২০ মে ২০২০, ১৪:৩১ মিঃ
আনিসুজ্জামান
আপনার ক্ষেত্রে আমি কখনোই
অতীত কালের ক্রিয়াপদ ব্যবহার করতে পারব না
হোক তাতে ব্যাকরণের ব্যত্যয়
কখনো বলতে পারব না—
ওপারে চিরনিদ্রায় শান্তিতে বিশ্রাম করুনপ্রাতিস্বিকতায় আপনাকে পেয়েছি বরাবর
অকস্মাৎ কী করে বলি, নেই... নেই...
ওই তো সমুজ্জ্বল শরীর
হিরন্ময় কণ্ঠ
পারিজাত-হাসি
দু চোখে ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল স্বপ্ন আর সম্ভাবনা
প্রতিটি অভিব্যক্তিতে ভালোবাসার ঝরনা
আপনার অস্তিত্ব চিরকাল আমার কাছে দিবসের সম্পন্ন রোদ্দুর
রাত্রির সান্দ্র চন্দ্রকিরণনা, আপনাকে আমি কখনোই বলতে পারব না, বিদায়
গল্প
কিছু কিছু গল্প পড়বার আগেই ফুরোয়
কিছু গল্প পাঠের পৃষ্ঠায়
কিছু কিছু গল্প সময়ের সীমানা ছাড়ায়
আমরা নাটাই ধরে রাখি হাতে
সুতোর বন্ধনে ঘুড়ি ওড়ে পার্থিব হাওয়ায়কোনো এক রাতে
শৈশবের রূপকথা জন্ম নেয় পুনর্বার
জেগে থাকা সোনার বাংলায়
নক্ষত্রের আসর তখন সেইসব কাহিনি শোনায়
অভিনতুন সম্ভাবনারকেউ কেউ পাশ ফিরে শোয়
কেউ ভার বয় রাতজাগা শূন্যতার
অলৌকিক অনুভবে যদি কেউ হেঁটে যায় আরো দূরে
আমরা শুনতে পাই তার গান রাবীন্দ্রিক সুরেমানুষের বুকে বাসা বাঁধে যে গল্প অম্লান তার নাম শেখ মুজিবুর রহমান
মা
মা আমার হাত ধরে রেখেছেন সাতান্ন বছর
এ হাতে কখনো ধরতে হয়নি কারো পা
এ হাতে কখনো দিতে হয়নি দাসখতএ হাতে কর্ষণ করেছি মাটি
বুনেছি বীজ
রুয়েছি চারা
কেটেছি ফসল
কারো পাকা ধানে দেইনি মই
ফেলিনি ছাই কারো বাড়া ভাতে
মড়কের বিপরীতে মাথা উঁচু রেখে হেঁটেছি পৃথিবীর প্রধান সড়কেমাকে নিয়ে হয় তো কারো কারো থাকে অভিমান
কিংবা কষ্ট
অথবা আক্ষেপকিন্তু মাকে নিয়ে গালি
মেনে নেয়া যায় না কিছুতেই
কখনোই না, কক্ষনো না, একদম না
কুপুত্র যদ্যপি হয়
কুমাতা কুত্রাপি নয়যে আমার মাকে গালি দেয়
তার প্রতিপক্ষে প্রক্ষুব্ধ প্রতিবাদ
তার প্রতি প্রখর ঘৃণা
তার কপালে কলঙ্কতিলকমা আমার মাথায় হাত রেখে আছেন আজন্ম এ মাথা কখনো নোয়াতে হয়নি কারো কাছে
আর আমার মায়ের নাম আনোয়ারা বেগম
আমার মায়ের নাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া
আমার মায়ের নাম বাংলাদেশকনীনিকা
মানুষের গন্ধ পেলে নিসর্গের ছন্দ কেটে যায়
দুপুরের দ্বার খুলে বার হয় রাতের নায়িকা
নারীর শরীর চিরকাল কাব্যের অববাহিকা
বিকেলের চোরা চোখ পর্দার আড়ালে জানালায়
কালের শপথ, জল আর গড়াবে না আঙিনায়
অন্ধকারের দেয়ালে হয়তবা মারা হবে চিকা
জ্বলছে নিভছে দেখো আকাশের সান্দ্র কনীনিকা
কে আর কখন বলো নিজের পৃথিবী খুঁজে পায়বেহায়া অষ্টপ্রহর নির্বিকার কেটে যেতে থাকে
নৈঃশব্দ্যের পাত্র থেকে উপচায় শীতল অনল
মেডুসার শানজরে প্রস্তরিত তাপিত তরল
সোনার হরফে লেখা নাম মুছে যায় দুর্বিপাকে
জীবন অতল জল, উবে যায় ঢেউভাঙা ফেনা
শেষপর্যন্ত আমার পক্ষে কেউ কখনো থাকে নাসাঁইজি
দুই নয়নের আড়ে
কার যক্ষের ধন বক্ষের গোপনকে কাড়ে
অম্লে তিক্তে ঝালে ক্ষারে
কার ভিটেয় কে খুঁটি গাড়েভার চাপিয়ে বলদের ঘাড়ে
খেলা চলে ছক্কায় চারে
মাগনা পেলে জমানা কি আর থোড়াই ছাড়ে
পঙ্গপাল উড়ে এসে জুড়ে বসে হাজারে হাজারে
বঙ্গের বাজারে
লাল ফকিরের মাজারেশেয়ালকাঁটার ঝাড়ে
ফেলে আসা মনটারে
যদি কেউ ইশারায় চোখ ঠারে
যদি কেউ নিতে চায় চান্দের দাওয়াতে তারে
আমি কোথায় পাব তারে
সে নিজেই ডুবে যায় চান্নি পসরে নয়ন-পাথারে
মন তুই দেখলি নারেঅকহতব্য কটুকাটব্য ভব্যতার সভ্যতার দ্বারে
ক্ষরা ঝোরার ধারে
ভরা দরিয়ার কিনারে
মরা গাঙের পাড়ে
তবু তোরা কাছা খুলে পাছা ভুলে লাফারে
দোয়া আর দাওয়ার দরবারে
দুই দুনিয়ার ভারে
যে রাখে সেই মারে
দুধারী তলোয়ারেজমিজিরেত লণ্ডভণ্ড করে প্রচণ্ড ষাঁড়ে
পরোয়া করে না প্রজা কিবা বাদশারে
কামোন্মত্ত অভিসারে
পুণ্ড্রবর্ধনে বরেন্দ্রে সমতটে রাঢ়েসাঁইজি গান ধরেন মেঘমল্লারে
তিনি খোঁজেন যারে
তারে সাজিয়ে রাখেন মনের মধ্যে মানসের মণিহারেসওয়াল-জবাব
— কতটুকু তুমি তাকে দিতে পারো — যতটুকু দেয়া যায় তার চেয়ে বেশি আরো
— কত দূর তুমি তার সাথে যাবে — যত দূর গিয়ে মন ঠিকানা হারাবে
— কত দিন তুমি কাটাবে কেবল তার নামে — যত দিন চিঠি আসবে অপার্থিব খামে
— কত রাত করবে তুমি মৃত্যুকে অবহেলা — যত রাত ঈশ্বরী পাঠাবেন এত্তেলা
— কত কষ্ট সইতে পারবে বলো — যার থই পায়নি এখনো তিনভাগ জলও
— কতটুকু ভালোবাস তুমি তাকে
— এ প্রশ্ন কোরো না আমাকে
অনুভব করতে দাও অলৌকিক বেদনাকেপ্রণতি
শিশু দুটো কাল রাতে কিছুই মুখে দেয়নি
বলেছে, বাবা আসুক
বাবার হাতে খাবে
প্রিয়তম স্বামীর মৃত্যুশোক বুকে নিয়ে
চোখের জলে ভেসে যাওয়া মা
তবু দুধভাতের নলা তুলে ধরেছে
কিন্তু বাচ্চারা তাকিয়ে ছিল সদর দরজার দিকে
কখন বেল বাজবে
কখন বাবা আসবে
ওরা তো জানে না বাবা আর কোনো দিনই ফিরে আসবে না
করোনার মৃত্যুর মিছিল থেকেআমরা তো প্রকৃতির কথা বলি
প্রকৃতির অভিমানের কথা বলি
প্রকৃতির প্রতিশোধের কথাও বলি
প্রকৃতি কি ধূমকেতু ছুটিয়ে উৎসবে মেতেছে মঈনের মৃত্যুতে
জলধারার তরঙ্গমালা কি উছলে উঠেছে উত্তাল নৃত্যে
বনাঞ্চলে কি বেজে উঠেছে বৃক্ষসারির ঐকতান
না, তেমন কিছুই তো ঘটেনি
বরং কালবোশেখি এসে থমকে দাঁড়িয়ে ছিল তাঁর বারান্দায়
জংলার ঝিঁঝিঁ পোকারা ছিল শব্দরহিত
এক লহমায় শুকিয়ে গিয়েছিল আকাশের বুক
কারণ নিসর্গ জানে তার এক সন্তানের নাম মঈনআমরা তো যুদ্ধের সন্ততি
আমাদের জন্ম রণাঙ্গনে
ব্রিটিশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
রাষ্ট্রভাষার দাবীতে মাতৃভাষার পক্ষে যুদ্ধ
স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ
স্বৈরাচারীর বিপক্ষে যুদ্ধ
এবং এখন করোনার প্রতিপক্ষে এক মাথামুন্ডুহীন যুদ্ধসেই যুদ্ধের জীবনবাজি বীর আপনি মঈন
সেই যুদ্ধের শহীদ আপনি হে আর্ত মানবতার
সাহসী সেবক
আপনার প্রতি আমাদের প্রাণের প্রণতি
আপনার মঙ্গলময়তায় কেটে যাক এই দুঃখিনী গ্রহের অমঙ্গলসর্বস্বত্ব: এমআরএল মিডিয়া লিমিটেড
ঢাকা অফিস: মডার্ণ ম্যানসন (১৫ তলা), ৫৩ মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০
ময়মনসিংহ অফিস: হাসনাইন প্লাজা (দ্বিতীয় তলা), ৭ মদন বাবু রোড, ময়মনসিংহ-২২০০
সেলফোন: ০৯৬১১-৬৪৫২১৫, ০৯৬৯৭-৪৯৭০৯০
ই-মেইল: jagrota2041@gmail.com
ফোন :
ইমেইল :