, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ অনলাইন সংস্করণ

রহমতের শেষ দিন আজ

  ধর্ম ডেস্ক

  প্রকাশ : 

রহমতের শেষ দিন আজ

আজ রোজার দশম দিন। রহমতের শেষ দিন। হৃদয় ছুঁয়েছে কি রহমতের বারিধারায়। সিক্ত হওয়ার মতো সৌভাগ্য আমাদের কি হয়েছে? মোমিনের এমন প্রশ্ন মনে মনে। নিজের হৃদয় কাবায় এমন ব্যথা অনুভব করছেন মোমিন। আমাদের প্রিয় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘অপরাধ স্বীকারকারী নিরপরাধ ব্যক্তির মতো।’ (বুখারি, মুসলিম ও তিরমিজি)

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সব মানুষ ভুলকারী, আর ভুলকারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো যারা তওবাকারী।’ (বায়হাকি)। তিনি আরো বলেন, ‘তুমি ক্ষমা করো, তোমাকেও ক্ষমা করা হবে।’ (তিরমিজি)

রহমতের সিঁড়িতে এখনো আমরা দন্ডায়মান। সময় কোনোভাবেই নষ্ট করা যাবে না। রহমতকে নিজের করে নিতে আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনে ক্ষমা লাভের চেষ্টায় হাত প্রসারিত করতে হবে। পবিত্র রমজানুল মোবারককে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। আওয়ালুহু রহমাতুন অর্থাৎ প্রথম ১০ দিন রহমতের, আওসাতুহু মাগফেরাতুন অর্থাৎ দ্বিতীয় দশক মাগফেরাতের আর আখিরুহু ইতকুন মিনান নার অর্থাৎ তৃতীয় দশক জাহান্নাম থেকে নাজাতের। মোমিন আল্লাহর রহমতে সিক্ত হয়ে, মাগফিরাত লাভ করে, জাহান্নাম থেকে মুক্তির সনদ লাভ করে রমজানের আমল করে। আশা আর আকাক্সক্ষার বিষয় হলো, রহমত তো শেষ হয়ে যাচ্ছে, আমরা আল্লাহর রহমত পেয়েছি তো!

উম্মে সালামা (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করিম (সা.) প্রথম বছর রমজানের প্রথম দশকে এতেকাফ করেন, অতঃপর মধ্যম দশকে এরপর শেষ দশকেও এতেকাফ করেন। (মাজমাউজ যাওয়ায়েদ ৩ : ১৭৬)

নবীজি প্রথম দশকেও নফল এতেকাফ করেছেন। এটা একান্তই আল্লাহর রহমত পাওয়ার জন্যই। মোমিন মসজিদমুখী জীবন যদি গঠন করতে পারে, তাহলেই রহমত লাভে ধন্য হতে সক্ষম হয়। নবীজি চাইতেন, কোনো মোমিন যেন রমজানের আমল থেকে বঞ্চিত না হয়। নিজেকে অবশ্যই যেন ক্ষমা করে নিতে পারে। এ সুযোগ থেকে যে বঞ্চিত হবে, তাকে তিরস্কারও করা হয়েছে। কাব ইবন উজরা (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, তোমরা মিম্বারের নিকটবর্তী হও। আমরা হাজির হলাম। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সা.) মিম্বারের প্রথম সিঁড়িতে পা মুবারক রাখলেন এবং বললেন, আমিন। এরপর দ্বিতীয় এবং তৃতীয় সিঁড়িতে পা রাখার সময়ও আমিন বললেন। খুৎবা শেষে মিম্বার থেকে নেমে এলে আমরা জানতে চাইলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আজ মিম্বারে ওঠার সময় যা শুনলাম, আগে কখনো তা শুনিনি। নবীজি বললেন, এই মাত্র জিবরাইল (আ.) এসেছিলেন। আমি যখন প্রথম সিঁড়িতে পা রাখি তখন জিবরাইল (আ.) বললেন, ধ্বংস হোক ওই ব্যক্তি, যে রমজান পেল অথচ তার মাগফিরাত হলো না। আমি বললাম, আমিন। দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখার সময় জিবরাইল (আ.) বললেন, ধ্বংস হোক ওই ব্যক্তি যার সামনে আপনার নাম নেওয়া সত্ত্বেও সে আপনার ওপর দরূদ পাঠ করল না। আমি বললাম, আমিন। এরপর তৃতীয় সিঁড়িতে পা রাখতেই জিবরাইল (আ.) বললেন, ধ্বংস হোক ওই ব্যক্তি যার সামনে তার মা-বাবা বা তাদের কেউ বার্ধক্যে পৌঁছেছে অথচ তারা তাকে জান্নাতে পৌঁছাতে পারল না। এর জবাবে আমি বললাম আমিন। (মুসতাদরাকে হাকেম)

তাই রহমত তো শেষ। আমরা কী পেলাম, নিজেকে রহমতস্নাত করতে পেরেছি কি? রমজানের এই পবিত্র সময়ে নিজেকে পবিত্র করার সুযোগ থেকে আমরা কেউই বঞ্চিত হতে চাই না। পরের মাগফিরাত আর নাজাতের সময়কেও অতীব গুরুত্ব দিয়ে নিজেকে আমলের বাতাবরণে ডুবিয়ে রাখতে হবে। আল্লাহতায়ালা আমাদের রহমতের বারিধারায় সিক্ত করুন। রহমত লাভে ধন্য করুন। আমিন।

  • সর্বশেষ - অতিথি কলাম