, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ অনলাইন সংস্করণ

করোনার শঙ্কা নিয়েই তাজমহল ভ্রমণ

  ভ্রমন ডেস্ক

  প্রকাশ : 

করোনার শঙ্কা নিয়েই তাজমহল ভ্রমণ

রিয়াদ তালুকদার

বিস্ময়ে হতবাক হয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখলাম ভালোবাসার অমর কীর্তি। যার কোনো উপমা নেই, উৎপ্রেক্ষা নেই, নেই চিত্রকল্প। যার খ্যাতি শুধু বিশ্বজোড়া। বলছিলাম ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে এ বছর মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে চেন্নাই, দিল্লি ও আগ্রা পরিদর্শনের কথা। বাংলাদেশের ২০ জন সাংবাদিকের একটি প্রতিনিধি দল এ ভ্রমণে অংশগ্রহণ করে।


দিল্লির হোটেল থেকে যখন আগ্রার উদ্দেশে রওনা দেওয়া হয়, সে সময়ে অনেকের মনে শঙ্কা। উত্তরপ্রদেশে এরই মধ্যে শনাক্ত হয়েছে করোনা রোগী। কিন্তু তারপরও করোনার শঙ্কা মাথায় নিয়েই বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলটি আগ্রা পৌঁছায়। দিল্লি থেকে সকালে রওনা দিয়ে প্রতিনিধি দলটি আগ্রা পৌঁছায় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে।


পৌঁছানোর পর বাস থেকে নামার সাথে সাথে আগ্রার সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা সবাইকে বরণ করে নেয়। পরিচিতি পর্ব শেষ করে সবাই তাজমহলে ঢুকে পড়লাম। একটি কথা বলে রাখি, আমার এটি তৃতীয়বারের মতো তাজমহল পরিদর্শন। এর আগে দু’বার যাওয়া হলেও তখন বিপুল লোকজনের আনাগোনা ছিল। তবে এখন যে করোনার আতঙ্ক লোকজনকে পেয়ে বসেছিল, তা প্রতীয়মান হয় তাজমহলের গেটের সামনে গিয়ে। দু’একজন করে কিছুটা মলিন মুখ নিয়ে ঢুকছেন তাজমহল পরিদর্শনে।


আমাদের প্রতিনিধি দলটি এক এক করে তাজমহলের নিরাপত্তার ধাপ পেরিয়ে ঢুকে পড়ল তাজমহলের সীমানায়। এর আগে দু’বার যখন গিয়েছিলাম, বিশাল লাইন পেরিয়ে অনেক অপেক্ষার পর ঢুকতে হয়েছিল তাজমহলে। এবার ছিল ঠিক তার উল্টো, যেন এক জনমানবশূন্য এলাকা। তাজমহলের প্রধান গেটটি যখন পার হলাম; ঠিক তখন আমাদের মনেও কিছুটা আতঙ্ক বিরাজ করতে লাগলো। কারণ যে তাজমহল দেখতে এসে লোকজন পা ফেলতে পারত না; সেখানে যারা রয়েছেন, তারা সংখ্যায় অনেক কম।


সংবাদকর্মী হিসেবে বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরাই আমাদের কাজ। তাই তো কয়েকজন ভারতীয় এবং বিদেশিদের সাথে কথা বলে করোনা আতঙ্কের বিষয়টি টের পাচ্ছিলাম। প্রথমবারের মতো যারা এসেছেন, তারা অনেকটাই তাজমহল দেখেছিলেন অভিভূত হয়ে। কিন্তু তাদের চোখে-মুখে ছিল সেই করোনা আতঙ্ক। যে যেভাবে পেরেছেন সেই সময়টির বর্ণনা দিয়েছেন ফ্রেমবন্দি ক্যামেরায়। অনেকেই ছিলেন রোমাঞ্চিত। প্রিয়জনকে সাথে নিয়ে এসেছিলেন ভালোবাসার একমাত্র নিদর্শন তাজমহলে।


আরেকটি কথা বলে রাখি, এটি তৃতীয়বারের মতো তাজমহল দেখা হলেও মনে হয়েছে যেন প্রথমবারের মতো দেখছি। পরিচয় থেকে পরিণয় পর্ব চুকিয়ে ২০১৬ সালে স্ত্রীকে নিয়ে প্রথম দর্শন তাজমহলে। তারপর ২০১৯ সালে ভারত সরকারের আয়োজনে ইয়ুথ ডেলিগেশন টিমের সদস্য হিসেবে। ২০২০ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে সাংবাদিক প্রতিনিধি হিসেবে তৃতীয়বারের মতো তাজমহল দর্শনের সুযোগ হয় আমার। প্রতিবার তাজমহল দর্শনে ছিল ভিন্ন আমেজ। ২০১৯ ও ২০২০ সালে ভারতের রাষ্ট্রীয় দুটি অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার সুবাদে অনেকটা পরিচিত হিসেবে সেখানে ঘুরে দেখা হয়। দেখা হয় ভালোবাসার নিদর্শন সম্রাট শাহজাহান ও তার স্ত্রী মমতাজ বেগমের সমাধি।

jagonews24

প্রতিবছর বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকরা শুধু তাজমহল দেখতেই ছুটে আসেন। কেউ প্রিয়জনকে সাথে নিয়ে, কেউ বাবা-মাকে সাথে নিয়ে, কেউ বা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আনন্দঘন সময় কাটিয়ে যান। তাজমহলে বছরে ২-৩ মিলিয়ন পর্যটক আসে, যার মধ্যে দুই লাখ পর্যটক বিদেশি। এটি ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। বর্তমানে তাজমহলকে সরকারি তত্ত্বাবধানে সুরক্ষিত রাখা হয়েছে। ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো তাজমহলকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে ভালোবাসার এত বড় নিদর্শন কেউ তৈরি করে দেখাতে পারেননি। ভাবতেই যেন অবাক লাগে, যমুনার পাড়ে ২০ হাজার শ্রমিক ২২ বছর সময় নিয়ে তাদের নিপুণ হাতে এ মহাকীর্তি নির্মাণ করেছেন।


এর আগে ১৯৭৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় বন্ধ রাখা হয় তাজমহলের প্রবেশদ্বার। পরবর্তীতে ভয়াবহ বন্যার কারণে ১৯৭৮ সালে কিছু দিন বন্ধ থাকে। সবশেষ ২০২০ সালের ১৭ মার্চ করোনা মহামারীর কারণে বন্ধ রাখা হয়। শুধু তাজমহল নয়, করোনা মহামারীর জন্য পর্যটন খাতে ভাটা পড়েছে বিভিন্ন দেশে।


করোনা মহামারী কাটিয়ে পর্যটক মুখর হয়ে উঠবে তাজমহল, সেই প্রত্যাশায় রয়েছেন ভ্রমণপিপাসুরা। কেটে যাক সব শঙ্কা, ভরে উঠুক মানবিক নতুন বিশ্ব। বিশেষ সময়টিতে ভারত সফর শেষ করে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা অনুযায়ী ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইন শেষ করে যোগ দেই কর্মস্থলে।

লেখক: স্টাফ রিপোর্টার, বাংলাভিশন।

  • সর্বশেষ - ভ্রমণ