2024-04-24 08:59:36 pm

৮৬৬ মিটার প্রস্থের কর্ণফুলী এখন ৪১০ মিটার!

www.focusbd24.com

৮৬৬ মিটার প্রস্থের কর্ণফুলী এখন ৪১০ মিটার!

২১ সেপ্টেম্বার ২০২০, ১৭:৫০ মিঃ

৮৬৬ মিটার প্রস্থের কর্ণফুলী এখন ৪১০ মিটার!

২০০৬ সালে দ্বিতীয় কর্ণফুলী সেতু নির্মাণের সময় এডিবির মাস্টারপ্ল্যান ও বিএস শিট অনুযায়ী কর্ণফুলীর প্রস্থ ছিল ৮৮৬ দশমিক ১৬ মিটার। কিন্তু গত ১৪ বছরের ব্যবধানে দখল-দূষণে কর্ণফুলীর প্রশস্ততা কমেছে অর্ধেকেরও বেশি। বর্তমানে শাহ আমানত সেতু (দ্বিতীয় কর্ণফুলী সেতু) পয়েন্টে কর্ণফুলীর প্রস্থ নেমে এসেছে মাত্র ৪১০ মিটারে।

নদী বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, অচিরেই কর্ণফুলী রক্ষায় পদক্ষেপ নেয়া না হলে অদূর ভবিষ্যতে একসময়ের প্রমত্তা কর্ণফুলী খালে পরিণত হবে, কার্যকারিতা হারাবে চট্টগ্রাম বন্দর।

সোমবার (২১ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে ‘চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন’ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কর্ণফুলী নদী নিয়ে তাদের করা এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। যেখানে কর্ণফুলী দখল ও দূষণের ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে।

jagonews24

শাহ আমানত ব্রিজের নিচে কর্ণফুলীর প্রস্থ এখন সাড়ে তিনশ মিটার। ব্রিজের নিচের চর সেতুর মাঝপিলারের কাছাকাছি চলে এসেছে। মাঝনদীর চরে অঘোষিত সাম্পান ঘাটে যাত্রীদের ব্যস্ততা চোখে পড়ার মতো। নদীর মাঝখানে ঘাটের পাশে সাম্পানেই ঘুমিয়ে পড়েছেন যুবক মাঝি।

সংবাদ সম্মেলনে ‘কর্ণফুলী দখল জরিপ প্রতিবেদন-২০২০’ সাংবাদিকদের কাছে উপস্থাপন করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আলীউর রহমান। গত ৩০ আগস্ট থেকে ২১ দিনব্যাপী ‘চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন’ কর্ণফুলী নদীর শাহ আমানত সেতু থেকে নগরের ফিরিঙ্গিবাজারের মনোহরখালী পর্যন্ত এ জরিপ পরিচালনা করে।

জরিপ প্রতিবেদনে জানানো হয়, কর্ণফুলী ব্রিজ (শাহ আমানত সেতু) নির্মাণের সময় এডিবি মাস্টারপ্ল্যান ও বিএস শিট অনুযায়ী কর্ণফুলীর প্রস্থ ছিল ৮৮৬ দশমিক ১৬ মিটার। কিন্তু ‘চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন’ কর্তৃক তৈরি নতুন জরিপে দেখা যাচ্ছে শাহ আমানত সেতুর নিচে বর্তমানে ভাটার সময় নদীর প্রস্থ থাকছে মাত্র ৪১০ মিটার। জোয়ারের সময় চর অতিক্রম করে তা সর্বোচ্চ ৫১০ মিটার পর্যন্ত হয়। এছাড়া ভরাট হয়ে যাওয়া প্রায় নদীর ৩০০ মিটার এলাকা দিয়ে কোনো প্রকার নৌযান চলাচল করতে পারে না। এ কারণে স্থানীয়রা কর্ণফুলী নদীর মাঝবরাবর অঘোষিত ঘাট বসিয়ে যাত্রী পারাপার করছে।

jagonews24

২০১৪ সালে করা এডিবি ও চট্টগ্রাম বন্দরের মাস্টারপ্ল্যান। সবুজ অংশগুলো নদীর ভরাট হয়ে যাওয়া অংশ।

প্রতিবেদন আরও উঠে এসেছে, এডিবির মাস্টারপ্ল্যান ও বিএস শিট অনুযায়ী রাজাখালী খালের মুখে কর্ণফুলীর প্রস্থ ৮৯৮ মিটার, কিন্তু বাস্তবে তা মাত্র ৪৬১ মিটার। চাক্তাই খালের মুখে কর্ণফুলীর প্রস্থ থাকার কথা ৯৩৮ মিটার, কিন্তু বর্তমানে সেখানে আছে ৪৩৬ মিটার। এছাড়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কর্তৃক নির্মিত মেরিনার্স পার্ক এলাকায় কর্ণফুলীর প্রশস্ততা ৯৮১ মিটার হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে আছে ৮৫০ মিটার; যদিও সেখানে বন্দর কর্তৃপক্ষ এখন ড্রেজিং অব্যাহত রেখেছে। ফিরিঙ্গিবাজার এলাকায় কর্ণফুলীর প্রস্থ হওয়ার কথা ৯০৪ মিটার, কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ গাইড ওয়াল নির্মাণ করায় সেখানে নদীর প্রশস্ততা নেমে এসেছে ৭৫০ মিটারে।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির পক্ষ থেকে ছয়টি প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। সেগুলো হচ্ছে- অবিলম্বে কর্ণফুলী মেরিনার্স পার্ক, সোনালী মৎস্য আড়ত, বেড়া মার্কেটসহ কর্ণফুলী নদী দখল করে গড়ে ওঠা সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদীর গতিপথ ফিরিয়ে আনা। নিয়মিত ড্রেজিং করে ও প্রয়োজনীয় নদীশাসনের মাধ্যমে বাংলাবাজার, সদরঘাট, চাক্তাই ও রাজাখালী এলাকার নৌবন্দর ঝুঁকিমুক্ত করা। নদীর পাড়কে স্থায়ীভাবে চিহ্নিত করা ও পাড় রক্ষায় স্থায়ী প্রতিরক্ষা দেয়াল তৈরি করা এবং প্রস্তাবিত হাইড্রো মরফলোজিক্যাল মডেল স্টাডির মাধ্যমে কর্ণফুলীর মোহনা থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত নদীর প্রবাহ ও নদীশাসনে ব্যবস্থা নেয়া।

jagonews24

চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন কর্তৃক জরিপকৃত কর্ণফুলী নদীর ভরাট ও দখল মানচিত্র।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন- চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি প্রকৌশলী এম আলী আশরাফ, সহ-সভাপতি অধ্যাপক মঞ্জুরুল কিবরিয়া, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, অধ্যাপক নোমান সিদ্দিকী, কর্ণফুলী গবেষক ড. মো ইদ্রিস আলী, অধ্যাপক প্রদীপ কুমার দাশ, অধ্যাপক মনোজ কুমার দে প্রমুখ।


উপদেষ্টা সম্পাদক: ডি. মজুমদার
সম্পাদক: মীর আক্তারুজ্জামান

সর্বস্বত্ব: এমআরএল মিডিয়া লিমিটেড
ঢাকা অফিস: মডার্ণ ম্যানসন (১৫ তলা), ৫৩ মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০
ময়মনসিংহ অফিস: হাসনাইন প্লাজা (দ্বিতীয় তলা), ৭ মদন বাবু রোড, ময়মনসিংহ-২২০০
সেলফোন: ০৯৬১১-৬৪৫২১৫, ০৯৬৯৭-৪৯৭০৯০ ই-মেইল: jagrota2041@gmail.com
ফোন :
ইমেইল :