2024-04-24 03:14:30 pm

আগুনে পুড়ল ঘর

www.focusbd24.com

আগুনে পুড়ল ঘর

০২ ডিসেম্বার ২০১৯, ১৬:৩৮ মিঃ

আগুনে পুড়ল ঘর

তখন কলেজে পড়ি।

চৈত্র মাসের দুপুর। প্রচণ্ড দাবদাহ। বাতাসের লেশমাত্র না থাকায় গরমের তীব্রতাও যেন বেশি। মধ্যদুপুরে সিঁড়ির ওপর এসে দাঁড়িয়েছি। আমাদের বাড়ির চারদিকে অনেক নারকেলগাছ। আমি গাছের মাথার দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম। গরমটা অসহ্য হলেও আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে একেবারে খারাপ লাগছিল না।

আমাদের বাড়ির ওপর দিয়ে বৈদ্যুতিক সংযোগের তার গেছে। তারের ওপরের আবরণ নষ্ট হয়ে বেশ আগেই খুলে পড়ে গেছে। ফলে এটা বেশ বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। হঠাৎ খেয়াল করলাম, নারকেলগাছ থেকে পাতাসমেত একটা শুকনো শাখা ওপরের তারে এসে পড়ল। ফলে ওপরের তারটা এসে নিচের তারের সঙ্গে ক্ষণিকের জন্য একটা ঘর্ষণ সৃষ্টি করল। মুহূর্তেই একটা আগুনের ফুলকি এসে পড়ল আমাদের রান্নাঘরের পাশে রাখা পাটকাঠির ওপর। ওখানে বেশ কয়েক দিন আগে পাটকাঠি শুকাতে দেওয়া ছিল। সেগুলো তখন একেবারে শুকনা। মুহূর্তেই দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে উঠল। রান্নাঘরে ছড়িয়ে পড়ল। পুরো ঘটনাটা একেবারে আমার চোখের সামনে ঘটল কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে! আমি বিস্ময়ে একেবারে হতবাক। চিৎকার করতে গিয়ে খেয়াল করলাম, আমার গলা দিয়ে কোনো শব্দই বের হচ্ছে না!

কতক্ষণ বোকার মতো দাঁড়িয়ে ছিলাম, বলতে পারব না। তবে একসময় ঠিকই চেতনা ফিরে পেলাম এবং আমার প্রথমেই মায়ের কথা মনে হলো। মা রান্নাঘরের পাশেই মেহগনিগাছের ছায়ায় বসে কাঁথা সেলাই করছিলেন। এত কিছু ঘটে গেলেও মা এর কিছুই খেয়াল করেননি। আমি প্রথমেই তাঁকে চিৎকার দিয়ে আগুনের কথা বললাম। তারপর খেয়াল হলো, আগে মেইন সুইচটা বন্ধ করতে হবে। দ্রুত ঘরে ঢুকে সুইচ বন্ধ করে দিলাম। মা কাঁথা সেলাই করা থেকে উঠে চিৎকার জুড়ে দিলেন। আমিও বাড়ির অন্যদিকে, পুকুরপাড়ে গিয়ে ‘আগুন, আগুন...’ বলে চিৎকার শুরু করে দিলাম।

গরমের দিন এবং দুপুরের সময় হওয়াতে পাড়ার অধিকাংশ লোক বাড়িতে ছিলেন। ফলে তাঁরা আমাদের চিৎকার শুনে দ্রুত ছুটে এলেন। আমি পুকুরে নেমে বালতিতে পানি নিয়ে আগুন লক্ষ্য করে ছুড়ে দিতে লাগলাম। হাতের কাছে যে যা পেলেন তাই নিয়েই আগুন নেভাতে লেগে গেলেন। রান্নাঘরের দুই পাশে ছিল দুটি বড় ঘর। ওখানে একবার আগুন লেগে গেলে আর থামানোর উপায় থাকবে না; একেবারে সবকিছু শেষ হয়ে যাবে। তাই কয়েকজন মিলে কলাগাছ কেটে এনে রান্নাঘরের ওপরে ফেলে যেদিকে ফাঁকা জায়গা ছিল সেদিকে ঠেলে দিলেন। ফলে মূল ঘরে আর আগুন লাগতে পারল না।

পাড়ার সব মানুষের চেষ্টায় আগুন একসময় নেভানো গেল বটে; কিন্তু ঘরের কিছুই আর অবশিষ্ট রইল না। পুরো ঘরটা পুড়ে একেবারে ছাই হয়ে গেল। আমি তখনো ভয়ে কাঁপছি। চোখের সামনে এমন ঘটনা ঘটে গেলে উত্তেজনা তৈরি হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। পুড়ে যাওয়া ঘরের দিকে তাকিয়ে মা বিলাপ করতে লাগলেন। আমি তাঁকে সান্ত্বনা দিলাম। আগুনে একটা রান্নাঘর পুড়ে গেলেও তেমন বড় কোনো ক্ষতি হয়নি সেদিন। আমাদের পাড়ার সব লোক সেদিন আমাদের পাশা এসে দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁরা না থাকলে হয়তো বড় রকমের বিপদ হলেও হতে পারত।


উপদেষ্টা সম্পাদক: ডি. মজুমদার
সম্পাদক: মীর আক্তারুজ্জামান

সর্বস্বত্ব: এমআরএল মিডিয়া লিমিটেড
ঢাকা অফিস: মডার্ণ ম্যানসন (১৫ তলা), ৫৩ মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০
ময়মনসিংহ অফিস: হাসনাইন প্লাজা (দ্বিতীয় তলা), ৭ মদন বাবু রোড, ময়মনসিংহ-২২০০
সেলফোন: ০৯৬১১-৬৪৫২১৫, ০৯৬৯৭-৪৯৭০৯০ ই-মেইল: jagrota2041@gmail.com
ফোন :
ইমেইল :