2024-04-27 08:14:54 am

পাঁচ কারণে সালমানের সুইসাইড

www.focusbd24.com

পাঁচ কারণে সালমানের সুইসাইড

২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২০, ০৭:৫২ মিঃ

পাঁচ কারণে সালমানের সুইসাইড

চিত্রনায়ক সালমান শাহ (চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন) সুইসাইড করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তাদের দীর্ঘ তদন্তে হত্যার অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি। আজ (মঙ্গলবার) আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে যাচ্ছে পিবিআই। এ প্রতিবেদনে চিত্রনায়িকা শাবনূরসহ সুইসাইডের পাঁচ কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। তবে পিবিআইর এ প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন সালমানের মা মোসাম্মৎ নিলুফার জামান চৌধুরী ওরফে নীলা চৌধুরী। এদিকে শাবনূর বলেছেন, সালমানের সঙ্গে তার ভাই-বোনের সম্পর্ক ছিল।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘চিত্রনায়িকা শাবনূরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে পারিবারিক কলহ আর স্ত্রী সামিরার কারণে মা নীলা চৌধুরীকে ছেড়ে দূরে থাকার মানসিক যন্ত্রণায় ভুগেই অভিমানী সালমান শাহ আত্মহত্যার পথ বেছে নেন বলে আমাদের মনে হয়েছে।’

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ইস্কাটন রোডে নিজের বাসা থেকে সালমান শাহর লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনাটিকে আত্মহত্যা ধরে ওই সময় রমনা থানায় অপমৃত্যু মামলা হলে তাতে আপত্তি জানায় তার পরিবার। ’৯৭ সালে সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদনে ঘটনাটিকে ‘আত্মহত্যা’ এবং ২০১৪ সালে বিচার বিভাগীয় তদন্তে ‘অপমৃত্যু’ বলা হয়। সালমানের মা নীলা চৌধুরী সেসব প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করলে তদন্তভার আসে পিবিআইর হাতে। তৃতীয় দফার দীর্ঘ তদন্তেও সালমানকে হত্যার অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি। সালমান একাধিকবার আত্মঘাতী হওয়ার বা আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছিলেন, যা পিবিআইর তদন্তে উঠে এসেছে।

২০১৬ সালের ২০ ডিসেম্বর পিবিআই তদন্তের দায়িত্ব নেওয়ার পর সালমানের স্ত্রী সামিরাসহ ৪৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তাদের মধ্যে ১০ জন আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ছাড়া রয়েছে আরও কয়েকজনের সাক্ষ্য। নতুন করে আলামত হিসেবে একটি সিলিং ফ্যান জব্দ করা হয়েছে। ধারণা করা হয়, ওই ফ্যানের সঙ্গে রশি বেঁধে আত্মহত্যা করেছেন সালমান। আগের দুই দফা ময়নাতদন্তে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য নিয়ে, তদন্তকালে সবার সাক্ষ্য বিবেচনা করে পিবিআই এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে। তাকে হত্যা করা হয়েছে- এমন কোনো প্রমাণ তদন্তে পাওয়া যায়নি। তদন্তের ভিত্তিতে পিবিআই ৬০০ পৃষ্ঠার ডকেট তৈরি করেছে।

সালমানের বাসায় রান্নার কাজ করা মনোয়ারা বেগমের জবানবন্দির বরাতে পিবিআই-প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘সালমান তার স্ত্রী সামিরা ও শাবনূর দুজনকেই খুব ভালোবাসতেন। তিনি শাবনূরকেও বিয়ে করে দুই স্ত্রী নিয়ে সংসার করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সামিরা সতিনের সংসার করতে রাজি হননি।’

পিবিআই এ মামলার তদন্ত করতে গিয়ে সালমান শাহর মা বর্তমান বাদী নীলা চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। সাক্ষী হিসেবে হুমায়ুন কবির, আবদুস সালাম, দেলোয়ার হোসেন শিকদার, আবদুল খালেক হাওলাদার, বাদল খন্দকার (চলচ্চিত্র পরিচালক), শাহ আলম কিরণ (চলচ্চিত্র পরিচালক), মুশফিকুর রহমান গুলজার (চলচ্চিত্র পরিচালক), এস এম আলোক সিকদার ও হারুন আর রশিদকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

এরই মধ্যে সালমান শাহকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ‘বিউটিশিয়ান’ রাবেয়া সুলতানা রুবি ২০১৭ সালে ফেসবুকে এক ভিডিওতে বলেন, ‘আত্মহত্যা নয়, হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিলেন সালমান শাহ এবং তা করিয়েছিল তারই স্ত্রী সামিরা হকের পরিবার।’ এ নিয়ে তুমুল আলোচনা শুরুর পর আবার নিজের ওই বক্তব্য অস্বীকার করেছিলেন ওই নারী। তবে সালমান শাহর পরিবার হত্যার অভিযোগ নিয়ে বরাবরই অনড় ছিল।

সালমান শাহ মৃত্যুর পাঁচ কারণ : সালমান শাহ ও চিত্রনায়িকা শাবনূরের অতিরিক্ত অন্তরঙ্গতা; স্ত্রী সামিরার সঙ্গে দাম্পত্য কলহ; মাত্রাধিক আবেগপ্রবণতা (এ কারণে আগেও একাধিকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেন); মায়ের প্রতি অসীম ভালোবাসা ও জটিল সম্পর্কের বেড়াজালে পড়ে পুঞ্জীভূত অভিমান এবং সন্তান না হওয়ায় দাম্পত্য জীবনে অপূর্ণতা।

মা নীলা চৌধুরীর প্রত্যাখ্যান : পিবিআইর তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী বলেছেন, শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা হচ্ছে। পিবিআইর প্রতিবেদনকে মিথ্যা বলে দাবি করেছেন তিনি। পাশাপাশি তিনি ফের উচ্চ আদালতে যাবেন বলেও ঘোষণা দিয়েছেন। তবে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন সালমানের শ্বশুর শফিকুল হক হীরা। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সালমানের মৃত্যুর ক্ষোভ পড়েছে সামিরা ও তার পরিবারের ওপর। পিবিআইর এ তদন্তের মাধ্যমে সে অভিযোগের অবসান হলো। এদিকে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার এ ঘটনা থেকে তরুণ প্রজন্মকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

শাবনূর বললেন, সম্পর্ক ছিল ভাই-বোনের : পিবিআই তদন্ত তুলে ধরার পরপরই অস্ট্রেলিয়ায় থাকা শাবনূর সাংবাদিকদের বলেন, ‘একজন মৃত মানুষকে নিয়ে এত বছর পর এত বিশ্রী কথা বলার মনমানসিকতা কীভাবে সবার হয়, তা আমি বুঝি না। সালমান শুধুই আমার নায়ক ছিল, সহশিল্পী ছিল, বন্ধু ছিল, এর বাইরে আর কোনো সম্পর্ক ছিল না। আমি আগেও বলেছি, তাকে আমি ভাইয়ের মতো শ্রদ্ধা করতাম। তার সঙ্গে আমার ভাই-বোনের সম্পর্ক ছিল। অন্য রকম পরিচ্ছন্ন সম্পর্ক ছিল। এটা নিয়ে এখন কেউ কিছু বললে তা তো আমি মানবই না।’

শাবনূর বলেন, ‘আমি তখন অবিবাহিত একটা মেয়ে। সালমান তো বিবাহিত। ওর স্ত্রীর সঙ্গেও আমার একটা ভালো সম্পর্ক ছিল। সালমানের স্ত্রী সব সময় আমাদের সঙ্গেই থাকত। প্রেমের সম্পর্কের কিছু একটা যদি হতো, এটা তখন সবাই বুঝতে পারত। এত বছর পর এ ব্যাপারটা নিয়ে আমাকে জড়িয়ে নোংরা উক্তি করা মোটেও ভালো লাগছে না। কিছু মানুষ আমাকে জড়িয়ে গুজব ছড়িয়েছে। এখনো ছড়াচ্ছে। আমি তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। কীসের জন্য আমার নাম জড়ানো হচ্ছে!’

পিবিআইর প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান পরিবারের : বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেতা সালমান শাহ খুন হননি, পারিবারিক কলহের জেরে তিনি আত্মহত্যা করেছেন- তদন্ত প্রতিবেদনে এমন কথাই তুলে ধরেছে পিবিআই। কিন্তু পিবিআইর এ প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সালমান শাহর পরিবার। একই সঙ্গে সালমানের ভক্তদের নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সালমানের মামা আলমগীর কুমকুম। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘সালমান শাহকে হত্যা করা হয়েছে এটি দিবালোকের মতো পরিষ্কার। খুনিরা খুনের পর প্রমাণ রাখতে চায় না। কিন্তু সালমানকে খুন করা হয়েছে এমন আলামতের অভাব নেই। যে ফ্যানে ঝুলে সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছে বলে বলা হচ্ছে, সে ফ্যানে এ রকম কোনো আলামত ছিল না। ঝুলন্ত লাশ কে কীভাবে নামিয়ে আনল এরও কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই।’

আলমগীর কুমকুম বলেন, ‘পিবিআই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করলেও সালমানের পরিবারের কাউকে এ ব্যাপারে জানানো হয়নি। দুনিয়ার বিচার শেষ নয়। আল্লাহর বিচারে কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণের প্রয়োজন হয় না। দুনিয়ায় বিচার না পেলেও আখিরাতে এ হত্যাকান্ডের বিচার অবশ্যই পাবে সালমানের পরিবার। ইতিমধ্যে আইনজীবীর সঙ্গে কথা হয়েছে বলে জানান তিনি।

ইমন থেকে সালমান শাহ : মাত্র সাড়ে পাঁচ বছরের চলচ্চিত্রজীবনে ২৭টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করা সালমান শাহ ঢাকাই সিনেমার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন। নব্বইয়ের দশকে যারা বয়সে ছিলেন কিশোর-তরুণ, তাদের অনেকের হৃদয়েই সালমান শাহ বাংলাদেশের ‘সেরা রোমান্টিক অভিনেতা’ হয়ে থাকবেন। রুপালি পর্দার সালমান শাহর আনুষ্ঠানিক নাম চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন। সিলেটের জকিগঞ্জে নানাবাড়িতে ১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর তার জন্ম। কমর উদ্দিন চৌধুরী ও নীলা চৌধুরীর বড় ছেলে ছিলেন তিনি।

আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ড. মালেকা সায়েন্স ইনস্টিটিউট থেকে গ্র্যাজুয়েশন করা ইমন ১৯৯২ সালে বিয়ে করেন সাবেক ক্রিকেটার শফিকুল হক হীরার মেয়ে সামিরাকে। তখন সালমানের বয়স ২২ বছর। সামিরার মায়ের ছিল বিউটি পারলারের ব্যবসা। মঈনুল আহসান সাবেরের লেখা ধারাবাহিক নাটক ‘পাথর সময়’-এর একটি চরিত্র দিয়ে ইমনের অভিনয় ক্যারিয়ার শুরু।

১৯৯৩ সালে তিনি রুপালি পর্দায় আবির্ভূত হন সালমান শাহ নামে। সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমায় সালমান শাহর পাশাপাশি মৌসুমীরও অভিষেক হয়। প্রথম সিনেমাতেই বাজিমাত করেন তারা। শহুরে আধুনিক শিক্ষিত তরুণের ইমেজ দিয়ে দর্শকদের মন জিতে নেওয়া সালমানের অধিকাংশ সিনেমা ব্যবসাসফল হওয়ায় নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি তার চাহিদা ছিল তুঙ্গে। ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘দেনমোহর’, ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, ‘তোমাকে চাই’, ‘বিচার হবে’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘প্রেমযুদ্ধ’, ‘এই ঘর এই সংসার’, ‘সত্যের মৃত্যু নাই’, ‘মায়ের অধিকার’, ‘আশা ভালোবাসা’সহ সালমান অভিনীত সিনেমাগুলো মধ্যবিত্ত দর্শককে হলে ফেরায়। মৌসুমীর পাশাপাশি শাবনাজ, লিমা, শিল্পী, বৃষ্টির বিপরীতে বিভিন্ন সিনেমায় দেখা গেছে সালমান শাহকে। তবে শাবনূরের সঙ্গেই তার রসায়ন সবচেয়ে বেশি দর্শকপ্রিয় হয়। এ জুটির ১৪টি সিনেমাই বক্স অফিসে দারুণ সাফল্য পায়।


উপদেষ্টা সম্পাদক: ডি. মজুমদার
সম্পাদক: মীর আক্তারুজ্জামান

সর্বস্বত্ব: এমআরএল মিডিয়া লিমিটেড
ঢাকা অফিস: মডার্ণ ম্যানসন (১৫ তলা), ৫৩ মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০
ময়মনসিংহ অফিস: হাসনাইন প্লাজা (দ্বিতীয় তলা), ৭ মদন বাবু রোড, ময়মনসিংহ-২২০০
সেলফোন: ০৯৬১১-৬৪৫২১৫, ০৯৬৯৭-৪৯৭০৯০ ই-মেইল: jagrota2041@gmail.com
ফোন :
ইমেইল :