, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ অনলাইন সংস্করণ

এলাকার কৃষকদের কাছে আব্দুর রহমান এখন ‘আইডল’

এলাকার কৃষকদের কাছে আব্দুর রহমান এখন ‘আইডল’
লতি চাষি আব্দুর রহমান

২০ বছর ধরে কচুরলতির ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আব্দুর রহমান। খুচরা বিক্রির পাশাপাশি লতির চাহিদা বাড়ায় বর্তমানে পাইকারি লতি বিক্রি করেন তিনি। ২০ বছর আগের সময়টা ভালো ছিল না তার। কোনোরকম দু’মুঠো খেয়ে-পরে পরিবার নিয়ে সংসার চলতো। তখন নিজে অল্প জমিতে লতির চাষ করে বাজারে বিক্রি করছেন।

কয়েক বছর আগেও লতি বিক্রি করে সংসার চালানোর পর অবশিষ্ট কোনো টাকা জমিয়ে রাখতে পারেননি তিনি। কিন্তু মনের আশাকে জাগ্রত রেখেছেন সবসময়। লতি বিক্রির টাকা দিয়ে একটু একটু করে লাভের মুখ দেখতে থাকেন তিনি। তখন থেকে তার মনোভাব বড়তে থাকে। স্বপ্ন দেখেন লতি বিক্রি করেই সচ্ছল হবেন আব্দুর রহমান।

নিজের অল্প জমিতে লতি চাষ করে বিক্রি করতেন। দিন দিন মানুষের লতির চাহিদা বাড়ায় আব্দুর রহমানের লতি ব্যবসা জমে ওঠে। এখন নিজের জমিতে লতি চাষের পাশাপাশি অন্যের জমির লতি পাইকারি দরে কেনেন তিনি। তারপর দেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়মিত লতির চালান পাঠান। স্থানীয়রা তাকে দেখে লতি চাষে উদ্বুদ্ধ হন।

Abur-Rahman-2

লতি চাষি আব্দুর রহমানের বাড়ি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের বীররামপুর গ্রামে। তিনি বালিপাড়া বাজারে লতি বিক্রি করেন। বর্তমানে তিনি স্বাবলম্বী। কয়েক বছর আগে লতি চাষ করে যার কোনোরকম সংসার চলতো এখন তার কচুরলতির বান্ডেল করে ১৫ জন শ্রমিক। বর্তমানে তিনি পাইকারি লতি বিক্রি করেন। তিনি লতির ব্যবসা করে এলাকায় জমিও কিনেছেন। এলাকার কৃষকদের কাছে আব্দুর রহমান এখন ‘আইডল’।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রশিদ বলেন, লতি চাষি আব্দুর রহমান মন থেকে কৃষিকাজকে ভালোবাসে। আমাদের চোখের সামনে কষ্টে দিন কেটেছে তার। রশিদ এখন স্বাবলম্বী। তার সুখের দিন ফিরে আসায় আমাদেরও ভালো লাগছে।

কচুরলতি চাষি আব্দুর রহমানের এখানে কাজ করে রামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের রহিম নামের এক শিক্ষার্থী। তার ভাষ্য, লেখাপড়ার পাশাপাশি আব্দুর রহমান চাচার লতি বাঁধার কাজ করছি। আমি প্রতিদিন ৩০০ টাকা পাই। চাচা খুব ভালো মানুষ। তাই পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। আমার মতো আরও অনেকে এখানে কাজ করে সংসার চালায়।

Abur-Rahman-3

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আব্দুর রহমানের মতো শতাধিক ব্যক্তি লতির ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। কেউ কেউ নিজে চাষাবাদ করে লতি বিক্রি করেন। আবার কেউ অন্যের জমির লতি কিনে ব্যবসা করেন। কেউ খুচরা বিক্রেতা কেউ শুধু পাইকারি ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন। উপজেলার বীরামপুর বাজারে শতাধিক ব্যক্তি লতির ব্যবসা করেন।

লতি চাষি আব্দুর রহমান  বলেন, ছয় শতাংশ জমিতে কচুর লতি চাষ করলে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়। এই লতি বাজারে বিক্রি করে ৩০ হাজার টাকার মতো পাওয়া যায়। খরচ বাদ দিয়ে ২৪-২৫ হাজার টাকা লাভ হয়। লাভ বেশি হওয়ায় আমার মতো অনেক কৃষক এখন কচুরলতি বিক্রি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে লতির চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় পাইকারি বিক্রি করছি আমি।

তিনি বলেন, কৃষকদের লতি ক্ষেতের লতি পাইকারি কিনে ঢাকার কারওয়ানবাজার, চট্টগ্রাম, সিলেট, টঙ্গীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় পাঠাই। সবচেয়ে বেশি লতি পাঠানো হয় ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায়। সম্প্রতি করোনাভাইরাসের কারণে লতি বিক্রির সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা কিছুটা দূরে সরে আছেন। করোনাকালীন বাজারে এখন কচুর লতির চাহিদা কমেছে। করোনা না যাওয়া পর্যন্ত দুশ্চিন্তায় আছি আমরা।

Abur-Rahman-3

ত্রিশাল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শোয়েব আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, এটি মূলত লতিরাজ লতার জাত। উপজেলায় সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ হেক্টর জমিতে লতির চাষ হয়। এখানে সাড়ে ছয় শতাংশ (এক কাঠা) হিসেবে ধরা হয়। অর্থাৎ এক কাঠা জমিতে ৪-৫ হাজার টাকা খরচ করে লতি চাষ করে ৩০ হাজার টাকার লতি বিক্রি করা যায়। লতির মণ ১ হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার টাকা। কিন্তু করোনার কারণে এক হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে লতি। উপজেলার দফাকুড়ি বাজার থেকে ট্রাকে ঢাকাসহ ময়মনসিংহের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় লতি বাজারজাত হয়। উপজেলার প্রত্যেকটি ইউনিয়নে এখন লতিরাজ লতার চাষ শুরু হয়েছে। এতে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেক কৃষক। এর মধ্যে রামপুর এবং শাকুয়া ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি লতির চাষ হয়।

তিনি বলেন, চাষ করার মাত্র ৫০ দিন পর থেকে লতি ধরা শুরু হয়। একটানা চার থেকে পাঁচ মাস লতি তুলে বাজারে বিক্রি করা যায়। ফলে উপজেলার অনেকে এখন লতি চাষে ঝুঁকছেন।

  • সর্বশেষ - মহানগর