বাগেরহাটে বিপৎসীমার ওপরে নদ-নদীর পানি, প্লাবিত নিম্নাঞ্চল
প্রকাশ :

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ ও পূর্ণিমা তিথির জোয়ারে বাগেরহাটের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রোববার (১৪ আগস্ট) দুপুরে জোয়ারের পানিতে শহরের খানজাহান আলী সড়ক, রাহাতের মোড়, বাসাবাটি, মুনিগঞ্জ, মেইনরোডের প্রধান ডাকঘর সড়কসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় এ অবস্থার
সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া জেলার কচুয়া, মোরেলগঞ্জ, রামপাল, মোংলা ও শরণখোলা
উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
অন্যদিকে লঘু চাপের প্রভাবে মোংলা সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত বহাল রেখেছে আবহাওয়া অফিস। বৈরি আবহাওয়ায় বঙ্গোপসাগর ও নদী মোহনায় মাছ ধরতে যাওয়া ফিশিং ট্রলারগুলো নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে। গত ৫ দিন ধরে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে সুন্দরবন।
বৃষ্টির কারণে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। আফজাল শেখ নামে এক রিকশা চালক বলেন, এক দিকে সব কিছুর দাম হু হু করে বাড়ছে, অপরদিকে ঠিকমত বৃষ্টিতে রিক্সাও চালাতে পারছি না। আয় না হলে খাব কী?
সদর উপজেলার গাওখালী এলাকার ঘের মালিক জয়নাল আবেদীন বলেন, পানি উন্নয়ন
বোর্ডের বাঁধ আমাদের কোনো কাজে আসে না। নিচু রাস্তার কারণে ভারী বৃষ্টি আর
জোয়ারে ঘের-বাড়ি ভেসে গেছে। কিভাবে ঘের করব বলে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।
মোরেলগঞ্জ
পৌর এলাকার লাভলু শেখ বলেন, পানগুছি নদীর পানি স্বাভাবিকর চেয়ে কমপক্ষে ৪
ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। পানিতে উপজেলা সদর, মোরেলগঞ্জ বাজারসহ নদীর তীরবর্তী
বেশিরভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পৌর শহরে বাস করেও যদি পানিতে ভাসতে হয়
তাহলে আমরা কোথায় যাব?
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের করমজল বন্য প্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির বলেন, কয়েকদিন ধরে জেয়ারের পানি স্বাভাবিকের থেকে তিন-চার ফুট বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রজনন কেন্দ্রের রাস্তাসহ সুন্দরবনের বেশিরভাগ এলাকা দিনে দুই বার প্লাবিত হচ্ছে। তবে কোনো বন্য প্রাণির ক্ষতি হয়নি।
মোংলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অমরেশ চন্দ্র ঢালী বলেন,
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে বাগেরহাটসহ দেশের উপকূলীয় জেলাগুলোয়
বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া বেড়েছে। পূর্ণিমা এবং বায়ু চাপের তারতম্য বেশি হওয়ায়
নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে দুই থেকে চার ফুট উচ্চতার জোয়ার হয়েছে।
পানি
উন্নয়ন বোর্ড বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন,
বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপরে বাগেরহাটের নদ-নদীর পানি। যার ফলে জেলার
বেশকিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তবে এতে জেলায় থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ
স্বাভাবিক রয়েছে। কোনো বাঁধ ঝুঁকিতে নেই।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাগেরহাটের উপ-পরিচালক মো. আজিজুর রহমান বলেন, গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে আমনের ক্ষেতের দারুণ উপকার হচ্ছে। চলতি মৌসুমে জেলায় ৭৪ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই বৃষ্টিতে আমন চাষিরা উপকৃত হবে বলেও জানান তিনি।