২ লিটারের মধ্যে চালাইতে হইব, নাইলে পানি দিয়া রানতে হইব।’

বাড্ডা গোপীপাড়ার একটি গলিতে ছোট একটি চায়ের দোকান চালান মিলন মিয়া। দোকান ভাড়া ও সব খরচ বাদ দিয়ে সংসার চালানোর জন্য ১০-১২ হাজার টাকা থাকে মিলনের হাতে। পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি হওয়ায় রান্নায় মাসে ৫-৬ লিটার তেল লেগে যায়। তেলের এ মূল্যবৃদ্ধি মিলনের মনেও দুশ্চিন্তা ভর করেছে।

মিলন বলেন, ‘আমাগো আর বাঁচনের জো নাই। একেকটা জিনিসের দাম বাড়ে, আর আমাদের কাছে তা পাহাড়ের মতো মনে হয়। আয় তো বাড়তাছে না, ব্যয় দিনদিনই বাড়তাছে। তেলের দাম বাড়ায় মরমু তো আমরা, বড় লোকগো আর কী। তাগো তো অঢেল টাকা। ২০০ টাকা কেজি সয়াবিন তেল কিইনা খাইলে তো মাসে এক হাজার টাকার বেশি তেলের খরচ। এত টাকা কে দিবো আমাগো?’

dhakapost
চা দোকানি মিলন মিয়া
২০০ টাকা লিটারেও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না সয়াবিন তেল। দাম বৃদ্ধির পরও বাজারে এ দামে তেল পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন এক ক্রেতা। উত্তর বাড্ডা এলাকায় বাজার করতে আসা কাজল দেবনাথ নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘ঈদের আগের দিন ২২০ টাকা লিটারে তেল কিনতে হয়েছে। এখন তো দাম বেড়েছে, কিন্তু বাজারে সব দোকানে তেল পাওয়া যাচ্ছে না।’

যখন ১৬০ টাকা লিটার ছিল, তখনই সয়াবিন তেল কেনার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছিলেন। এখন আবার লিটারপ্রতি ৩৮ টাকা দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন সদরঘাট-উত্তরাগামী ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনের একটি বাসের হেলপার মো. কাউসার।

মো. কাউসার বলেন, ‘তেলের দাম যখন ১৬০ টাকা লিটার, তখনই কিনা কমাইছি। এখন নাকি আবার ৩৮ টাকা বাড়ছে, গতকাল রাতে খবরে দেখছি। এত টাকা দিয়া তেল কিনে রান্না করা যাইতো না। আগের ৪ লিটার তেলের দাম এহনের ২ লিটারের সমান। তেলের লগে পানি মিশাইয়া গরীবের রান্ধাবাড়া করতে হইব।’

শাহাজাদপুরের বাঁশতলার একটি গলিতে ভাসমান দোকানে পাউরুটি ও সবজি বিক্রি করেন মো. মতি মিয়া। তার ক্রেতা মূলত রিকাশাচালকরা। তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় পাউরুটি ও সবজির দাম বাড়ানোর কথা ভাবছেন মতি।

তিনি বলেন, ‘লিটার যখন ১৬০ টাকা ছিল তখনই ১০ টাকা পিস পাউরুটি বিক্রি করলে পোষাত না। এহন তেলের দাম ২০০ টাকা। রুটি আর সবজির দাম না বাড়াইলে ব্যবসা করতে পারতাম না। দাম বাড়াইলে আমার কোনো লাভ নাই। আগে যা হইতো এখন বরং তার থেকে কিছু কম লাভ হইতে পারে। তবে কত দাম বাড়ামু, এহনো ঠিক করি নাই, ২-৩ টাকার বেশি তো বাড়াইতেই হইব (রুটিপ্রতি)।’

দাম বাড়ানোর পরও বাজারে নেই তেল!

২০০ টাকা লিটারেও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না সয়াবিন তেল। দাম বৃদ্ধির পরও বাজারে এ দামে তেল পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন এক ক্রেতা। উত্তর বাড্ডা এলাকায় বাজার করতে আসা কাজল দেবনাথ নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘ঈদের আগের দিন ২২০ টাকা লিটারে তেল কিনতে হয়েছে। এখন তো দাম বেড়েছে, কিন্তু বাজারে সব দোকানে তেল পাওয়া যাচ্ছে না।’

বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৮০ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন ১৯৮ টাকা ও পাম সুপার ১৭২ টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স ও বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। সর্বশেষ সরকারি সিদ্ধান্তে সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটার ছিল ১৬০ টাকা। সে হিসেবে এক মাসের ব্যবধানে ভোজ্যতেলের দাম লিটারপ্রতি ৩৮ টাকা বাড়ল। 

বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স ও বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। সেই বিবেচনায় বাংলাদেশে তেলের মূল্য সমন্বয় করা হলো। এখন থেকে খোলা সয়াবিন তেল এক লিটার ১৮০ টাকায় বিক্রি হবে। বোতলজাত বিক্রি হবে ১৯৮ টাকায়। আর ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হবে ৯৮৫ টাকায়।