, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ অনলাইন সংস্করণ

সার্টিফিকেট দেয়া নয়, আমাদের প্রয়োজন যুগোপযোগী শিক্ষা : রাষ্ট্রপতি

  নিজস্ব প্রতিবেদক

  প্রকাশ : 

সার্টিফিকেট দেয়া নয়, আমাদের প্রয়োজন যুগোপযোগী শিক্ষা : রাষ্ট্রপতি

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, সার্টিফিকেট দেয়া এবং শিক্ষার প্রসারই শেষ কথা নয়। আমাদের প্রয়োজন যুগোপযোগী শিক্ষা। বর্তমানে প্রতিনিয়ত যুগে তাল মিলিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তিত হচ্ছে। কাজেই আমাদেরও বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। বাস্তবভিত্তিক এবং প্রায়োগিক শিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে। গুণগত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার সঙ্গে ল্যাবরেটরির ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি গবেষণা ও হাতে-কলমে শিক্ষার মাধ্যমে প্রকৃত শিক্ষা অর্জিত হয়। এ জন্য গবেষণা ও ল্যাবরেটরি কর্মের ওপর অধিক মনোনিবেশ করা জরুরি।

রোববার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) পঞ্চম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়টির কেন্দ্রীয় মাঠে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

নিত্যনতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবনে মনোনিবেশ করার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মাথায় রেখে ন্যানো টেকনোলোজি, রোবোটিক্স, ব্লক চেইন ম্যানেজমেন্ট, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মতো বিষয়গুলোকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাই উদ্যোগী হবেন বলে আমার বিশ্বাস। প্রযুক্তি উন্নয়নের বাহন। প্রযুক্তি উদ্ভাবনে সবাইকে মনোনিবেশ করতে হবে। অন্যের অনুকরণ নয় বরং আমাদের যাতে অন্যরা অনুকরণ করতে পারে, সে লক্ষ্যে উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে।

গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. আবদুল হামিদ বলেন, আমি তোমাদের গুরুজন হিসেবে বলতে চাই, উচ্চশিক্ষা শেষে শুধু একটা ভালো চাকরি পাওয়াই জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য হতে পারে না। শিক্ষার উদ্দেশ্য হচ্ছে নিজে শিক্ষিত হওয়া ও অন্যকে শিক্ষিত করা এবং বৃহৎ মানবতার কল্যাণ করা। তাই ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে মানবসত্তা দিয়ে দেশকে আলোকিত করবে, বিশ্বকেও সে আলোর আভায় রাঙিয়ে তুলবে।
 
তিনি আরো বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ও আহ্বানে ১৯৭১ সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা এ স্বাধীনতা অর্জন করি। বঙ্গবন্ধু সবসময় রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি একটি সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতেন । তাইতো, তিনি স্বাধীনতার পর পরই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনীতি পুনর্গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন । তাঁর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে বর্তমান সরকার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ আজ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। সকল ক্ষেত্রে উন্নয়নের পাশাপাশি বৃহৎ প্রকল্প পদ্মা সেতু , মেট্রোরেলসহ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলেছে।
 
রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট - ১ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে আজ আমরা মহাকাশেও নিজেদের উপস্থিতি জানান দিয়েছি । আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত । এই যে আমাদের সামনে বিশাল কর্মযজ্ঞ , তা বাস্তবায়নে দক্ষ প্রকৌশলীর প্রয়োজন । অবকাঠামো থেকে শুরু করে শিল্প-কলকারখানা, বিদ্যুৎ, টেলিযোগাযোগ , মেরিন , তথ্যপ্রযুক্তি , মহাকাশ গবেষণা প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রকৌশলীদের ভূমিকা অনন্য। বাংলাদেশ ২০৪১ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার যে মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে তা বাস্তবায়নে প্রধান কারিগর হচ্ছে প্রকৌশলীরা ।
 
এর আগে দুপুর আড়াইটায় সমাবর্তন শোভাযাত্রা সহকারে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করেন রাষ্ট্রপতি। সেখানে জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও পবিত্র ধর্মগ্রন্থগুলো থেকে পাঠের পর রাষ্ট্রপতি সমাবর্তন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। পরে ডিগ্রি উপস্থাপন ও দেওয়া পর্ব, পিএইচডি ডিগ্রিপ্রাপ্তদের সনদপত্র দেওয়া, বিশেষ অতিথির বক্তব্য, সমাবর্তন বক্তার বক্তব্য ও সমাবর্তন স্মারক দেয়া শেষ হয়। এরপর রাষ্ট্রপতি ভাষণ শুরু করেন।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল আলম শেখ। এবারের সমাবর্তন বক্তা ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়াটেক অ্যাডভান্সড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. সাইফুর রহমান। বিশ্ববিদ্যালয়টির পঞ্চম সমাবর্তনে অংশ নিতে দুই হাজার ৫৮৬ জন গ্র্যাজুয়েট নিবন্ধন করেন। এর মধ্যে দুই হাজার ৫১৬ জন স্নাতক ডিগ্রিধারী এবং ৭০ জন পিএইচডি গবেষকসহ স্নাতকোত্তর সমাপ্ত করা ইঞ্জিনিয়ার।

  • সর্বশেষ - অন্যান্য