, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ অনলাইন সংস্করণ

সবকিছুর দাম বাড়ে, বাড়ে না শ্রমের দাম

  নিজস্ব প্রতিবেদক

  প্রকাশ : 

সবকিছুর দাম বাড়ে, বাড়ে না শ্রমের দাম
গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনের সামনে কাজ করছেন দুজন মাঠকর্মী

নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ। পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস উঠছে মধ্য ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষের। এই সময়ে সাভার গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে (গবি) কর্মচারীদের দিনপাত তুলে ধরেছেন হুমায়রা রহমান সেতু। 

এগারো হাজার দুইশত আশি টাকা বেতনে চাকরি করছেন গবি উপাচার্যের আয়া অমিতন বেগম। তিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে তার সংসার। স্বামী মৃত। তিনি বলেন, ‘নিম্নমানের ঘরের ভাড়া দেই ৩ হাজার টাকা। স্বামীর মৃত্যুর পরে ছেলের পড়াশোনা আর টানতে পারিনি। পরে ছেলে গাড়ি চালাতো, রোড অ্যাক্সিডেন্টে সেও ঘরে বসা। অসুস্থ ছেলেটার মুখে দুটো পথ্যও দিতে পারছি না। ওষুধের প্রতি পাতায় বিশ-ত্রিশ টাকা বেড়ে গেছে। মাছ-মুরগির গোস্ত খাইনা অনেক দিন। সবকিছুর দাম বাড়ে শুধু আমাদের শ্রমের দাম বাড়ে না।’

ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস অনুষদের পরিচ্ছন্নতাকর্মী পিয়াংকা রানী। গ্রামের বাড়ি ধামরাইয়ের কালামপুর, বাবার মৃত্যুর পরে ভিটেমাটি দখল করে নেয় তার স্বজনেরা। অভাবের তাড়নায় আসেন নলামের মাঝি পাড়ায়। তিনি বলেন, ‘গ্রামে থাকলে তো তাও কিছু চেয়ে চিন্তে চলা যায়। শহরে যেন কেউ কারো নয়। সবকিছুর দাম দিন দিন যে হারে বাড়ছে, সামনে মরা ছাড়া গতি নাই। সরকারের কাছে অনুরোধ; আমাদের দিক চিন্তা করে একটা ব্যবস্থা নিন।’ 

গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় লিঙ্গের নিরাপত্তা রক্ষীদের একজন জাহানারা বানু। তিনি বলেন, ‘চাল, ডাল, তেল, নুন, শাক, তরকারি—যা ধরি দাম শুনে ঘুরে আসতে হয়। আগে আটার রুটি খেয়ে থাকতাম। তখন আটা কিনতাম ২৫ টাকা কেজি এখন তা ৫০ টাকা। ডিমের দামও বেড়েছে হালিতে দশ টাকা। যে বেতন পাই তা দিয়ে দু’বেলা দুমুঠো ভাত খেতেই হিমশিম খেতে হয়। পথ্য কিনবো কেমন করে? এ বাজারে রোগ হলে মরণ ছাড়া উপায় নাই। তিনি আরও বলেন, ‘সারাদিন হাজারো মানুষের নিরাপত্তা দিই, কিন্তু আর্থিকভাবে নিজেই অনিরাপদ।’

মাঠকর্মী অপেন পাল বলেন, ‘সারাদিন এতো কাজ করেও নুন আনতে পান্তা পুরায়। সবকিছুর দাম বাড়ে শুধু শ্রমের দাম বাড়ে না। অনেক কষ্টের পর আল্লাহ একটা ছেলে দিয়েছেন। ৪ বছরের ছেলে বাহানা করে গোস্ত দিয়ে ভাত খাবে, খেতে দিতে না পারায় বুক ফেটে যায়। এই দ্রব্যমূল্যের বাজারে গরিবের স্বপ্নগুলো স্বপ্ন হয়েই থেকে যায়।’

লেখক: শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী,
গণ বিশ্ববিদ্যালয়, সাভার।

  • সর্বশেষ - অন্যান্য