, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ অনলাইন সংস্করণ

হাওরদ্বীপ খালিয়াজুরীতে ধানের ফলনে চমক, দামে মার

হাওরদ্বীপ খালিয়াজুরীতে ধানের ফলনে চমক, দামে মার

হাওরদ্বীপ খালিয়াজুরীতে চলতি বোরো মৌসুমে চমকপ্রদ ফলন 

নেত্রকোনার হাওরদ্বীপ খালিয়াজুরীতে চলতি বোরো মৌসুমে চমকপ্রদ ফলন হলেও ধানের দামের ক্ষেত্রে মার খাচ্ছে চাষীরা। এখানে ধানের মূল্য এতটাই কম, যে উৎপাদন খরচও উঠছে না অনেক চাষীর।


সরকার ধান চালের মূল্য নির্ধারণ করলেও খালিয়াজুরীতে ক্রয় অভিযান এখনো শুরু না হওয়া ও ব্যাবসায়িরা পরস্পরের যোগসাজসে ধানের মূল্য হ্রাস করায় ঋণগ্রস্ত কৃষকরা ঋণ শোধের জন্য অল্প দামেই ধান বেচতে বাধ্য হচ্ছেন বলেন জানিয়েছেন তারা।


খালিয়াজুরী উপজেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, সরকারি ক্রয় অভিযান শুরু হলেই বাড়বে ধানের দাম। এবার এ উপজেলায় ১৯ হাজার ৮শ ৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। আবাদের পরিপ্রেক্ষিতে উৎপাদন লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ২০হাজার ৫শ মেট্রিক টন ধান। এ ধান বিক্রিতে লাভবান হতে না পারলে কৃষক চাষে আগ্রহ হারাবে বলেও জানিয়েছে বিভাগটি।


খালিয়াজুরীর আদমপুর গোয়ালবাড়ি গ্রামের বর্গা চাষি প্রনয় পাল আক্ষেপ করে (৩২) বলেন, এবার তিনি চাষ করেছেন প্রায় ১০ একর জমি। তার প্রতি একর জমি চাষে খরচ হয়েছে- বীজ ধান ক্রয়ে ২৪শ, বীজ তলা চাষাবাদে ৫শ, ধান চারা উত্তোলন করে জমিতে নেয়া ৬শ, জমি পত্তনে ৭হাজার ৫শ, চাষে ১৫শ, রূপনে ৩ হাজার, সেচে ২ হাজার, সারে ২ হাজার ৫শ, নিড়ানিতে ২ হাজার, ধান কাটা-মাড়াইয়ে ৬হাজার, ধান শুকানোয় ৩ হাজার ও পরিবহনে ১ হাজারসহ সর্বমোট ৩২ হাজার টাকা।


প্রতি একরে ব্রি-২৮ ধান ৩৫ মণ, ব্রি-২৯ ধান ৪০ মণ ও হাইব্রিড ধান উৎপাদন করেছেন ৫০ মণ অনুসারে। ব্রি-২৮ ধান ৭শ টাকা, ব্রি-২৯ ধান ৬শ টাকা ও হাইব্রিড ধান ৫শ টাকা মণ দরে কিছু বিক্রি করায় উৎপাদন খরচের চেয়ে একর প্রতি তার ৭ হাজার ৭শ টাকা লোকসান হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।


একই গ্রামের কৃষক রাখাল চন্দ্র বিশ্বাস, পাশের উদয়পুর গ্রামের সন্তোষ সামন্ত ও সেন্টু তালুকদার ধানের উৎপাদন খরচ বিষয়ে ওই প্রনয় পালের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, এবার চমকপ্রদ ফলন হয়েছে ঠিকই, কিন্তু দাম কম থাকায় ধান চাষ করে তাদেরও লোকসান গুনতে হচ্ছে। লোকসানে ধান বিক্রি করছেন কেন ? এ প্রশ্নের জবাবে তারা জানান, একদিকে, ঋণের টাকায় জমি চাষ করায় পাওনাদারদের ঋণ মেটানোর চাপ, অন্যদিকে, সরকারি ভাবে ধান কেনা শুরু না হওয়া আর ব্যবসায়িরা তাদের অধিক মুনাফা অর্জনে সিন্ডিকেট করে ফেলায় কম দামেই ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।


এদিকে, খালিয়াজুরী সদরের মনির হোসেন, হারুন-অর-রশিদ ভূইয়া ও আনোয়ার হোসেন জানান, সম্প্রতি ধান কাটা শেষ হয়েছে। ধান চাষে তাদের লোকসান না হলেও খুব একটা লাভ হয়নি। ফলে তারা সামনের বছর ধান চাষ করবে কী না তা নিয়ে ভাববেন।


খালিয়াজুরী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, ২৬ এপ্রিল থেকে সরকারি ভাবে এখানে ধান কেনার কথা ছিল। এবারের বোরো মৌসুমের শতভাগ ধান কাটা ইতিমধ্যে শেষ হলেও এখানকার প্রায় ১১ হাজার কৃষকের পুরো তালিকাটি সম্পন্ন করতে কিছুটা দেরি হয়েছে। এখন ধান ক্রয় কমিটির মাধ্যমে কয়েক দিনের মধ্যেই ধান কেনা শুরু হবে।


উপজেলার ধান ক্রয় কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ এইচ এম আরিফুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার লটারির মাধ্যমে কৃষকদের কাছ থেকে খালিয়াজুরী খাদ্য বিভাগের ধান কেনা অভিযান শুরু হবে। ১ হাজার ৪০ টাকা মণ দরে ১৭শ ৩৯ মেট্রিক টন ধান কেনার এ অভিযান চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। এখানে একটি কৃষক পরিবার থেকে সর্বোচ্চ ১ মেট্রিক টন ধান কেনা হবে।

  • সর্বশেষ - মহানগর