০১ এপ্রিল ২০২০, ০৯:৫৩ মিঃ
চার দিকে সবার মধ্যে করোনা ভাইরাস থেকে কীভাবে বাঁচা যাবে সেই প্রস্তুতি। কিন্তু করোনার এই প্রাদুর্ভাবের মধ্যেই উঁকি দিচ্ছে ডেঙ্গুর আশঙ্কা। এদিকে যেন কারো ভ্রুপক্ষেপ নেই। দুই সিটি করপোরেশনও এখন কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
সাধারণ মানুষও সচেতন নন। লম্বা ছুটির মধ্যে অধিকাংশ মানুষ এখন গৃহবন্দি। তবুও নিচের বাড়ির আশপাশ পারিষ্কার রাখছেন না! সবাই তাকিয়ে আছেন সিটি করপোরেশনের কার্যকর পদক্ষেপের দিকে। অথচ নিজের যেটুকু দায়িত্ব সেটাতেও তারা অবহেলা করছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল ভিডিও কনফারেন্সে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ও দুই সিটি করপোরেশন মেয়রসহ নির্বাচিত প্রতিনিধিদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘মশার গান আমি শুনতে চাই না। মশা মারতে হবে। কাল রাতে যখন ঘুমাতে গেলাম তখন দেখলাম মশারা সংগীত চর্চা করছে। মশার গান শুনলাম। মশা গুন গুন করে কানের কাছে গান গাচ্ছিল। অর্থাত্ মশার প্রাদুর্ভাব কিন্তু আস্তে আস্তে শুরু হবে। তারপর আসবে ডেঙ্গু।’
ডেঙ্গুর প্রকোপের বিষয়ে কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ‘গত ২৪ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত হাসপাতালগুলোতে কোনো ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়নি। এর মানে এই না যে, ডেঙ্গু রোগে কেউ আক্রান্ত হচ্ছে না। এর কারণ হচ্ছে করোনার ভয়ে কেউ ডেঙ্গু রোগের পরীক্ষা করাতেই হাসপাতালে যাচ্ছেন না। গত বছরের তুলনায় এই সময়টাতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এর জন্য এখনই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। বিশেষ করে সিটি করপোরেশেনের যে ইউনিট মশা নিধনে শুরু থেকে কাজ করছে তাদের এ নিয়েই কাজ করা উচিত। করোনার পাশাপাশি এটিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। নয়তো ডেঙ্গুও নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারে। আর মানুষকেও সচেতন হবে হবে। নিজের ঘরের আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে।’
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, হাতিরঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় পানিতে মশার লার্ভা জমে আছে। যে পরিমাণ কীটনাশক ছিটানো দরকার, সেটি হচ্ছে না। এছাড়া পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় রাতের বেলাও মশার উপদ্রব ব্যাপক হারে বাড়ছে। দুই সিটি করপোরেশন এখন করোনা নিয়ে বেশি জোর দিচ্ছে বলে মশার উপদ্রব নিয়ে তাদের গুরুত্ব কম বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। মশার অত্যাচারে খুবই বিরক্ত হচ্ছে মানুষ।
আজিমপুরের বাসিন্দা আবদুুল হাকিম বলেন, এই করোনার মধ্যে বাইরে না গেলেও বাসায় মশা দেখলেই এখন ভয় লাগে। এডিস মশার বাহক নিয়ে ভয়ে আছি। সিটি করপোরেশনের মশা নিধনের জন্য কর্মীদের এখন আর দেখা যায় না স্প্রে করতে। করোনার পাশাপাশি এই দিকটাও গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
এয়ারপোর্টের আশকোনার বাসিন্দা লাওহে মাহফুজ বলেন, মশার জন্য রাতের বেলা দরজা জানালা বন্ধ রাখতে হয়। এই করোনার সময় বাইরে না বের হয়ে ঘরেও থাকা যাচ্ছে না মশার জন্য। শেষ কবে মশার স্প্রে করেছে মনে নেই। সিটি করপোরেশনের এই দিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। অবস্থা খারাপ হওয়ার আগে এটি দরকার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে বাঁচতে করোনার পাশাপাশি জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। আগামী জুন থেকে ডেঙ্গুুর মাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে। আর এই ডেঙ্গুর প্রকোপ জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থাকবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, গত ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ২৭০ জন। এর মধ্যে চিকিত্সা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৬৮ জন। হাসপাতালে ভর্তি আছেন দুই জন। শুধু মার্চে ভর্তি হয়েছেন ২৬ জন রোগী।
মশক নিধনের বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোমিনুর রহমান মামুন ইত্তেফাককে বলেন, ‘করোনার কারণে আমরা সড়কে জীবাণুনাশক ছিটানোর পাশাপাশি মশক নিধনে লার্ভিসাইডিংও করছি। কিছুদিন জীবাণুনাশক ছিটানো নিয়ে ব্যস্ততা গেছে। তবে মশক নিধনের কর্মসূচির জন্য আমাদের আলাদা কর্মীরা এখন নিয়মিত কীটনাশক ছিটাচ্ছেন। করোনা প্রতিরোধে নগরবাসীরা আমাদের যেভাবে সহযোগিতা করছে, মশক নিধনেও পানি জমিয়ে না রেখে আমাদের সহযোগিতা করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’
সর্বস্বত্ব: এমআরএল মিডিয়া লিমিটেড
ঢাকা অফিস: মডার্ণ ম্যানসন (১৫ তলা), ৫৩ মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০
ময়মনসিংহ অফিস: হাসনাইন প্লাজা (দ্বিতীয় তলা), ৭ মদন বাবু রোড, ময়মনসিংহ-২২০০
সেলফোন: ০৯৬১১-৬৪৫২১৫, ০৯৬৯৭-৪৯৭০৯০
ই-মেইল: jagrota2041@gmail.com
ফোন :
ইমেইল :