, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ অনলাইন সংস্করণ

নেত্রকোনায় চিকিৎসকসহ আরও ৯ জন করোনায় আক্রান্ত

নেত্রকোনায় চিকিৎসকসহ আরও ৯ জন করোনায় আক্রান্ত

নেত্রকোনায় এক চিকিৎসকসহ আরও ৯ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৪৭ জনে।


গত ৭ দিন নেত্রকোনায় নমুনা পরীক্ষা বন্ধ থাকার পর শুক্র ও শনিবারে মোট দশ জন শনাক্ত হয়। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ল্যাবে পরীক্ষায় তাদের শরীরে কোভিড-১৯ ধরা পড়ে।


নেত্রকোনায় করোনা আক্রান্ত ৪৭ জনের মধ্যে ৩১ জনই পোশাককর্মী। আক্রান্তদের মধ্যে ৪১ জনই বাইরের জেলা থেকে এসেছেন।


স্থানীয় বাসিন্দা ও জেলা সিভিল সার্জনের কাযালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ এপ্রিল জেলায় প্রথম দুজনের শরীরে কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়। তাদের মধ্যে একজন খালিয়াজুরি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র নার্স (২৮)। অপরজন সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের বাসিন্দা (৫০)।


জানা গেছে, হাসপাতালের ওই নার্স তার নিজ বাড়ি গাজীপুরের কোনাবাড়িতে ছুটি কাটিয়ে ৬ এপ্রিল কর্মস্থলে যোগদান করে তিনদিন ডিউটি করেন। এরপর তার শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। আর লক্ষ্মীপুরের ওই ব্যক্তি নারায়ণগঞ্জের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। সেখান থেকে গত ৯ এপ্রিল সর্দি-জ্বরসহ করোনার লক্ষণ নিয়ে তিনি নিজ বাড়িতে আসেন। এরপর তার পাঁচ বছরের শিশুকন্যাটিও আক্রান্ত হয়। ওই ব্যক্তি দীর্ঘ দিন নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালের আইসোলেশনে থাকার পর গত শনিবার সুস্থ হয়ে বাড়ি চলে যান।


নেত্রকোনায় করোনা আক্রান্তদের সবচেয়ে বেশি নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর থেকে আগত। বাকিদের মধ্যে নরসিংদী, ফেনীসহ বিভিন্ন জেলা রয়েছে। জেলায় করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা ব্যক্তির সংখ্যা মোট ১৪২ জন এবং মোট চিহ্নিত স্পট ২৫টি।


গত কয়েক দিন ধরে জেলায় নমুনা পরীক্ষা নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের পিসিআর মেশিনে বিভাগের চার জেলা ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, জামালপুর ও শেরপুরের পাশাপাশি সুনামগঞ্জের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ মেশিনে প্রতিদিন দুইবারে গড়ে ১৮৮টি নমুনা পরীক্ষা করা যায়। কিন্তু পাঁচটি জেলা থেকে প্রতিদিন নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে আরও অনেক বেশি। এ কারণে যেদিনের সংগৃহীত নমুনা সেদিন পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। কোনো কোনো জেলার নমুনা পরীক্ষা তিনদিনেও একবার হচ্ছে না। গত বুধবার থেকে নেত্রকোনার বিশেষ প্রয়োজনীয় কয়েকটি ছাড়া আর কোনো নমুনা পরীক্ষা করা হয়নি।


বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান সালমা আহমাদ জানান, আমরা দিনে দুইবারে ১৮৮টির বেশি নমুনা পরীক্ষা করতে পারছি না। এরই মধ্যে আমাদের ল্যাবে প্রায় সাড়ে সাতশর মতো নমুনা জমা হয়ে রয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।


তিনি আরও জানান, ময়মনসিংহের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পিসিআর মেশিন দিয়ে পৃথক আরেকটি ল্যাব চালু করার কথা রয়েছে। এটি চালু হলে প্রতিদিন আরও ১৮৮টির মতো নমুনা পরীক্ষা করা যাবে।


নেত্রকোনার সিভিল সার্জন মো. তাজুল ইসলাম খান জানান, গত ২ এপ্রিল থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেলের ল্যাবে পাঠানো হয়। এ পর্যন্ত জেলার ১২২৭টি নমুনার মধ্যে শুক্রবার পর্যন্ত ৬৫৯টির প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৪৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। বাকি ৫৬৮টি নমুনার প্রতিবেদন এখনো পাইনি। এ কারণে রোগী শনাক্তকরণে কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। জেলায় একটি পিসিআর ল্যাব স্থাপনের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।


এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের নেত্রকোনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক  আহসানুল কবীর রিয়াদ বলেন, নেত্রকোনা সদরের অনন্তপুর গ্রামে বেসরকারি সংস্থা ডেমিয়েন ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত যক্ষ্মা ও কুষ্ঠ ক্লিনিকে একটি পিসিআর মেশিন রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে প্রয়োজনীয় লোকবল ও কিটসহ অন্যান্য সরঞ্জাম সরবরাহ করলে ওই মেশিন দিয়ে একটি ল্যাব চালু করা সম্ভব। মেশিনটির সাহায্যে প্রতিদিন ১৮৮টি নমুনা পরীক্ষা করা যাবে।

  • সর্বশেষ - মহানগর