০৯ আগষ্ট ২০২২, ১৭:৩৬ মিঃ
মো. কাউসার আলম, রাজধানীর একটি কওমি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। বেশকিছুক্ষণ তিনি একটি ইলিশের দোকানে সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন এবং অন্য ক্রেতাদের সঙ্গে বিক্রেতাদের দরকষাকষি শুনছেন। একটু কাছে গিয়ে কথা হলে ঢাকা পোস্টকে তিনি জানান, বাজারে এসেছেন ইলিশ মাছ কিনতে। এর আগে বেশ কয়েকটি জায়গায় দেখেও দাম মেলাতে পারছেন না তিনি।
মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) ছুটির দিন (আশুরা উপলক্ষে) সকাল ৯টার দিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মাছ বাজার ঘুরে কাওসার আলমের মতো এমন অনেকেরই দেখা পাওয়া যায়। বিক্রেতারাও বলছেন, দাম শুনেই অনেকে চলে যাচ্ছেন।
ইলিশের দাম প্রসঙ্গে মো. কাওসার ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাজার তো খুবই চড়া। আজকে তো বাজারে খুব বেশি ইলিশ মাছ দেখছি না। অন্য মাছ কিনেছি কিন্তু ইলিশ কিনতে পারিনি, বাজারে অনেকক্ষণ ঘুরে দামাদামি করে হিসাব মেলাতে পারিনি। যেমনটা ভেবে বাজারে এসেছিলাম তার তুলনায় দাম অনেক বাড়তি।
তিনি বলেন, ইলিশটা তো আমাদের দেশে খুবই সহজলভ্য হওয়ার কথা, কারণ নদীতে-সাগরে তো শুনি ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। কিন্তু সেগুলো কই, বাজারে এলে তো দাম কম থাকার কথা। খোঁজ নিয়ে দেখবেন হয়তো অধিকাংশই বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়ে যায়। বিষয়টা এখন এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে আমার দেশের ইলিশ আমরাই খেতে পারছি না।
ইলিশের এখন যেই দাম আছে, এই দামে কী মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্তরা কিনতে পারবে— এমন প্রশ্নের জবাবে এই মাদ্রাসা শিক্ষক আরও বলেন, এখনো মাছের দাম ওই পরিমাণ কমেনি যে সবাই কিনতে পারবে, খেতে পারবে। নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্তদের জন্য এই দামে ইলিশ কেনা সম্ভব না। তবে রপ্তানি কমিয়ে যদি দেশের মানুষের স্বার্থে দাম কমিয়ে দেওয়া হয় তাহলেই হয়তো সম্ভব।
ইলিশের দাম প্রসঙ্গে কথা হয় আরেক বেসরকারি চাকরিজীবী মেহেদী হাসানের সঙ্গে। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, সারা বাজার ঘুরেছি, সবার কাছেই একই দাম। একটু তো কমবেশি হওয়ার কথা, কিন্তু না। দাম খুবই চড়া।
তিনি বলেন, ছুটির দিনে ভেবেছিলাম সবাই মিলে ইলিশ খাবো। কিন্তু কেনা হয়নি। ইলিশ না নিয়ে মাংস কিনে নিয়েছি। কী আর করা! এই মৌসুমেও যদি বাজারে পর্যাপ্ত ইলিশ না থাকে, আর আমরা যদি স্বাচ্ছন্দ্যে কিনতে না পারি, সেটা খুবই দুঃখজনক।
কাউসার আলম, মেহেদী হাসানের মতো এমন আরও অনেকের সঙ্গেই ইলিশের দাম প্রসঙ্গে কথা হয় ঢাকা পোস্টের। সবার মুখে হতাশা আর ক্ষোভ থাকলেও প্রত্যাশা একটাই, ‘দাম কমুক, হাতের নাগালে আসুক’।
এদিকে অন্যান্য সময়ের তুলনায় এবার দাম বেশি হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করছেন ব্যবসায়ীরাও। তারা বলছেন, চাঁদপুর-বরিশালসহ এসব এলাকার নদীগুলোতে তেমন ইলিশ ধরা পড়ছে না। যেকারণে বাজারে ইলিশের পরিমাণও কম, আর দামটাও স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় চড়া।
বিক্রেতা সিরাজ মিয়া বলেন, ইলিশের বাজার বর্তমানে বাড়তির দিকে। মাছ বুঝে দামের পার্থক্য। আবার অঞ্চল বেদেও দামের পার্থক্য রয়েছে। পদ্মার ইলিশের দাম সবচেয়ে বেশি, এরপর আছে বরিশালের ইলিশ, দামে কিছুটা কম আছে চট্টগ্রামের ইলিশ।
কোন মাছের কেমন দাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৮০০ গ্রামের ইলিশ আমরা বিক্রি করছি ১০৫০ টাকা কেজি। এক কেজি ১০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি করছি ১৪০০ টাকা কেজি। এক কেজি ৪০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি করছি ১৬৫০ টাকা এবং দুই কেজির ইলিশ বিক্রি করছি ১৮০০ টাকা কেজি দামে।
মো. রফিক উদ্দিন বলেন, দিন যায় আর প্রতিদিন ইলিশের বাজার ৪০ থেকে ৫০ টাকা করে বাড়ে। কারণ হলো নদীতে পর্যাপ্ত মাছ পাওয়া যায় না। সাগরেও জাহাজ যেতে পারছে না। আর বাজারে যদি মাছ কম থাকে, তাহলে দামটা একটু বেশি হবে এটাই স্বাভাবিক।
একেকজন আসে আর মাছে দাম শুনে চলে যায়। বলে যে, মাছের দাম শুনি কম, কিন্তু আপনাদের এখানে বেশি। কিন্তু আমাদের তো আসলে কিছু করার নেই। গত সপ্তাহেও ইলিশ মাছের দাম ছিল অনেক কম। কারণ বাজারের পর্যাপ্ত মাছ ছিল। কিন্তু এই সময় আসলে আমাদের রেগুলার ক্রেতা বলতে কিছুই নেই, যখন যার শখ হয় তখনই এসে কিনে নিয়ে যায়। আর যাদের কাছে দাম কোনো বিষয় না, তারাই মাছ কিনতে আসে।
মাছ ব্যবসায়ী আবুল বাশার বলেন, ইলিশ মাছের দাম গত এক সপ্তাহ ধরেই বেশি। গত বুধবার থেকে আজকে মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রায় একই দামে ইলিশ বিক্রি করছি। এরমধ্যে দাম কমেওনি, বাড়েওনি।
দাম কমবে কবে, জানতে চাইলে এই বিক্রেতা বলেন, আমাদের বাজারের হিসাব হলো- নদীতে মাছ কমলে বাজারে মাছের দাম বাড়বে। আবার নদীতে মাছ বাড়লে বাজারের দাম কমবে। কিন্তু কবে থেকে আসলে দাম কমবে, সেটি এভাবে বলা কঠিন।
সর্বস্বত্ব: এমআরএল মিডিয়া লিমিটেড
ঢাকা অফিস: মডার্ণ ম্যানসন (১৫ তলা), ৫৩ মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০
ময়মনসিংহ অফিস: হাসনাইন প্লাজা (দ্বিতীয় তলা), ৭ মদন বাবু রোড, ময়মনসিংহ-২২০০
সেলফোন: ০৯৬১১-৬৪৫২১৫, ০৯৬৯৭-৪৯৭০৯০
ই-মেইল: jagrota2041@gmail.com
ফোন :
ইমেইল :