১৯ আগষ্ট ২০২০, ১১:২০ মিঃ
ওমর ফারুক
ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে কুমিল্লার ময়নামতি এসে একটি রেস্তোরাঁর সামনে থামলো আমাদের বাস। বিরতি দিলো ৩০ মিনিটের। তখন ঘড়ির কাঁটায় রাত সোয়া দুইটা বাজতে চলেছে। আমাদের গন্তব্য চট্টগ্রামের মিরসরাই বোয়ালিয়া ট্রেইল। উদ্দেশ্য হচ্ছে ৬টি ঝরনা দেখা ও পায়ে হেঁটে দুর্গম পথ পাড়ি দেওয়া।
এবারের যাত্রায় আমরা ২২ জন ভ্রমণপিপাসু। ফেসবুকভিত্তিক গ্রুপ ‘ভ্রমণ কাতর ভ্রমর’ এক ইভেন্টের মাধ্যমে আমাদের এক করেছে। আধাঘণ্টার বিরতি শেষে বাস ছুটলো দেশের সবচেয়ে বড় বিভাগ চট্টগ্রামের দিকে। মিরসরাইয়ে পৌঁছাই ভোর সাড়ে ৪টায়। তখন আকাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার। মিরসরাই কাঁচাবাজারে অপেক্ষা করছি, হোটেল খুললেই নাস্তা করে বোয়ালিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেব।
সকালের নাস্তা শেষে কয়েকটি সেলফি তুলে সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে রওনা দিলাম বোয়ালিয়ার দিকে। বোয়ালিয়া নেমে গ্রামের মেঠোপথ ধরে হাঁটতে লাগলাম। সবাই সারিবদ্ধভাবে হাঁটছি। কখনো পায়ে জড়াচ্ছে কাদামাটি, আবার কখনো হাটু সমান পানির মধ্যে হাঁটছি। এখানে অনেক সাবধানতা অবলম্বন করে হাঁটতে হয়। কারণ জোঁকে ধরার আশঙ্কা থাকে। লম্বা সময় হাঁটার উপযোগী এমন জুতা পরে হাঁটতে হয়। পরনের কাপড় যত পাতলা রাখা যায়, ততো ভালো।
হাঁটতে হাঁটতে অমরমানিক্য নামে ঝরনার কাছে চলে এসেছি। ঝিরঝির করে ঝরনার পানি নিচে পড়ছে। দেখে আর অপেক্ষা করলো না কেউই। দ্রুত শরীরটা ভিজিয়ে নিলো সবাই। সেখানে ২০ মিনিটের মতো থেকে ভেজা শরীর নিয়ে রওনা দিলাম আন্ধারমানিক নামে ঝরনার দিকে। সেখানে বেশি সময় দেওয়া হলো না। কারণ আরও কয়েকটি ঝরনা দেখার বাকি আছে। কিছুদূর হাঁটার পর ছড়া ঝরনার কাছে পৌঁছলাম। সেখানে একই জায়গায় দুটো ঝরনা রয়েছে।
অল্প সময় হলেও সেখানে ভিজেছি সবাই। এরপর গেলাম নহেতিকুম ঝরনার কাছে। বোয়ালিয়া ট্রেইলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ঝরনা হচ্ছে নহেতিকুম ও বোয়ালিয়া ঝরনা। এখানে উপরের ৩ দিক থেকে পানি পড়ে। নহেতিকুম ঝরনার সামনে গভীর গর্ত আছে। যারা সাঁতার জানেন, তারা সেখানে নেমে গোসল করেছেন। অনেকে ডিগবাজি খেয়ে পানিতে ধপাস করে পড়েছেন। সেই মুহূর্ত ছিল সবচেয়ে আনন্দময়।
বোয়ালিয়া ট্রেইলের আরেকটি পরিচিত জায়গার নাম হলো উঠান ঢাল। এখানে দুটি বড় গোলাকৃতির দণ্ডায়মান পাথর রয়েছে। বিশ্রাম নেওয়ার জন্য সবচেয়ে উপযোগী জায়গা। বন্ধুরা মিলে সেখানে গান গাইলাম, অনেক খুনসুটি করেছি সবাই। যারা এ ট্রেইলে প্রথম ট্র্যাকিং করেছেন, তাদের অনেকে হাঁটার সময় হোঁচট খেয়ে ব্যথা পেয়েছেন। হাঁটার ক্ষেত্রে এখানে খুব সাবধান থাকতে হয়। নহেতিকুম থেকে গেলাম বোয়ালিয়া ঝরনার কাছে।
এ ঝরনার কাছে যাওয়ার দুটি উপায় আছে। প্রথমত সাঁতার কেটে অথবা পাহাড়ের পাশে পাথরের উপর দিয়ে। যদিও এটা বিপজ্জনক, তবুও মন মানছে না কারোর। যারা সাঁতার জানেন, তারা গেলেন পানির মধ্যদিয়ে। বাকিরা ঝুঁকি নিয়ে পাথরের পাশ দিয়ে গেছেন। বোয়ালিয়া ঝরনার আকৃতি অনেকটা ব্যাঙের ছাতার মতো। কেউ কেউ বলেছেন, বোয়াল মাছের মাথার মতো আকৃতি হওয়ায় এ ঝরনার নাম হয়েছে বোয়ালিয়া। শীতল পানিতে শরীর ভিজিয়ে ফের রওনা দিলাম হোটেলের দিকে।
দুপুরের খাবার সেরে সবাই রওনা দিলাম সীতাকুণ্ডের বাঁশবারিয়া সী বিচের উদ্দেশ্যে। মিরসরাই থেকে ৩০ মিনিটের পথ। একটি লেগুনা ভাড়া করে গেলাম বাঁশবারিয়া সী বিচে। সেখানে সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গ দেখে আমার মন জুড়িয়ে যায়। বিকেলটা এতো সুন্দর হবে কখনো ভাবিনি। হাত দুটো দুপাশে মেলে প্রাণভরে নিশ্বাস নিলাম। সমুদ্রপাড়ের শীতল বাতাস এখনো মনে পড়ছে। করোনাভাইরাসে সৃষ্ট নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে এমন ভ্রমণ দেহ ও মনকে প্রফুল্ল রাখতে সহায়ক।
লেখক: সাংবাদিক।
সর্বস্বত্ব: এমআরএল মিডিয়া লিমিটেড
ঢাকা অফিস: মডার্ণ ম্যানসন (১৫ তলা), ৫৩ মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০
ময়মনসিংহ অফিস: হাসনাইন প্লাজা (দ্বিতীয় তলা), ৭ মদন বাবু রোড, ময়মনসিংহ-২২০০
সেলফোন: ০৯৬১১-৬৪৫২১৫, ০৯৬৯৭-৪৯৭০৯০
ই-মেইল: jagrota2041@gmail.com
ফোন :
ইমেইল :