০৯ এপ্রিল ২০২০, ১৩:০০ মিঃ
যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাস চিকিৎসায় নিজের জীবন উৎসর্গ করলেন সেখানকার বাংলাদেশি চিকিৎসক ডা. আব্দুল মাবুদ চৌধুরী (ফয়সাল)। প্রায় দুই সপ্তাহ করোনাভাইরাসে ভুগে বুধবার লন্ডনের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
ভয়ঙ্কর ধরনের ছোঁয়াচে করোনা থেকে বাঁচতে চিকিৎসক, নার্সসহ সকল স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) সরবরাহ করার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন সিলেটের সন্তান বাংলাদেশি এই চিকিৎসক।তার এক বন্ধু লিখেছেন, ‘আমার খুব কাছের বন্ধুদের মাঝে এই প্রথম একটি বন্ধু হুট করে আমাদের ছেড়ে চলে গেল। ব্যাপারটা খানিকটা কল্পনারও বাইরে। ফয়সাল তো এত সহজে চলে যাবার মতো নয়।’
সিলেট ক্যাডেট কলেজের মেধাবী ছাত্র ছিলেন ডা. ফয়সাল। ১৯৮৬ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে (চমেক) ভর্তি হন। পরে মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদের সমাজসেবা সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি।
ভালো ভালো সব পরিকল্পনা ছিল ডা. ফয়সালের। মেডিকেল কলেজে সমাজসেবা সম্পাদক থাকাকালে একটি ‘মেধাবী ছাত্র অনুদান ফান্ড‘ গঠন করেছিলেন বিভিন্নজনের কাছ থেকে অনুদান নিয়ে। একজন দরিদ্র মেধাবী ছাত্রকে তা প্রদান করা হতো। শুধু তাই নয়, চমৎকার আবৃত্তিকার, অভিনেতা এবং নাট্যনির্দেশক ছিলেন ফয়সাল।
ডা. ফয়সালের একটি অনন্য সাধারণ গুণ ছিল তার সততা, দৃঢ়তা এবং আন্তরিকতা। প্রচণ্ড আতিথেয়তাপরায়ণ এবং পরোপকারী ছিলেন এই চিকিৎসক। পরিচিত যে কেউ লন্ডনে গেলেই ডা. ফয়সালের অতিথি হয়ে যেতেন তিনি।
ইংল্যান্ডে ইউরোলোজির অস্ত্রপ্রচারের বিশেষজ্ঞ হবার পরেই প্রতি বছর কমপক্ষে দুবার বাংলাদেশে আসতেন গরিব রোগীদের বিনামূল্যে অস্ত্রপ্রচার করানোর জন্য এবং নতুন প্রজন্মের ইউরোলজিস্ট তৈরি করার জন্য। ফয়সাল বাংলাদেশ ইউরোলোজিক্যাল সোসাইটির একজন প্রধান উপদেশক ছিলেন।
বাংলাদেশ না থেকেও বাংলাদেশি রোগীদের নিয়মিত টেলিফোন বা ইন্টারনেটে বিনামূল্যে জটিল রোগের জরুরি কনসালটেন্সি করতেন সিলেটের সন্তান ফয়সাল। সেখান থেকেই তার স্বপ্ন তৈরি হয়েছিল বাংলাদেশের বাইরে থাকা চিকিৎসকদের নিয়ে একটি টেলিমেডিসিনের নেটওয়ার্ক তৈরি করবেন। এটি নিয়ে অনেকদূর কাজ করেছিল এবং এটি বাস্তবায়নের জন্য এ বছরের শীতের ছুটিতে বাংলাদেশে আসতে চেয়েছিলেন।
ডা. ফয়সালের স্ত্রী রানী পেশায় একজন মনোচিকিৎসক। ছেলে ইন্তিসার ও মেয়ে ওয়ারিশাকে নিয়ে ছিল তাদের সংসার।
ঈর্ষণীয় প্রাণশক্তির অধিকারী ছিলেন ডা. ফয়সাল। নিঃস্বার্থভাবে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে নিজেই যখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাসাতে কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন, তখন নিঃসংকোচে সাহসীভাবে লিখেছিলেন-‘ যারা আমাদের বলেছিল এই রোগটি তেমন ভয়ংকর নয়, সমস্ত দোষ তাদের। তারা বলেছিল এটি সাধারণ এক ধরনের ফ্লু। কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। আর এখন অনেক বেশি দেরি হয়ে গেছে।’
এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে (বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত হয়ে আইসিইউতে ভর্তি) সরাসরি লিখেছিলেন ডা. ফয়সার।
‘I hope we are by default entitled to get this minimal support for our safe medical practice. Otherwise in future our children will loose interest to go Medical school . We also should get first track facilities for corona virus testing to help our patient to prevent disease spreading.’
সর্বস্বত্ব: এমআরএল মিডিয়া লিমিটেড
ঢাকা অফিস: মডার্ণ ম্যানসন (১৫ তলা), ৫৩ মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০
ময়মনসিংহ অফিস: হাসনাইন প্লাজা (দ্বিতীয় তলা), ৭ মদন বাবু রোড, ময়মনসিংহ-২২০০
সেলফোন: ০৯৬১১-৬৪৫২১৫, ০৯৬৯৭-৪৯৭০৯০
ই-মেইল: jagrota2041@gmail.com
ফোন :
ইমেইল :