2024-03-28 08:55:23 pm

দোকানে দোকানে সাজানো পুরোনো সয়াবিন তেল, বিক্রি নতুন দামে

www.focusbd24.com

দোকানে দোকানে সাজানো পুরোনো সয়াবিন তেল, বিক্রি নতুন দামে

১১ মে ২০২২, ১৯:৩৩ মিঃ

দোকানে দোকানে সাজানো পুরোনো সয়াবিন তেল, বিক্রি নতুন দামে

# পুরোনো দামের সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে নতুন দামের চেয়েও বেশি দামে
# রিয়াজউদ্দিন বাজার, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে পুরোনো সয়াবিন তেল
# বোতলের স্টিকার তুলে খোলা তেল হিসেবেও বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন
# বোতলে মূল্য ঘঁষেমেজে তুলে নতুন দামে বিক্রি
# বড় বাজারগুলোতে প্রশাসনের কোনো নজরদারি নেই
# আইন করেন আমলারা, নেতৃত্বে ব্যবসায়ীরা

চট্টগ্রামের পাইকারি বাজার চাক্তাইয়ের মকবুল আলী রোডের সবচেয়ে বড় দোকান মেসার্স শহীদ অ্যান্ড ব্রাদার্স। মঙ্গলবার (১০ মে) রাতে দোকানির কাছে সয়াবিন তেলের দাম জানতে ক্রেতা রাকিব। প্রতিষ্ঠানটির মালিক শহীদুল হক জানতে চান, কত লিটারের? পাঁচ লিটার বোতল জানালে দাম বলেন এক হাজার টাকা। বোতলের গায়ে নতুন নাকি পুরোনো দাম (এমআরপি- সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য) জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা এমআরপি দেখে পণ্য বিক্রি করি না।’

পরে জানা যায়, তার দোকানের সব তেলই পুরোনো দামের। একইভাবে রাজাখালী রোডের মুখের ইদ্রিস সওদাগরের দোকানে দেখা যায়, কয়েক ব্র্যান্ডের সয়াবিন ভর্তি বোতল। জানতে চাইলে দোকানের কর্মচারী বলেন, আমি নতুন, দোকানের মালিক নেই। তাই বিক্রি করতে পারবো না। তখন রূপচান্দা ব্র্যান্ডের পাঁচ লিটারের একটি বোতলে দেখা যায় আগের এমআরপি ৭৬০ টাকা। তবে দোকানে পুরোনো দামে তেল বিক্রি হচ্ছে না বলে জানান এ কর্মচারী। বলেন- ‘তেল নিয়ে এখন ঝামেলা চলছে। আগের দরে বিক্রি হচ্ছে না।’

খাতুনগঞ্জের হাজী আবুল খায়ের স্টোরে পাঁচ লিটার সয়াবিন আছে কি না জানতে চাইলে দোকানের লোকজন নেই বলে জানান। পরে বলেন- ‘দুই লিটারের আছে, দাম ৩৯৫ টাকা।’ এ দাম নতুন নাকি পুরোনো জানতে চাইলে দোকানের ক্যাশে বসা লোকটি বলেন, ‘পুরোনো দাম লেখা। নতুন পণ্য এখনো আসেনি।’

অভিন্ন চিত্র চট্টগ্রামের রিয়াজ উদ্দিন বাজারেও। যেখান থেকে চট্টগ্রাম মহানগরীরসহ আশপাশের এলাকার ছোট মুদিদোকানিরা পণ্য কিনে বেচেন। বাজারটির প্রায় সব দোকানে পুরোনো বোতলের তেল বিক্রি হচ্ছে নতুন দরে। কোনো কোনো দোকানে নতুন দরের চেয়েও বেশিতে। কিছু দোকানে বোতলের গায়ের স্টিকার তুলে লিটারপ্রতি ২০০ থেকে ২০৫ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।

রিয়াজ উদ্দিন বাজারে ইলেক্ট্রিক লেনের চৌধুরী ট্রেডার্সে দেখা যায়, দোকানে পাঁচ লিটারের তেল রয়েছে বেশ কয়েক বোতল। তবে এসব বোতলের গায়ের স্টিকারগুলো তুলে ফেলা হয়েছে। ক্রেতা সেজে সয়াবিন তেলের দাম জানতে চাইলে দোকানের লোকজন বলেন, খোলা সয়াবিন আছে দাম ২০৫ টাকা (লিটার)।

রিয়াজ উদ্দিন বাজারের আইয়ুব জেনারেল স্টোরে জানতে চাইলে দোকানের লোকজন ৫ লিটার সয়াবিন তেলের দাম বলেন এক হাজার টাকা। এক পর্যায়ে বলেন, ১০ টাকা কম রাখা যাবে। ৯৯০ টাকা হলে নিতে পারবেন।

এ দোকানের পাশেই জসিম স্টোরেও একই দৃশ্য। দোকানি বলেন, ‘আমি দেখেছি- নিমতলা বিশ্বরোডের একটি মুদি দোকানে ৫ লিটারের অন্তত ৫০ বোতল সয়াবিন তেলের বোতল সাজানো রয়েছে। তারাও এক হাজার টাকা করে বিক্রি করছেন।’

রিয়াজ উদ্দিন বাজারের কামাল স্টোরের মালিকের কাছে জানতে চাইলে ৫ লিটার সয়াবিনের দাম বলেন, ‘৯৮০ টাকা।’ তিনি বলেন, ‘বোতলের গায়ে পুরোনো দাম লেখা। কোম্পানি (ডিলার) থেকে সব দোকানে এভাবেই দেওয়া হয়েছে।’

ঈদের পর গত ৫ মে এক বিজ্ঞপ্তিতে খোলাবাজারে ভোজ্যতেলের নতুন দাম ঘোষণা করে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। যা আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করে দাম নির্ধারণ করা হতো। এবার তার ব্যত্যয় ঘটেছে। ব্যবসায়ীরাই তেলের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে।

নতুন দাম অনুযায়ী, খোলা সয়াবিন তেল লিটারপ্রতি ১৪০ টাকা থেকে বেড়ে ১৮০ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন তেল লিটারপ্রতি ১৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৯৮ টাকা করা হয়েছে। ৫ লিটারের বোতলের দাম নির্ধারণ করা হয় ৯৮৫ টাকা।

jagonews24

অন্যদিকে, দাম নির্ধারণের ছয়দিন পেরিয়ে গেলেও চট্টগ্রামের কোথাও নতুন দাম লেখা বোতলজাত সয়াবিন তেল মেলেনি। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে নতুন দরে।

কাজীর দেউড়ি এলাকার খুচরা মুদিদোকানি দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা অর্ডার করেছি। এখনো কোম্পানি থেকে তেল সরবরাহ দেওয়া হয়নি। এখনো অনেক ডিলারের কাছে পুরোনো দামের তেল মজুত আছে। অনেকে সাহস করে নতুন দরে বিক্রি করে ফেলছেন। কারণ ভোক্তারা বাধ্য হয়েই কিনে নিচ্ছেন। কিছু ডিলারের কাছে থাকা আগের দামের সয়াবিন বিক্রি করা হচ্ছে না। এগুলো দেখা যাবে, কোরবানির সময়ে বিক্রি করে দেবে। তখন তেলের চাহিদাও বাড়বে। ক্রেতারা বোতলের গায়ের হিসাব খেয়াল করবে না।’

জানা যায়, সরকার ও ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর হিসাব মতে, দেশে বছরে ২০ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু সারাদেশে ভোজ্যতেল নিয়ে সংকটের কথা বলা হলেও চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরে চাহিদার এক তৃতীয়াংশ বেশি ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যানুযায়ী, চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের গত ৮ মে পর্যন্ত (বছরের প্রথম ১০ মাস ৮ দিনে) আমদানি হয়েছে ২৯ লাখ ২৭ হাজার ৩৫৮ মেট্রিক টন। এর মধ্যে পাম অয়েল ১৯ লাখ ২ হাজার ৫১০ টন এবং সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে ১০ লাখ ২৪ হাজার ৮৪৮ টন। সবশেষ ১৫ মার্চ থেকে ৮ মে পর্যন্ত ৫৪ দিনে আমদানি হয়েছে ৪ লাখ ৯১ হাজার ৩০৩ মেট্রিক টন। এর মধ্যে পাম অয়েল ৩ লাখ ১৬ হাজার ৬৪৩ টন। সয়াবিন তেল ১ লাখ ৭৪ হাজার ৬৬০ টন।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের দেশের আইনগুলো করেন আমলারা। নেতৃত্বে থাকেন ব্যবসায়ীরা। যে কারণে আইনগুলো সবসময় ব্যবসায়ীবান্ধব হয়। ফলে ভোক্তারা সব সময় ক্ষতিগ্রস্ত হন। এখন বাজারের যে চিত্র দেখা যাচ্ছে, সরকার ভোক্তাদের ক্ষতি করে ব্যবসায়ীদের লাভবান করছেন। তা না হলে ঈদের পর তড়িঘড়ি করে খোলাবাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। অথচ এর আরও ১৫দিন আগে থেকে মিলাররা বাজারে তেল সরবরাহ বন্ধ করে রেখেছেন। তখন মিলারদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

‘এখন বাজারে পুরোনো দামের সয়াবিন তেল নতুন দামে বিক্রি হচ্ছে। ফলে পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলেই ভোক্তাদের পকেট থেকে দুইশ টাকা চলে যাচ্ছে। প্রয়োজনের কারণে ভোক্তারা পুরোনো দাম লেখা সয়াবিনই নতুন দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। অথচ বড় বড় পাইকারি কিংবা খুচরা বাজারগুলোতে প্রশাসনের কোনো নজরদারি নেই। ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর মাঝে মধ্যে অভিযান চালালেও তা অতি নগণ্য।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামে সহকারী পরিচালক আনিছুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, বোতলের গায়ে দাম যা লেখা রয়েছে, তার বেশি নেওয়ার সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে ভোক্তাদেরও সচেতন হতে হবে। কোনো দোকানি বেশি দাম নিলে ভোক্তাদের উচিত আমাদের জানানো। এক্ষেত্রে ভোক্তাদের অভিযোগ পেলেই আমরা অ্যাকশনে যাবো। তাছাড়া ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ‘হট লাইন ১৬১২১’ এ কল করেও সাধারণ ভোক্তারা অভিযোগ জানাতে পারেন। এক্ষেত্রেও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়।’


উপদেষ্টা সম্পাদক: ডি. মজুমদার
সম্পাদক: মীর আক্তারুজ্জামান

সর্বস্বত্ব: এমআরএল মিডিয়া লিমিটেড
ঢাকা অফিস: মডার্ণ ম্যানসন (১৫ তলা), ৫৩ মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০
ময়মনসিংহ অফিস: হাসনাইন প্লাজা (দ্বিতীয় তলা), ৭ মদন বাবু রোড, ময়মনসিংহ-২২০০
সেলফোন: ০৯৬১১-৬৪৫২১৫, ০৯৬৯৭-৪৯৭০৯০ ই-মেইল: jagrota2041@gmail.com
ফোন :
ইমেইল :