, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ অনলাইন সংস্করণ

প্রতিবন্ধকতা জয় করে দুর্গাপুরের সেই লাদেন এসএসসি পাস করল

প্রতিবন্ধকতা জয় করে দুর্গাপুরের সেই লাদেন এসএসসি পাস করল

মাসুদুর রহমান লাদেন

প্রবল ইচ্ছা শক্তি ও আত্মবিশ্বাসের জোরে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে এসএসসি পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েছে নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার নাগেরগাতি গ্রামের মাসুদুর রহমান লাদেন। এ বছর সে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জিপিএ ৩.৬৭ পেয়েছে লাদেন।


জন্ম থেকেই দুটি হাত নেই তার। কিন্তু তারপরও লেখাপড়াসহ সবকিছুতেই এগিয়ে চলেছে এই বিস্ময় বালক। দুটি হাত না থাকলেও ক্রিকেট কিংবা ফুটবলের মতো কঠিন খেলায়ও ভালো খেলছে সে।


শারীরিক প্রতিবন্ধকতা দেখে জন্মের পর তার মাকে প্রতিবেশীরা বলে ছিল গলা টিপে শিশুটিকে মেরে ফেলতে। এরপর প্রতিবেশীরা পরামর্শ দেয় ঢাকা গিয়ে শিশুটিকে নিয়ে ভিক্ষা করতে। তারপর ৭০ হাজার টাকায় শিশুটিকে বিক্রি করে দিতে প্রস্তাব আসে। সব প্রস্তাবই প্রত্যাখ্যান করেন ছয় সন্তানের এই মা।


নিজ সন্তানের বর্ণনা দিতে গিয়ে এভাবেই বলছিলেন নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার বিশেষ সন্তান মাসুদুর রহমান লাদেনের মা হামেদা খাতুন। বর্তমানে ওই সন্তানের পরীক্ষার ফলাফল দেখে মুগ্ধ মা-বা। কিন্তু দারিদ্র্যতার কষাঘাতে সন্তানের মুখ দেখে শঙ্কিত লাদেনের মা-বা।


মাসুদুর রহমান লাদেনের বাবা সাহেব আলী জানান, প্রাইভেট পড়ানোর ক্ষমতা না থাকায় নিজে নিজেই পড়াশোনা করেছে লাদেন। সে মেট্রিক পরীক্ষায় পাস করেছে। আমার জীবনে এর চেয়ে আনন্দের কিছু নেই। আমার অর্থ-সম্পদ ক্ষমতা কোনোটাই নেই।আমার ছেলেকে যদি কেউ অর্থনৈতিক সহযোগিতা করত তাহলে সে অনেক দূর যেতে পারত।


লাদেনের বন্ধুরা জানায়, হাত না থাকার বিষয়টি জীবনের কোনো কাজে লাদেনকে পিছিয়ে রাখতে পারেনি! অন্য ছেলে-মেয়েদের মতোই সেও খেলাধুলাসহ সব প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে। এ ছাড়া ব্যক্তিগত জীবনের দৈনন্দিন কাজগুলো সারছে কারো কোনো সহযোগিতা ছাড়াই! খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে প্রাকৃতিক কাজগুলোও একাই সারতে পারে। হাত না থাকার বিষয়টিকে লাদেন কোনো প্রতিবন্ধকতা বলেই মনে করে না। এ জন্য তার মনে বিন্দুমাত্র দুঃখও নেই।


নবারুণ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অশোক কুমার ভাদুরী জানান, জন্ম থেকেই লাদেনের দুটি হাত নেই। তবুও সবার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লেখাপড়া করেছে সে। শুধু তাই নয়- ক্রিকেট, ফুটবলসহ বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ খেলাও খেলতে পারে লাদেন। পড়াশোনায়ও খুব ভালো সে। কিন্তু তার বাবা খুব দরিদ্র মানুষ। তাকে পড়াশোনা করাতেই হিমশিম খাচ্ছে। সরকার বা সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এলে এই ছেলে একদিন দেশে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারবে।


মাসুদুর রহমান লাদেন জানায়, জন্ম থেকেই নিজের শারীরিক অক্ষমতাকে শক্তিতে রূপান্তর করে জীবনের পথে এগিয়ে যাচ্ছি আমি। বড় হয়ে কোনো ফুটবল ক্লাবে প্রতিবন্ধী কোটায় খেলার স্বপ্ন দেখি।


দুর্গাপুর সমাজসেবা কর্মকর্তা মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম জানান, খোঁজ পেয়ে তাকে প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়া হচ্ছে জানিয়ে এই পরিবারকে সুদমুক্ত ব্যাংক ঋণসহ সব ধরনের সুবিধা দেয়া হবে।

  • সর্বশেষ - মহানগর