, ২২ বৈশাখ ১৪৩১ অনলাইন সংস্করণ

বিদেশ যাচ্ছে সোমাইয়ার আচার

  ফিচার ডেস্ক

  প্রকাশ : 

বিদেশ যাচ্ছে সোমাইয়ার আচার

শৈশবে আচারের প্রতি ছিল বিশেষ লোভ। বাড়িতে মা আচার বানালে তা নিমিষেই শেষ করে ফেলতেন। সেই থেকেই আচার যেন জীবনের একটি অনুসঙ্গ হিসেবেই থেকেছে তার। যখন একটু বড় হলেন তখন নিজেই আচার বানাতে শুরু করেন। সফলতাও পেয়েছেন সোমাইয়া আক্তার। এখন তার আচার দেশের গণ্ডি পেরিয়ে যাচ্ছে বিদেশে।

ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার তললী গ্রামের জালাল মীরের মেয়ে সোমাইয়া। দুই বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে সে তৃতীয়। ছোটকালেই নানার বাড়ি গাজীপুরের শ্রীপুরের কাওরাইদে চলে আসেন। কাওরাইদ কেএন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, গয়েশপুর কলেজ থেকে এইচএসসি পরে ভর্তি হন শ্রীপুর বীরমুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী সরকারী কলেজে। এবার তিনি সমাজকর্ম বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

jagonews24

লেখাপড়ার সময়টুকু বাদে বাকী সময় সোমাইয়া ব্যয় করতেন আচার তৈরির প্রচেষ্টায়। এলাকার বিভিন্ন বাড়ি ঘুরে আচার তৈরির উপকরণ মৌসুমী ফল সংগ্রহ করতেন। পরে ইউটিউবের সহায়তা আচার তৈরি করতে থাকেন। নিজের প্রচেষ্টায় কয়েক বছরেই আচার তৈরিতে বেশ অভিজ্ঞ হয়ে ওঠেন সোমাইয়া।

এরপরই আচার নিয়ে ব্যবসা করার ভাবনা আসে মাথায়। এখন অনলাইনের যুগ। সামাজিক যোগাযোগ ছাড়াও কেনাবেচার একটি অন্যতম প্ল্যাটফর্ম এটি। যেহেতু অনেকেই অনলাইনে বিভিন্ন পণ্যের ব্যবসা করছেন। সোমাইয়া তার আচার বিক্রির জন্য বেছে নিলেন সেই অনলাইন প্ল্যাটফর্মকেই।

jagonews24

সেটাও ৬ বছর আগে, ফেসবুকে একটি পেজ ‘পিকেল পার্ক’ খুললেন। এখন তার মুখরোচক আচার যাচ্ছে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশে। প্রতিনিয়ত আসছে আচারের অর্ডার। নিজের লেখাপড়ার ফাঁকে এই আচারই এখন তাকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার প্রেরণা জোগাচ্ছে।

সোমাইয়া আক্তারের জন্ম কৃষক বাবার পরিবারে। ছোটকালেই অভাবের সঙ্গে সখ্যতা ছিল সোমাইয়ার। শিশুসময় যখন বিদ্যালয়ে যেতেন তখন থেকেই উচ্চশিক্ষার নেশাটা জেঁকে ধরে তার। নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে নানাবাড়ি থেকেই শুরু হয় লেখাপড়া। লেখাপড়ার ফাঁকে আচার তৈরি ও বিক্রি করে এখন নিজের পড়াশোনার খরচ চালাতে পারছেন। পাশাপাশি পরিবারের খরচও বহন করছেন তিনি।

সোমাইয়ার মতে, প্রতিটি মানুষেরই আচারের প্রতি বিশেষ লোভ রয়েছে। তারও ছিল। তবে তা প্রচন্ড রূপ পায় যখন আচার তৈরি করাটা আয়ত্বে আসে। এরপর থেকেই তার ধ্যান জ্ঞান সবই এই আচার নিয়েই। লেখাপড়ার সময়টুকু বাদ দিলে বাকী সময় তার আচার তৈরির পেছনেই কেটে যায়।

jagonews24

সোমাইয়ার পেজে রয়েছে দেশীয় ফলের বিভিন্ন ধরনের আচার। আম, বরই, তেঁতুল, চালতার বিভিন্ন পদের আচার তৈরি করেন তিনি। এছাড়াও গরুর মাংসের আচার ও শুটকীর বালাচাও তৈরি করেন সোমাইয়া। স্বাস্থ্যকর ও মুখরোচক হওয়ায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে তার আচারের সুখ্যাতি। বিদেশে প্রবাসী বাংলাদেশীদের মাঝে তার শুটকির বালাচাওয়ের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে।

গত দুই বছরে বিভিন্ন প্রবাসীর স্বজনদের মাধ্যমে তার আচার গেছে সিঙ্গাপুর, লন্ডন, আরব আমিরাত, কাতার ও সৌদি আরবে। বর্তমানে দেশ ও দেশের বাহির থেকে প্রচুর অর্ডার আসছে তার। কিন্তু সময়ের অভাবে সব অর্ডার নেওয়া সম্ভব হয় না সোমাইয়ার। তবে লেখাপড়া শেষ করে তিনি এই আচার নিয়েই বৃহৎ পরিসরে কাজ করার স্বপ্ন দেখেন তিনি।

jagonews24

সোমাইয়া আরও বলেন, আমাদের দেশ ছাড়াও দেশের বাইরে এই আচার নিয়ে দারুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এখন তিনি এলাকার বিভিন্ন নারী ও কিশোরীদের এই আচার তৈরির প্রশিক্ষণ দেন। তার লক্ষ্য আশপাশে যারা রয়েছেন তারাও যেন উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারেন। ছোট পরিসরে আচার তৈরি করে এখন প্রতিমাসে তার আয় হচ্ছে ৮-১০হাজার টাকা।

সোমাইয়ার তৈরি করা আচার মুখরোচক হওয়ায় অনেকেই আচার নিতে বাড়িতে ভীড় করেন। লেখাপড়ার ফাঁকে তার শ্রম ও অধ্যবসায় তাকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলছে। ছাত্রাবস্থায় সে লেখাপড়ার ফাঁকে আচার তৈরি করে নিজের খরচের পাশাপাশি পরিবারকেও অর্থের জোগান দিচ্ছে। সে তার সমবয়সীদের জন্য অনুপ্রেরণার কাজ করবে।