, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ অনলাইন সংস্করণ

করোনা আক্রান্ত হওয়ায় বাড়ি ছাড়তে হল এসিল্যান্ডকে

করোনা আক্রান্ত হওয়ায় বাড়ি ছাড়তে হল এসিল্যান্ডকে

করোনা আক্রান্ত হয়ে বাড়িতে চিকিৎসা নেয়ায় ভাড়া বাড়ি ছাড়তে হল জামালপুর সদর উপজেলার এসিল্যান্ড মাহমুদা বেগমকে।ঘরে ৮ মাসের কন্যা শিশুসহ ৪ বছর বয়সী জমজ ছেলে-মেয়েদের মায়া ত্যাগ করে মানবতার টানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে ছুটেছেন এসিল্যান্ড মাহমুদা বেগম।


করোনা সংক্রামণ প্রতিরোধে কাজ করতে গিয়ে নিজেই করোনা আক্রান্ত হয়ে ভাড়া বাড়িতে হোম আইসোলেশনে চিকিৎসা নেয়ায় বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন এই করোনা যুদ্ধা। শুক্রবার বাড়ি ছেড়েছেন তিনি।


জানা গেছে, জামালপুর সদর ভূমি অফিসের এসিল্যান্ড মাহমুদা বেগম যোগদান করেন চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারিতে। তিনি যোগদানের কিছুদিন পরই বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ শুরু হয়। ৮ মাস বয়সী কন্যা শিশু মাহনুর মাশিয়াত ফালাক্ক, চার বছর বয়সী জমজ ছেলে তাহমিদ তাজওয়ার ও মেয়ে মুশাররাত ই উলফাত নামে তিন সন্তানকে ঘরে রেখে করোনার সংক্রমণ থেকে মানুষকে বাঁচাতে বেরিয়ে পড়েন।


তিনি করোনা বিস্তাররোধে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণ, গণসচেতনা সৃষ্টি, অসহায় ও সংকটাপন্ন মানুষের ঘরে ঘরে মানবিক সহায়তা ও ত্রাণ পৌঁছে দেয়া, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারদর নিয়ন্ত্রণ, মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ বহুমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছেন।


রাতে-দিনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন মাঠে-ঘাটে গ্রামে-গ্রামে। ঘর-সংসার-সন্তান জীবনের মায়া ত্যাগ করে করোনা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তিনি। তার সাহসী ভূমিকা ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করায় ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে অভিনন্দন বার্তায় অভিনন্দিত হয়েছেন।


যুদ্ধরত অবস্থায় ২ মার্চ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন মাহমুদা বেগম। সেদিন থেকে ১৫ মে পর্যন্ত হোম আইসোলেশন ১৫ থেকে ২৯ তারিখ পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টিনে থেকে চিকিৎসা নেন শহরের দেওয়ানপাড়া ভাড়া বাসায়। করোনা আক্রান্ত হয়ে ওই বাসায় হোম কোয়ারেন্টিনে থাকাটা ভালোভাবে নেননি বাড়ির মালিক আকলিমা খাতুনসহ ফ্লাটের অন্য ভাড়াটিয়ারা।


বাইর থেকে এসে ফ্ল্যাটে রোজকার দুধ দেয়া নিয়ে বাড়ির মালিকের ভাতিজা নিষেধ করে। এই নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। তাকে বাড়ি থেকে বের করার সুযোগ খুঁজতে থাকে বাড়ির মালিক। তাকে ফোনে নানা কথা বলে উত্তেজিত করে কল রেকর্ড করে তুচ্ছ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেন।


সাহসিকতার সহিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করেন রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধ বালু মহলের বালু উত্তোলন বন্ধ, বালু জব্দসহ নানা অনিয়মে বিরুদ্ধে। তিনি যোগদানের পর থেকে সদর ভূমি অফিসে ভূমি সংক্রান্ত অনৈতিক সুবিধা আদায় করতে না পেরে ভূমিদস্যুরাও ক্ষেপে যান তার বিরুদ্ধে।


বালু লুটেরা ও ভূমি দস্যুরা বাড়ির মালিকের ভাতিজার সঙ্গে হাত মিলিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন এই সাহসী ও মানবিক মানুষটিকে থামিয়ে দেয়ার জন্য। নানামুখি চক্রান্ত চলছে তার বিরুদ্ধে। একাধিক সূত্র ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে এ সব তথ্য পাওয়া গেছে।


এ বিষয়ে সদর উপজেলা ভূমি অফিসের এসিল্যান্ড মাহমুদা বেগম বলেন, ভাড়া বাড়িতে হোম কোয়ারেন্টিনে থেকে চিকিৎসা নেয়াই ছিল আমার অপরাধ। সুবিধালোভিদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট অবৈধ কার্যক্রমে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে আইন প্রয়োগ করায় এই কুচক্রীরা সম্মিলিত হয়ে হুমকি দেয়ার নামে আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করে। আমাকে বিব্রত অবস্থায় ফেলে ভাড়া বাসা ছাড়তে বাধ্য করেছে। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ আনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।


  • সর্বশেষ - মহানগর