, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ অনলাইন সংস্করণ

আনিস ফারদীনের একগুচ্ছ কবিতা

  সাহিত্য ডেস্ক

  প্রকাশ : 

আনিস ফারদীনের একগুচ্ছ কবিতা

রুপালি চাঁদ

জানালা দিয়ে তাকালেই দেখা মেলে চাঁদটার
ভারি মিষ্টি, কোমল আর কী স্নিগ্ধ মায়া জড়ানো
রাজ্যের ক্লান্তি যেন নিমিষে শূন্যে হারিয়ে যায়।

আকাশ থেকে অপলক তাকিয়ে থাকে চাঁদটা
সহাস্য মায়ায় জড়িয়ে নেয় অবুঝ আমায়
আমি ভীষণভাবে মুগ্ধ হই চাঁদটাকে দেখে।

আনন্দে পুলকিত হই, জ্যোৎস্নায় ভেসে যাই
আমায় দেখে মিটিমিটি হাসতে থাকে চাঁদটা
মুগ্ধতায় কবি কাব্য লেখে, শিল্পীরা ছবি আঁকে।

হৃদয়ে সহাস্য ভাসে উচ্ছ্বসিত রুপালি চাঁদ
রাতেরা হয়ে ওঠে রুপালি চাঁদের মতো স্নিগ্ধ
তাই তো চাঁদনি রাত আমার পরম আরাধ্য।

****

মূকপাখি কাক ও মানুষ

কয়েকটা কাক অনবরত ডেকেই যাচ্ছে
একটি কাক মরে আছে খানিক পাশেই-
আজ কাকেরা স্বজন হারিয়েছে অনিচ্ছায়
পাড়ায় লেগেছে কাকদের শোকের মিছিল।

মূকপাখিদের বেদনা ঝরে, ভয়ার্ত হাহাকার ওঠে
শূন্যে তাকিয়ে কা-কা ডেকে যায় কাকেরা
কিছু বোঝে না, তবে স্বজন হারানো বোঝে তারা
চোখের কোণে জল জমে, আবার শুকায়।

সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ কাঁদে না বরং ফাঁদ পাতে
ছুরি চালায় বুকে, অন্যকে নাই করে সুখ খোঁজে-
কেউ মারে, কেউ মরে অভাগ্যের নিপুণ হাতে
জলসা ঘরে আসর বসে, কেউবা ঘোরে থাকে।

মানুষ মরে যায়, পাড়ার মাইক বেজে ওঠে
সাদাভ কাপড়ে জড়ায় মুর্দার, নিথর দেহ
কেউ মারে, কেউ মরে, কারও শোক, কেউ অন্য
আমাদের সভ্যতা এগোয় অন্যকে নাই করে দিয়ে।

কাকেরা স্বজনের দুঃখ বোঝে, কা-কা স্বরে কাঁদে
অথচ মানুষ সব বুঝেও কাকেদের চেয়ে অবুঝ
অন্যকে মারে, নিজে মরে তবু হুঁশ ফেরে না।

****

মৃত্তিকায় মেশা স্তব্ধ মানব

ওই মৃত্তিকা খণ্ডে মিশে যায় এ দেহ
অন্তিম প্রস্থান ছিন্ন করে সবকিছু
শত প্রচেষ্টা থমকে দাঁড়ায় সময়ে
এ ঘাসের ওপরে থাকে কোটি মানুষ
আর ঘাসের নিচে একা স্তব্ধ মানব।

স্মৃতির পিছে জমে থাকে হাজার স্মৃতি
স্মৃতির মিনার থাকে সহস্র নিযুত
তবু সবাই যে ভুলে যায় অনায়াসে
আত্মিক বিনাশে হারায় সব বন্ধন
মায়ার বাঁধন তুচ্ছ হয় নিমিষেই।

ভুলে যায় সবাই, রয়ে যায় এ দেহ
শত হিসেবের পাঠের পরিসমাপ্তি
একা যাযাবর হয়ে রয়ে যায় স্মৃতি
তবুও কেউ কেউ রয়ে যায় কারও
কায়মনো অশ্রুভেজা স্নিগ্ধ প্রার্থনায়।

****

তুমি ভাসো এবং আমি ডুবি

তুমিই জলে ভাসো তোমার পুরো জীবন
আমি না হয় একটু একটু করে ডুবে যাই
আমি ডুবে গিয়ে তুমি ভাসলেই
আমার ভাসা হয়, বেঁচে থাকা হয়।

সব ডুবে যাওয়া যে ডুবে যাওয়া নয়
কিছু কিছু ডুবে যাওয়াও যে বেঁচে থাকা
কিছু নাই হয়ে যাওয়াও মিশে থাকা
আমি ডুবে গিয়েই বরং তুমি ভেসে থাকো।

একজীবনে যে সব একসাথে হয় না
একজনকে ডুবিয়ে তো অন্যজন ভেসে থাকতে হয়
তাই এই যাত্রায় না হয় আমিই ডুবে গেলাম
তবু তুমি ভেসে থাকো, বেঁচে থাকো।

আমি ডুবুরি হয়ে বারবার না হয় একটু ডুবি
তুমি আজন্ম ভাসো, আমিই তোমার নৌকা হই
তুমি দিগন্তের জলে ভেসে বেড়াও ইচ্ছেমতো
আর আমি ক্রমাগত ডুবে যাই তোমার ইচ্ছাতে।

  • সর্বশেষ - সাহিত্য