2024-04-26 06:01:38 pm

সময়োপযোগী পদক্ষেপও অব্যবস্থাপনায় ভোগাচ্ছে

www.focusbd24.com

সময়োপযোগী পদক্ষেপও অব্যবস্থাপনায় ভোগাচ্ছে

১৭ আগষ্ট ২০২০, ২৩:৩৫ মিঃ

সময়োপযোগী পদক্ষেপও অব্যবস্থাপনায় ভোগাচ্ছে

টিকিট কালোবাজারি বন্ধে এবং ভ্রমণের সময় যাত্রীর পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য সম্প্রতি ‘টিকিট যার, ভ্রমণ তার’ নীতিতে অনলাইন ও অ্যাপসের মাধ্যমে টিকিট দেয়ার নিয়ম চালু করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। কিন্তু অনলাইন না বোঝা জনসাধারণের বিষয়ে কোনো বিকল্প না থাকায় এবং অব্যবস্থাপনার কারণে এই সময়োপযোগী পদক্ষেপও ভোগাচ্ছে যাত্রীদের।

সোমবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে কাউন্টারের বদলে শুধু অনলাইনে টিকিট বিক্রি হওয়ায় দরিদ্র ও নিরক্ষর শ্রেণির মানুষ বিপাকে পড়েছেন। এসব যাত্রীর না আছে টিকিট কাটার মত স্মার্টফোন, না আছে অনলাইন সম্পর্কে জ্ঞান। এজন্য অনেকে স্টেশনে এসে হয়রানিতে পড়ছেন, অনেকে মিস করছেন ট্রেনও।

বাংলাদেশ রেলওয়ে সম্প্রতি জানায়, ভ্রমণের জন্য ক্রয় করা ট্রেনের টিকিট অন্য কাউকে হস্তান্তর বা অন্যের টিকিট নিয়ে ভ্রমণ করলে তিন মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। এছাড়া শুধু অনলাইনে ও অ্যাপসের মাধ্যমে টিকিট কাটা যাবে। টিকিট কালোবাজারি বন্ধে এবং ভ্রমণের সময় যাত্রীর পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য এমন উদ্যোগ নেয়া হয় বলে জানা যায়।

Railway-1

কিন্তু কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, অনলাইন ও অ্যাপসের মাধ্যমে টিকিট কেটেও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে যাত্রীদের। নির্দিষ্ট একটি ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইনে টিকিট কাটতে হয়। এতদিন অনলাইনে টিকিট কাটার পর মোবাইলে থাকা টিকিট দেখালেই হতো। কিন্তু এখন প্রিন্ট করতে হয় যাত্রীদের। এজন্য অনেকে হয়রানির মধ্যে পড়ছেন।

খুলনাগামী এক ট্রেনের চার যাত্রী পরিবারের একজন সদস্যের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে টিকিট কাটার পর তারা আসলেই একই পরিবারের যাত্রী কি-না, সে প্রশ্নের মুখোমুখিও হয়েছেন। তিন সন্তান নিয়ে যাওয়ার সময় এই বিড়ম্বনায় পড়েন রেহানা বেগম।

স্বামীর জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে টিকিট কাটা ময়মনসিংহগামী এক যাত্রী বলেন, ‘আমার কোনো স্মার্টফোন নেই। স্বামীর ফোন ও জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে মোবাইল অ্যাপসে রেজিস্ট্রেশন করে টিকিট কাটা হয়েছে। এখন আমাকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।’

ঢাকার বিভিন্ন বাসায় কাজ করেন মোছাম্মৎ মরিয়ম। ট্রেন চালুর কথা শোনার পর তিনি তার দুই সন্তান নিয়ে দেশের বাড়ি জামালপুর যেতে কমলাপুর স্টেশনে আসেন। কিন্তু স্টেশনে এসে শোনেন অনলাইনে টিকিট কাটতে হয়। তিনি  বলেন, ‘টিকিট পাই নাই। কী একটা লাইনে নাকি টিকিট কাটতে হবে। আমরা তো এসবের কিছু জানি না। আমরা অনলাইন পাব কোথায়?’

Railway-2

টিকিট চেকিংয়ের সময় ধীরগতির কারণে অনেকে ট্রেন মিস করেন বলেও অভিযোগ শোনা যায়।

সেখানে ট্রেনের টিকিট চেক করতে থাকা রেলওয়ের এক কর্মী  বলেন, ‘কোনো যাত্রী যদি নিজের ন্যাশনাল আইডি দিয়ে টিকিট কাটেন, তাহলে আমরা অ্যালাও করব। অন্যের আইডি দিয়ে কাটলে আমরা অ্যালাও করব না।’

এ বিষয়ে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির (এনসিপিএসআরআর) সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশের রেলওয়ে হল সাধারণ মানুষের জন্য। খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ স্বল্প খরচে রেলে ভ্রমণ করে। তারা অনলাইন কী বোঝে না। তারা কীভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে স্মার্টফোনের মাধ্যমে টিকিট কাটবে? তাই বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এটি একটি অবাস্তব সিদ্ধান্ত। রেল কর্তৃপক্ষ জানে কারা টিকিট কালোবাজারি করে। তাদের না ধরে যাত্রীদের ওপর অযৌক্তিক নিয়ম চাপিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। এর আগেও অ্যাপসের মাধ্যমে টিকিট বিক্রি হয়েছে। কিন্তু রেলের কিছু অসাধু ব্যক্তি টিকিট কালোবাজারি করত। তাই কাউন্টারেও টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা করা হোক।’

Railway-2

দেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর সরকারি ছুটি ঘোষণা হলে অন্যান্য যানবাহনের পাশাপাশি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। তবে মালবাহী ট্রেন চলাচল অব্যাহত ছিল। পরিস্থিতির সঙ্গে জনজীবন কিছুটা খাপ খেয়ে উঠতেই গত ৩১ মে প্রথম দফায় আট জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন চালু করা হয়। ৩ জুন দ্বিতীয় দফায় আরও ১১ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন বাড়ানো হয়। তবে কিছুদিন পর যাত্রী সংকটে দুই জোড়া ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গতকাল রোববার (১৬ আগস্ট) আরও ১২ জোড়া আন্তঃনগর ও এক জোড়া কমিউটার ট্রেনসহ মোট ১৩ জোড়া ট্রেন নতুন করে চলাচল শুরু করেছে। অর্থাৎ সব মিলিয়ে এখন ৩০ জোড়া ট্রেন চলছে। পর্যায়ক্রমে সব রুটের যাত্রীবাহী আন্তঃনগর ট্রেন চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট আগের মতো অনলাইনে ও মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে বিক্রি করা হবে। যাত্রার দিনসহ পাঁচ দিন পূর্বে আন্তঃনগর ট্রেনের অগ্রিম টিকিট ইস্যু করা যাবে। যাত্রীদের সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কোচের ধারণক্ষমতার শতকরা ৫০ ভাগ টিকিট বিক্রি করা হবে। আন্তঃনগর ট্রেনে সব ধরনের স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি বন্ধ থাকবে।


উপদেষ্টা সম্পাদক: ডি. মজুমদার
সম্পাদক: মীর আক্তারুজ্জামান

সর্বস্বত্ব: এমআরএল মিডিয়া লিমিটেড
ঢাকা অফিস: মডার্ণ ম্যানসন (১৫ তলা), ৫৩ মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০
ময়মনসিংহ অফিস: হাসনাইন প্লাজা (দ্বিতীয় তলা), ৭ মদন বাবু রোড, ময়মনসিংহ-২২০০
সেলফোন: ০৯৬১১-৬৪৫২১৫, ০৯৬৯৭-৪৯৭০৯০ ই-মেইল: jagrota2041@gmail.com
ফোন :
ইমেইল :