2024-04-23 08:15:17 pm

শীত-কুয়াশার প্রকোপ : আমন-আউশের পর বোরো নিয়ে শঙ্কা

www.focusbd24.com

শীত-কুয়াশার প্রকোপ : আমন-আউশের পর বোরো নিয়ে শঙ্কা

২০ ডিসেম্বার ২০২০, ১০:০২ মিঃ

শীত-কুয়াশার প্রকোপ : আমন-আউশের পর বোরো নিয়ে শঙ্কা

তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে নষ্ট হচ্ছে বোরোর বীজতলা। বিভিন্ন ধরনের ছত্রাকনাশক ছিটিয়েও তেমন ফল পাওয়া যাচ্ছে না। আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্যমতে, আজ তৃতীয় দিনের মতো দেশে শৈত্যপ্রবাহ চলছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। শস্যভাণ্ডারখ্যাত উত্তরাঞ্চলে তাপমাত্রা তলানিতে নেমে গেছে। এ অবস্থায় বীজতলা পচে বোরোর চারা সংকট দেখা দেয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

কৃষকরা বলছেন, তারা বীজতলায় ছত্রাকনাশক ছিটাচ্ছেন। কুয়াশার হাত থেকে বাঁচাতে বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকেও রাখছেন। তবে অনেকসময় তাতেও কাজ হচ্ছে না। গত আমন এবং আউশ মৌসুমে বন্যা ও বিরূপ আবহাওয়ার কারণে তারা ভালো ফলন পাননি। আর এবারের তীব্র শীত-কুয়াশার কারণে বোরো নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েকদিনে রংপুর অঞ্চলে শীতের তীব্রতা বেশ বেড়েছে। দিনের বড় অংশই কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকায় ক্ষেতে ছত্রাকের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। কোনো কোনো জায়গায় চারা হলুদাভ হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। আবার অনেকের বীজতলায় চারা পোড়া ও ঝলসানো রোগও দেখা দিয়েছে।

paddy4.jpg

নওগাঁ সদরের হোগলবাড়ি এলাকার কৃষক ময়েনউদ্দিন জানান, কয়েকদিন ধরেই সূর্যের দেখা নেই। এক জমিতে ধানের চারায় হঠাৎ ছোট ছোট সাদা পোকার আক্রমণ হয়েছে। আরেক জমিতে ১০-১৫ দিন বয়সী চারাগুলো সাদা ও লালচে রং ধরে মারা যাচ্ছে। বারবার কীটনাশক, ছত্রাকনাশক ব্যবহার করেও কোনো লাভ হচ্ছে না।

গত বন্যায় আমনের চারা নষ্ট হওয়ার পর এবার শৈত্যপ্রবাহে বোরোর চারা নষ্ট হওয়ার উপক্রম কুড়িগ্রামেও। উলিপুর উপজেলার চড়ুয়াপাড়া গ্রামের কৃষক হাকিম মিয়া জানান, বন্যায় আমন গেছে। তার আগে গতবছর বোরো ধান করে ফলন ভালো হলেও ন্যায্যমূল্য পাননি। এখন আবার এ বছর বোরো ধান ঠিকমতো না হলে বেশ বিপদে পড়বেন।

এই জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. মঞ্জুরুল হক বলেন, ‘ক্ষতি কমাতে আমরা কৃষকদের সার্বিক নির্দেশনা ও সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। তবে তাপমাত্রা অস্বাভাবিক মাত্রায় কমতে থাকলে ক্ষতি বেশি হবে। এমনিতেই এই এলাকায় শীত অনেক বেশি।’

paddy4.jpg

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য বলছে, দেশে গতবছর বোরোর ফলন হয়েছিল দুই কোটি এক লাখ ৮১ হাজার ৩৭৯ মেট্রিকটন। এ বছর বোরোর লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে দুই কোটি পাঁচ লাখ ৩১ হাজার ৪৭০ মেট্রিকটন। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত শুধু হাওর এলাকায় বোরো ধান রোপণ শুরু হয়েছে। অন্যান্য এলাকায় চারা প্রস্তুত করা হচ্ছে।

তবে চলমান শীতে বীজতলা সম্পূর্ণ নষ্ট হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলে দাবি করেছেন কৃষি অধিদফতরের সরেজমিন উইংয়ের অতিরিক্ত পরিচালক মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘বীজতলা সম্পূর্ণ নষ্ট হওয়ার মতো শীতের তীব্রতা এখনও হয়নি। যে সকল বীজতলা আক্রান্ত হয়েছে সেগুলো কিছুটা তাপমাত্রা বাড়লেই ঠিক হয়ে যাবে।’

কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে যে পরিমাণ ধান উৎপাদন হয় তার সিংহভাগই বোরো। এ সময়ের ধানের ফলনও তুলনামূলক বেশি। যেখানে প্রতি হেক্টর জমিতে আউশ ও আমনের ফলন যথাক্রমে ২ দশমিক ৫৫ ও ২ দশমিক ৫০ মেট্রিকটন, সেখানে বোরোর ফলন ৪ মেট্রিকটনেরও বেশি।

paddy4.jpg

উৎপাদনের দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে আমন। তবে গত মৌসুমে আমনের ফলন ভালো হয়নি। আবার বোরোর উৎপাদন কমলে সেটা পুরো বছরের সার্বিক উৎপাদনে দারুণ নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই এ বিষয়টি অধিক গুরুত্বের সঙ্গে নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) কর্মকর্তারা।

সংস্থাটির উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আব্দুল লতিফ বলেন, ‘শৈত্যপ্রবাহের সময় বাড়তি পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। তা না হলে এর প্রভাব সামগ্রিক বোরো উৎপাদনে পড়বে। মাঠপর্যায়ে শৈত্যপ্রবাহের প্রভাব থেকে বাঁচতে বীজতলায় নলকূপের পানি দিয়ে তা ধরে রাখতে হবে। এছাড়া বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা যেতে পারে। শিশির পড়লে তা ঝরিয়ে দিতে হবে। এরসঙ্গে ছত্রাকনাশক এবং প্রতিশতক জমিতে ২৮০ গ্রাম করে ইউরিয়া সার দিতে হবে।’


উপদেষ্টা সম্পাদক: ডি. মজুমদার
সম্পাদক: মীর আক্তারুজ্জামান

সর্বস্বত্ব: এমআরএল মিডিয়া লিমিটেড
ঢাকা অফিস: মডার্ণ ম্যানসন (১৫ তলা), ৫৩ মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০
ময়মনসিংহ অফিস: হাসনাইন প্লাজা (দ্বিতীয় তলা), ৭ মদন বাবু রোড, ময়মনসিংহ-২২০০
সেলফোন: ০৯৬১১-৬৪৫২১৫, ০৯৬৯৭-৪৯৭০৯০ ই-মেইল: jagrota2041@gmail.com
ফোন :
ইমেইল :