০৭ মার্চ ২০২১, ১৯:২৫ মিঃ
গরমে শাড়ি পরার ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি। কারণ এ সময় কিন্তু আপনি জর্জেট, ভেলভেট বা ভারি ঘরানার কোনো শাড়ি পরতে পারবেন না! এমনকি বেনারসি থেকে কাতান পরলেও বেশ ভোগান্তি পোহাতে হবে। কারণ গরম আবহাওয়া এসব শাড়ির জন্য উপযুক্ত নয়।
তাই গরমে সুতি শাড়ির বিকল্প নেই। তাই বলে গরম মানেই ফ্যাশনে শুধু সুতির শাড়ি থাকবে তা তো হতে পারে না! আর সব জায়গায় সুতির শাড়ি পরে যাওয়াও যায় না। সুতির সঙ্গে আরও এমন অনেক ফ্যাব্রিক রয়েছে যা কিন্তু গরমকালে পরতে বেশ আরামদায়ক। জেনে নিন তেমনই ৫ ধরনের শাড়ির হদিস-
মনিপুরি শাড়ি: বাংলাদেশের সিলেট বিভাগে বাস করে অন্যতম নৃ-গোষ্ঠী মণিপুরী সম্প্রদায়। মণিপুরী নারীদের সুখ্যাতি রয়েছে হাতে বোনা তাঁতের কাপড়ের জন্য। তারাই তৈরি করেন মণিপুরী শাড়ি।
এ শাড়ি এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে গাঢ় বা হালকা যে রংয়েরই শাড়ি হোক না কেন পাড়ের রং হবে গাঢ়। সাধারণত শাড়ির পাড়ের নকশাটি হয়ে থাকে ত্রিভুজাকৃতির আর শাড়ির ভেতরে থাকে হালকা সুতায় বোনা লতা-পাতা।
এই নকশাটি মণিপুরীদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। সুতি সুতা দিয়ে বোনা হয় মণিপুরী শাড়ি, ব্লাউজ পিসসহ নানা ধরনের পোশাক। স্থানভেদে মণিপুরী শাগির দাম ৫৫০ টাকা থেকে ৯৯৫০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন।
জুম শাড়ি: জুম শাড়িতে সাধারণত লিলেন সুতা ও সিল্ক সুতার মিশ্রণ থাকে। কিছুটা নেট জাতীয় বলে অনেকে একে মোটা কোটাও বলেন। বর্তমানে তাঁতে বোনা জুম শাড়িগুলো বেশ জনপ্রিয়।
এই শাড়িগুলো হ্যান্ডলুম হলেও সুতো দেশীয় নয়। মনিপুরী তাঁতীরা জুম শাড়ি বুনতে এক ধরণের লিলেন সুতো ব্যবহার করে যা কোরিয়া থেকে আমদানি করা হয়। এ সুতোর বিশেষ বৈশিষ্ট হচ্ছে হাত দিলে অনেক ঠান্ডা লাগে।
এজন্য জুম শাড়ি পরলে খুব একটা গরম অনুভব হয় না এবং অনেক আরামদায়ক হয়। শীত কিংবা গরম যেকোনো সময় পরার উপযোগী জুম শাড়ি। দামও একেবারে হাতের নাগালে ৪০০ টাকা থেকে শুরু করে বেশি দাম দিয়েও কিনতে পারবেন জুম শাড়ি।
জামদানি শাড়ি: বাঙালি নারীর প্রিয় শাড়ি জামদানি। ঢাকার কারিগররাই সর্বপ্রথম এ ধরনের শাড়ি বুনতেন বলে সবার মুখে-মুখে প্রচলিত হয় ঢাকাই শাড়ি। আসলে এ শাড়ির নাম জামদানি। জাম শব্দের অর্থ ফুল এবং দানি মানে ফুলদানি, দুয়ে মিলে জামদানি।
মূলত এ ধরনের শাড়িতে ফুলপাতার নকশাই বেশি দেখা যায়। মুঘল আমলে তাদের অনুপ্রেরণা এবং পৃষ্ঠপোষকতায় এ শাড়ির বাহার আরও বাড়ে। প্রথমদিকে সুতির সুতো দিয়েই এই শাড়ি বোনা হত।
যত সূক্ষ্ম সুতো, তত দামি জামদানি! পরে সিল্কের সুতো ব্যবহার করা শুরু হয়। জামদানি চার রকমের হতে পারে, ঢাকাই, ধনিয়াখালি, শান্তিপুরি ও টাঙ্গাইল।
যেকোনো ঋতুতেই জামদানি শাড়ির ব্যবহার আরামদায়ক। বিশেষ করে গরমে জামদানি হতে পারে আপনার নিত্য সঙ্গী। বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও আপনি জামদানি শাড়ি অনায়াসে পরতে পারবেন।
সাধারণত শাড়ি তৈরির সময়, সুতোর মান ও কাজের সূক্ষ্মতা বিবেচনায় একটি জামদানির দাম ৩ হাজার টাকা থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা কিংবা তার চেয়েও বেশি হতে পারে।
তাতের শাড়ি: তাঁতের শাড়ি বাংলার আবহাওয়ার সঙ্গে একদম মানানসই। এর নকশাতেও থাকে স্থানীয় সংস্কৃতির ছোঁয়া। পাড়ের নকশাই বলুন কিংবা শাড়ির জমির বুটি, ফুল-পাতা-কলকা ডিজাইনের সবটাই একান্তভাবে বাংলার নিজস্ব।
যদিও তাঁত শব্দটির ইংরেজি অর্থ হল হ্যান্ডলুম। অর্থাৎ হাতে বোনা যেকোনো শাড়িই আসলে তাঁতের শাড়ি। তবে সাধারণ বাংলায় তাঁতের শাড়ি মানে, সারা বছর পরা যেতে পারে এমন নরম শাড়িকেই বোঝানো হয়।
তবে এ শাড়ি তাঁতে বোনা নয়, বোনা হয় পাওয়ারলুমে। তাই দামেও সস্তা। ছাপা শাড়ি যেমন বিভিন্ন নামীদামি ব্র্যান্ডের আছে; ঠিক তেমনই অনেক ছোট-ছোট তাঁতিরাও সমবায় প্রথায় পাওয়ারলুমে আজকাল এই শাড়ি শাড়ি তৈরি করেন।
এ ধরনের শাড়ির আসল চমক এর ছাপা, মানে প্রিন্ট। কাপড়ের ধরনভেদে ৬৫০ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে তাঁতের শাড়ি কিনতে পারবেন।
খেশ শাড়ি: পুরোনো কাপড়কে নতুনরূপে প্রাণ দেয় খেশ। পুরাতন কাপড় দিয়ে খেশ তৈরি হয় বলে এই শাড়ি পরতেও আরাম। খেশ শাড়িগুলো এক রঙের হয়ে থাকে। খেশের মূল বৈশিষ্ট্য হলো পুরোনো কাপড় ছাড়া এটা তৈরি করা যাবে না। প্রতিদিন একজন তাঁতি মাত্র দু’টি শাড়ি বুনতে পারেন।
বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলায় খেশ শাড়ি তৈরি হয়ে থাকে। তাঁতিরা তাদের কাজের মাধ্যমে নান্দনিক সব ডিজাইন ফুঁটিয়ে তুলছেন শাড়িতে। পুরাতন কাপড়ের এমন কার্যকরী ব্যবহার প্রশংসার দাবিদার। অনেকই আছেন যাদের খেশ শাড়ি সম্পর্কে ধারণা নেই।
পুরাতন সুতি কাপড় দিয়ে খেশ শাড়ি তৈরি হয়ে থাকে এবং দেখতেও অনেক সুন্দর। বিভিন্ন নকশাগত পার্থক্য অনুসারে খেশ শাড়ি ৮০০ থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন।
সর্বস্বত্ব: এমআরএল মিডিয়া লিমিটেড
ঢাকা অফিস: মডার্ণ ম্যানসন (১৫ তলা), ৫৩ মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০
ময়মনসিংহ অফিস: হাসনাইন প্লাজা (দ্বিতীয় তলা), ৭ মদন বাবু রোড, ময়মনসিংহ-২২০০
সেলফোন: ০৯৬১১-৬৪৫২১৫, ০৯৬৯৭-৪৯৭০৯০
ই-মেইল: jagrota2041@gmail.com
ফোন :
ইমেইল :