2024-04-19 08:00:27 pm

করোনাকালে মনের যত্ন খুবই জরুরি, যেভাবে নেবেন

www.focusbd24.com

করোনাকালে মনের যত্ন খুবই জরুরি, যেভাবে নেবেন

০৩ মে ২০২১, ১৭:০২ মিঃ

করোনাকালে মনের যত্ন খুবই জরুরি, যেভাবে নেবেন

কাজী তাহসীন আহমেদ

চলছে লকডাউন। দিন-রাত ঘরে থাকতে হচ্ছে। পরিচিত কারো সাথে দেখা হচ্ছে না। সারাদিন ঘরে থেকে টিভিতে করোনা নিয়ে দুঃসংবাদ। মৃত্যু বাড়ছে, সংক্রমণ বাড়ছে। জানাশোনা অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন, কেউ কেউ মারা যাচ্ছেন। প্রায় দিনই মসজিদের মাইক থেকে ভেসে আসছে শোক সংবাদ। এদিকে নিজের আয়, চাকরি, ব্যবসা, অর্থনীতি কিংবা বাচ্চার শিক্ষা ব্যবস্থার কী হবে বুঝতে পারছেন না। সারাদিন ঘরবন্দি, চারদিকে নেগেটিভিটি, জান-মাল ক্ষয়ের আশঙ্কা- এসব অস্থিরতা ও চাপ মিলিয়ে আপনার গভীরে হয়তো বাসা বাঁধছে মানসিক অসুস্থতা।

হ্যাঁ, করোনায় শুধু শারীরিক সুস্থতার খেয়াল রাখলেই হবে না। যত্ন নিতে হবে নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের। কিন্তু সেটা কিভাবে? উত্তর হচ্ছে- নিজের চিন্তা-ভাবনা ও যাপিত জীবনকে একটু সুন্দর করে সাজিয়ে-গুছিয়ে নিয়ে।

একটি সত্য উপলব্ধি করুন। সেটি হচ্ছে- কিছুটা রাগ, ক্ষোভ, ভয়, দুঃখ, আশঙ্কা এসব মানসিক অনুভূতি জীবনে অত্যন্ত স্বাভাবিক ব্যাপার। করোনার সময়টাতে তো আরও স্বাভাবিক ব্যাপার। যতদিন জীবন আছে, পরিস্থিতি বুঝে এসব বোধ মনে আসা-যাওয়া করবে। তাই এসব নেগেটিভ বোধ একটু-আধটু অনুভব করাকে অস্বাভাবিক ভেবে নিজের টেনশন বাড়াবেন না।

তবে হ্যাঁ, সারাদিন সারাক্ষণ আপনার মাথায় যদি শুধু দুশ্চিন্তা আর খারাপ আশঙ্কাই ঘুরতে থাকে, কোনপ্রকার আশা বা ভালো চিন্তা না আসে, অথবা করোনা সংক্রান্ত দুশ্চিন্তার কারণে যদি আপনার স্বাভাবিক নিত্যদিনের কর্মকাণ্ড ব্যাহত হয়, শরীর অসুস্থ লাগে- সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে নিজের মানসিক ফিটনেস নিয়ে আরও যত্নশীল ও সাবধান হতে হবে।

প্রথমত, নিজের মনকে দুশ্চিন্তা থেকে সরিয়ে আনন্দময় কিছুতে ব্যস্ত করুন। ভেবে দেখুন, কী করতে ভালো লাগে আপনার, কী করলে আনন্দ পান, কী আপনার শখ, কী আপনার সুখ, যা ঘরে থেকে করা যায়। অথচ এতদিন সময়ের অভাবে করা হয়নি!

বই পড়ুন, মুভি দেখুন। বারান্দায় বা ছাদে গার্ডেনিং করুন। শখ হলে গান প্রাকটিস করুন অথবা অভিনয়। অথবা পছন্দের কোন টুর্নামেন্টের লাইভ। রেসিপির ভিডিও দেখে নতুন নতুন রান্নাও ট্রাই করতে পারেন। শান্তি খুঁজে নিন পরিবারের শিশুদের সাথে খেলাধুলা করে বা মুরুব্বিদের সাথে সময় কাটিয়ে। ধর্ম-কর্মে নিয়োজিত থেকেও মনের শান্তি খুঁজে নিন।

এভাবে করোনা নিয়ে দিন-রাত না ভেবে উপরে উল্লেখিত কাজগুলো বা যা কিছু আপনাকে সুখ শান্তি আনন্দ দেয়, তা নিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। মন প্রফুল্ল থাকবে।

দ্বিতীয়ত, দিন-রাত করোনা আপডেট নেওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। দিন-রাত ব্রেকিং নিউজ খোঁজার প্রয়োজন নেই। করোনা কোন খেলা নয় যে, প্রতিটি বলের খবর আপনার সেকেন্ডে সেকেন্ডে জানতে হবে। বরং দিনে এক-আধবার একটি নিউজ দেখা বা পড়াই যথেষ্ট।

এ ছাড়া অতি অবশ্যই করোনা নিয়ে সব গুজব, কানাঘুষা বা ফেক নিউজ থেকে দূরে থাকুন। ফেসবুক বা ইউটিউবে দেখা সবকিছু বিশ্বাস করবেন না। করোনা নিয়ে পরিস্থিতি জানতে বেছে বেছে দু-তিনটি সরকারি ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট বা সংবাদ দিনে একবার ফলো করুন, সেটাই যথেষ্ট। বাকি সময়টা ভালো কাজে ব্যয় করুন।

তৃতীয়ত, ব্যায়াম করুন। অসংখ্য বৈজ্ঞ্যানিক গবেষণা নির্দ্বিধায় প্রমাণ করেছে যে, ব্যায়াম মানসিক স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। খুব ভালো হচ্ছে- খোলা প্রাকৃতিক পরিবেশে এক্সারসাইজ করা, হাঁটা বা জগিং করা। লকডাউনে সেটি সম্ভব না হলে ঘরে বসেই করুন হালকা এক্সারসাইজ, ফ্রি হ্যান্ড, জুম্বা ড্যান্স অথবা যোগ ব্যায়াম। যেটা ভালো লাগে। ইউটিউবে অথেন্টিক ভিডিও পাবেন বিভিন্ন এক্সারসাইজের, যেগুলো ফলো করতে পারেন। খুঁজে নিন।

চতুর্থত, ‘নিউ নরমাল’ অনুযায়ী নিজের রুটিন আবার ঠিক করে নিন। নতুন করে সারাদিনের একটি রুটিন করে ফেলুন। ব্যালেন্সড রুটিন যেটাতে সবকিছু থাকবে। করোনা ও লকডাউনে আগের প্রাত্যহিক জীবন আর খাটছে না। এখন জীবন হচ্ছে ‘নিউ নরমাল’। এ নিউ নরমালে মানাতে না পারলে দিনে-রাতে প্রায় সময় নিজেকে খাপছাড়া, অসহায় বা বিরক্ত লাগতে পারে। একটি নতুন সুন্দর ডেইলি রুটিন তৈরি করে সেটি অনুসরণ করে চললে এমনটি হবে না।

পঞ্চমত, নিজের ঘুমকে রক্ষা করুন। সুনিদ্রায় কোন ছাড় দেওয়া যাবে না। অথচ লকডাউনের সময়টাতেই দেখা যায় অনেকে সবচেয়ে বেশি ঘুমায়। এটা ঠিক নয়। সুন্দর গভীর ঘুম মানসিক স্ট্রেস কমায়, শরীরের ক্লান্তিও দূর করে। সবকিছু বিশ্রাম পায়, তরতাজা হয়। প্রতিদিন কমপক্ষে আট ঘণ্টা গভীর সুনিদ্রায় থাকুন। রাত দশটার আগেই গোছানো, পরিচ্ছন্ন, শান্তিময় বিছানায় ঘুমোতে চলে আসুন।

ষষ্ঠত, যা কিছু বাস্তবিকভাবেই দুশ্চিন্তার কারণ, সেটি প্রতিনিয়ত না এড়িয়ে চলাই ভালো। উদাহরণস্বরূপ যেমন হয়তো আপনি লকডাউনে আর্থিক ঝুঁকিতে আছেন। সেক্ষেত্রে এ ঝুঁকি থেকে নিজের মনকে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করে কার্যত বেশিদিন মানসিক শান্তি পাবেন না। বরং সমস্যার মুখোমুখি হোন। আগামী কয়েক মাসের নিজের আর্থিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে ভেবে-চিন্তে পরিকল্পনা করে ফেলুন, কৌশল বের করুন, ডায়রিতে লিখে ফেলুন। মানসিকভাবে নিশ্চিন্ত থাকবেন।

সপ্তমত, জেনে রাখুন কোন কিছুই একশভাগ পারফেক্ট বা সুনিপুণ হয় না। পৃথিবীতে সবকিছু আপনার স্বপ্ন, ইচ্ছে বা আশামতো হয় না। বরং জীবন অমৃতের মাঝে কিছু কিছু গরলও আসে। করোনার সময়টাও এমনই। এ সময়ে কিছু ভুল, কিছু ক্ষতি, কিছু বাধা-বিঘ্ন আসবেই যা হয়তো আপনি জীবনে আগে কখনো দেখেননি। তাতে কিছু আসে যায় না। ভালো থাকার চেষ্টাটা শতভাগ করুন। কিন্তু যদি শতভাগ না হয় তাতে অস্থির হবেন না। ধীরে-সুস্থে বাস্তবতা মেনে যতটুকু সাজিয়ে-গুছিয়ে সাবধানে প্রশান্তিতে থাকতে পারেন, সেটিই একশভাগ সফলতা।

অষ্টমত, আত্মার বন্ধনগুলোয় জোর দিন। নিজেকে একা করে ফেলবেন না। এক ছাদের নিচে যারা একসাথে আছেন, অর্থাৎ পরিবারের সদস্যদের সাথে সারাদিন ভালো সময় কাটাতে থাকুন। তাদের সাথে সুআচরণ করুন, তাদের কথা শুনুন এবং নিজেকে শেয়ার করুন। যারা এক ছাদের নিচে নেই এবং লকডাউনে দেখা করার সুযোগ পাচ্ছেন না, এমন পরিবার, আত্মীয়, কলিগ, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে নিয়মিত ভিডিও কলে, ফোন কলে, মেসেজে নিজেকে আদান-প্রদান করুন। সবার সঙ্গে প্রযুক্তির মাধ্যমে সংযুক্ত থাকুন। সবার প্রফুল্ল সময় কাটান, মানসিক বন্ধন দৃঢ় করুন।

বন্ধন দৃঢ় করুন সৃষ্টিকর্তার সঙ্গেও। নিয়মিত প্রার্থনা করুন। দীর্ঘসময় ধরে প্রার্থনায় নিজের সুখ, দুঃখ, স্বপ্ন, ইচ্ছা, চিন্তা, দুশ্চিন্তা সব কিছু সৃষ্টিকর্তার সাথে শেয়ার করুন, তাকে জানান। মন ভারমুক্ত থাকবে। শুভ কামনা সবার জন্য।

লেখক: মলিকুলার বায়োলজিস্ট, কোভিড-১৯ ফ্রন্টলাইনার; ইলেক্টিভ ফেলো (এক্স), আইসিডিডিআরবি।


উপদেষ্টা সম্পাদক: ডি. মজুমদার
সম্পাদক: মীর আক্তারুজ্জামান

সর্বস্বত্ব: এমআরএল মিডিয়া লিমিটেড
ঢাকা অফিস: মডার্ণ ম্যানসন (১৫ তলা), ৫৩ মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০
ময়মনসিংহ অফিস: হাসনাইন প্লাজা (দ্বিতীয় তলা), ৭ মদন বাবু রোড, ময়মনসিংহ-২২০০
সেলফোন: ০৯৬১১-৬৪৫২১৫, ০৯৬৯৭-৪৯৭০৯০ ই-মেইল: jagrota2041@gmail.com
ফোন :
ইমেইল :