, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ অনলাইন সংস্করণ

জুমার দ্বিতীয় খুতবায় কী পড়া হয়?

  ধর্ম ডেস্ক

  প্রকাশ : 

জুমার দ্বিতীয় খুতবায় কী পড়া হয়?

খুতবা বা বিষয় সংশ্লিষ্ট বক্তব্য। জুমার নামাজ, ঈদের নামাজ, আরাফার ময়দানে ও বিয়ের সময় খুতবা পড়া হয়। তবে জুমার নামাজে দুটি খুতবা দেওয়া হয়। যার প্রথমটি দেওয়া নির্ধারিত বিষয়ের ওপর। দ্বিতীয় খুতবাটি মূলত মহান আল্লাহর প্রশংসা, নবিজির প্রতি দরুদ ও মুমিন মুসলমানের জন্য দোয়া। আরবি ভাষায় দেওয়া দ্বিতীয় খুতবা সম্পর্কে অনেকেই তেমন কিছু জানেন না। কী পড়া হয় জুমার ছানি/দ্বিতীয় খুতবায়?

খুতবা হলো জুমার নামাজের আগে, উভয় ঈদের নামাজের পরে, হজে আরাফার দিনে মসজিদে নামিরাতে, বিয়ের অনুষ্ঠানে ও বিভিন্ন ইসলামি অনুষ্ঠানে খলিফার প্রতিনিধি, দায়িত্বশীল ব্যক্তি বা ইমাম ও খতিব কর্তৃক প্রদত্ত প্রাসঙ্গিক বক্তৃতা বা ভাষণ। যিনি খুতবা দেন তাঁকে ‘খতিব’ বলা হয়।

ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় খুতবা বলা হয় এমন বক্তৃতা, যাতে আল্লাহর প্রশংসা, তার একত্ববাদের ঘোষণা, নবীজীর প্রতি দরুদ এবং উপস্থিত সাধারণের প্রতি উপদেশ বিদ্যমান থাকে। আজ জুমার দ্বিতীয় খুতবার প্রচলিত আলোচনা তুলে ধরা হলো-

আল্লাহর নামে শুরু করছি যিনি পরম দাতা-দয়ালু। আল্লাহর অসংখ্য প্রশংসা করিতেছি। এই মর্মে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া মাবুদ নাই , তিনি একক, লা শরিক, তার কোনো অংশীদার নেই। আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমাদের নেতা , নবি হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসুল। যিনি সৃষ্টিকুলের সেরা সম্মানিত মানুষ।

হে আল্লাহ! আপনি আমাদের নেতা হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর প্রানপ্রিয় বংশধর এবং সাহাবিদের উপর অনুগ্রহ, শান্তি ও করুনা বর্ষণ করুন।

হে আল্লাহর বন্দাগণ! মিথ্যা শোনা ও বলা থেকে দুরে থাকুন । আর নিষেধ ও সাবধানকৃত বিষয়ে থেকে বিরত থাকুন।

মনে রাখুন! আল্লাহ তাআলা তাঁকে ভয় করার জন্য বান্দাকে নির্দেশ দেন। ফেরেশতারা আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করেন। সব মানুষ ও সৃষ্টির প্রতি তিনি তার ইবাদত ও তাসবিহ-তাহলিলের নির্দেশ দেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় বন্ধু হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরুদ পড়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন-

اِنَّ اللّٰهَ وَ مَلٰٓئِکَتَهٗ یُصَلُّوۡنَ عَلَی النَّبِیِّ ؕ یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا صَلُّوۡا عَلَیۡهِ وَ سَلِّمُوۡا تَسۡلِیۡمًا

‘নিশ্চয়ই আল্লাহ নবির প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণও নবির জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করে। হে বিশ্বাসীগণ! তোমরাও নবির জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা কর এবং তাকে উত্তমরূপে অভিবাদন কর। (দরূদ ও সালাম পেশ কর।)’ (সুরা আহজাব : আয়াত ৫৬)

এরপর খতিব সাহেব পর্যায়ক্রমে ধাপে ধাপে উম্মতে মুসললিমার জন্য দোয়া করতে থাকেন এভাবে-

হে আল্লাহ! আমাদের নেতা নবি মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যিনি মক্কা-মদিনার হিজরতকারী আর তাঁর বংশধরদের পরে অনুগ্রহ, শান্তি ও বরকত দান করুন।

বিশেষ করে রহম করুন, সাহাবিদের সেরা আমিরুল মুমিনীন সায়্যেদিনা আবু বরক ছিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহুর ওপর। ন্যায় ও স্পষ্টবদী আমিরুল মুমিনীন সাইয়্যেদিনা ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর ওপর। কোরআনে সংগ্রাহক , লজ্জাশীল ও দৃঢ় বিশ্বাসী আমীরুল মুমিনীন সাইয়্যেদিনা ওছমান ইবনে আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহুর ওপর। আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিজয়ী বাঘ আমিরুল মুমিনীন আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুর ওপর দরুদ ও সালামের ধারা যেন বিরাজ থাকে।

তাছাড়া শান্তির প্রতীক জান্নাতের যুবকদের সরদার হযরত সাইয়্যেদেনা আবু মুহাম্মদ হাসান ও আবু আবদুল্লাহ হোসাঈন রাদিয়াল্লাহু আনহুমার ওপর রহমত বর্ষিত হোক। তাদের মাতা জান্নাতের নারীদের সর্দার সাইয়্যেদেনা হজরত ফাতেমাতুজ্জোহরা রাদিয়াল্লাহু আনহার ওপর রহমত ও সালাম বর্ষিত হোক।

আর নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দুই চাচা যাঁরা আল্লাহর ও মানুষের কাছে সম্মানিত , আবিলতা ও অপরিচ্ছন্নতা থেকে পবিত্র , সেই হজরত হামজা এবং হজরত আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর ওপর রহমত বর্ষিত হোক।

এরপর বেহেশতের সুসংবাদ পাওয়া দশজন বিশিষ্ট সাহাবির ওপর রহমত ও সালামের ধারা কেয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত হোক।

হে আল্লাহ! আপনি ইসলাম ও মুসলমানদের বিজয়ী করুন। হে আল্লাহ! আমাদের দেশের ওপর শান্তি নাজিল করুন। ইসলামকে জীবন বিধান হিসেবে বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন।

হে আল্লাহ! দেশ পরিচালনায় রাষ্টপ্রধানসহ পরিচালনা পর্ষদকে সঠিক দায়িত্ব পালন করার তাওফিক দান করুন।

হে আল্লাহ! ইসলামকে বিজয় দান করুন। বিশ্বব্যাপী ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি আপনি শান্তি নাজিল করুন। দুনিয়াব্যাপী ন্যয় বিচার প্রতিষ্ঠা করার তওফিক দান করুন।

হে আল্লাহ! আমাদের সাধারণ মানুষকে তোমার ও তোমার রাসুলের অনুসারী হওয়ার তওফিক দান করুন। হে আল্লাহ! আমাদের নেতা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের ধর্মের সাহায্যকারীদের বিজয় দান করুন।

হে আল্লাহ! সব মুসলমানদের ঘরে ঘরে শন্তি ও ক্ষমা দান করুন। আমাদের ক্ষমা-শান্তি-নিরাপত্তা দান করুন। হে আল্লাহ! আমাদেরকে ইহকাল ও পরকালের সর্বাঙ্গীন মঙ্গল দান করুন। মুমিন নর-নারীর জীবিতদের ও যারা মারা গেছে তাদের গুনাহ ক্ষমা করে দিন।

সব প্রশংসা মহান আল্লাহ যিনি সবাইকে বিতাড়িত শয়তান থেকে নাজাত দান করেন। এরপর খতিব সাহেব মহান আল্লাহকে স্মরণ করার উপদেশ দিয়ে খতুবা শেষ করেন। তিনি বলেন-

فَاذۡکُرُوۡنِیۡۤ اَذۡکُرۡکُمۡ وَ اشۡکُرُوۡا لِیۡ وَ لَا تَکۡفُرُوۡنِ

অতএব, তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমি তোমাদেরকে স্মরণ করব। আর আমার শোকর আদায় কর, আমার সাথে কুফরী করো না।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৫২)

  • সর্বশেষ - অতিথি কলাম