২৭ সেপ্টেম্বার ২০২০, ২৩:০৭ মিঃ
ডা. মো. মামুন-উর রশিদ
কারো চোখে বিদেশ যাওয়ার রঙিন স্বপ্ন। অনেক আশা নিয়ে কাগজপত্র জমা দিলেন। কিন্তু মেডিকেল চেকআপ করতে গিয়ে জানলেন, তার হেপাটাইটিস বি পজিটিভ। তার বিদেশ যাত্রা নিষিদ্ধ। অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষার সমাপ্তি ঘটে এভাবে। হ্যাঁ, অত্যন্ত বিপজ্জনক এক সংক্রামক রোগ হেপাটাইটিস বি, যা হয়ে থাকে হেপাটাইটিস ভাইরাস থেকে।
হেপাটাইটিস কী: হেপাটাইটিস বলতে যকৃতের প্রদাহকে বোঝায়। যখন হেপাটাইটিস রোগটি ভাইরাসজনিত কারণে হয়, তখন তাকে ভাইরাল হেপাটাইটিস বলে। ভাইরাস ছাড়াও অন্য অনেক কারণে হেপাটাইটিস হতে পারে। তবে আমাদের দেশে সাধারণত ভাইরাস ঘটিত হেপাটাইটিস বেশি হয়ে থাকে। হেপাটাইটিস সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে, স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী। হেপাটাইটিস ৬ মাসের মধ্যে ভালো হয়ে গেলে তাকে স্বল্পমেয়াদী এবং ৬ মাসের মধ্যে ভালো না হলে তাকে দীর্ঘমেয়াদী হেপাটাইটিস বলে।
কারণসমূহ: হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি এবং ই ভাইরাস ভাইরাল হেপাটাইটিসের প্রধান কারণ। হেপাটাইটিস ভাইরাসগুলোর মধ্যে এ এবং ই স্বল্পমেয়াদী আর বি, সি এবং ডি দীর্ঘমেয়াদী।
ভাইরাস যেভাবে ছড়ায়: হেপাটাইটিস এ ও ই দূষিত খাবার ও পানি খাওয়ার মাধ্যমে ছড়ায়। হেপাটাইটিস বি, সি ও ডি অনিরাপদ রক্ত ও রক্তের উপাদান গ্রহণ, এক সিরিঞ্জ বা সুঁচ বহুজনের জন্য বারবার ব্যবহার, সেলুনে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক, অবাধ যৌনাচার, সমকামিতা ও উভকামিতা, শিরা পথে মাদক গ্রহণ, মেডিকেল বা দাঁতের চিকিত্সায় অনিরাপদ যন্ত্রপাতি ব্যবহার করলে ছড়াতে পারে। এ ছাড়া হেপাটাইটিস বি-তে আক্রান্ত মায়ের সন্তানের জন্মের পর বি ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা ৯০ ভাগ। তবে মায়ের দুধের মাধ্যমে বি ভাইরাস ছড়ায় না।
লক্ষণসমূহ: স্বল্পমেয়াদী হেপাটাইটিসে ক্ষুধামন্দা, শরীর ব্যথা, বমি ভাব বা বমি এবং কিছু দিনের মধ্যে প্রস্রাবের রং ও চোখ হলুদ বর্ণ ধারন করে। দীর্ঘমেয়াদী হেপাটাইটিসে অনেক ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো লক্ষণ থাকে না। বিদেশ যাওয়ার প্রাক্কালে রক্ত পরীক্ষার সময় কিংবা রক্ত দিতে গিয়ে বা টিকা দিতে গিয়ে হেপাটাইটিস বি বা সি ইনফেকশন ধরা পড়ে। কেউ কেউ দুর্বলতা, বিষণ্নতা, ক্ষুধামন্দা, অসুস্থার সাধারণ অনুভূতি অনুভব করতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী ভাইরাল হেপাটাইটিস থেকে পরবর্তীতে লিভার সিরোসিস, এমনকি লিভার ক্যান্সারও হতে পারে। সিরোসিস হয়ে গেলে পেটে পানি আসে, রক্ত বমি বা কালো পায়খানা হতে পারে।
ভাইরাল হেপাটাইটিস হলে কী করবেন: ভাইরাল হেপাটাইটিসের কোনো উপসর্গ দেখা দিলে বা সন্দেহ হলে দেরি না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তিনি আপনার রোগ নির্ণয় করে এর কারণ, সৃষ্ট জটিলতা এবং রোগের বর্তমান অবস্থা জেনে প্রয়োজনীয় চিকিত্সা ও পরামর্শ দেবেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে হেপাটাইটিস এ এবং ই দ্রুত লিভার ফেইলিউর করতে পারে। তাই জন্ডিস হলে অবহেলা করবেন না। এ ছাড়া বি ও সি ভাইরাসের কার্যকরী সব ওষুধ এখন বাংলাদেশে পাওয়া যায়। তাই হতাশ না হয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
পরিশেষে বলতে চাই, ভাইরাল হেপাটাইটিসের ফলাফল ক্ষেত্র বিশেষে হতে পারে ভয়াবহ। তবে সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে অনেক ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণ নিরাময় এবং অনিরাময় যোগ্য জটিলতামুক্ত স্বাভাবিক জীবনযাপন করা যায়।
লেখক: এফসিপিএস (মেডিসিন), এমডি (গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি), পরিপাকতন্ত্র, লিভার ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ।
সর্বস্বত্ব: এমআরএল মিডিয়া লিমিটেড
ঢাকা অফিস: মডার্ণ ম্যানসন (১৫ তলা), ৫৩ মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০
ময়মনসিংহ অফিস: হাসনাইন প্লাজা (দ্বিতীয় তলা), ৭ মদন বাবু রোড, ময়মনসিংহ-২২০০
সেলফোন: ০৯৬১১-৬৪৫২১৫, ০৯৬৯৭-৪৯৭০৯০
ই-মেইল: jagrota2041@gmail.com
ফোন :
ইমেইল :