, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ অনলাইন সংস্করণ

মাকে নিয়ে আবেগঘন গল্প শোনালেন তারা

  ফিচার ডেস্ক

  প্রকাশ : 

মাকে নিয়ে আবেগঘন গল্প শোনালেন তারা

আজ বিশ্ব মা দিবস। মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাতে বিভিন্ন দেশে মে মাসের দ্বিতীয় রোববার দিনটি পালিত হয়। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের দুঃসময়ে এলো দিনটি। অনেকেই হয়তো মায়ের কাছে নেই। আবার অবসরে অনেকেই মায়ের কাছে। আজ মা দিবসে কয়েকজন জানিয়েছেন তাদের মায়ের গল্প। বিস্তারিত জানাচ্ছেন মো. রাকিবুল হাসান—

লিমা খাতুন বলেন, ‘পাঁচ বছর ধরে হোস্টেল থাকছি। পড়াশোনার কারণেই বাড়িতে থাকা হয় না। প্রত্যেকবার বাড়ি থেকে বিদায় নেওয়ার সময় ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদেন মা। ছোটবেলা থেকেই মায়ের আঁচল ধরে হাঁটতাম। অভ্যাসটি রয়েই গেছে। এখনো মায়ের সাথে ঘুরতে গেলে আঁচল ধরেই হাঁটি। মায়ের আঁচলের তলে যে শান্তি আছে, তা অন্য কিছুতে নেই।’

হাসিব মীর বলেন, ‘বয়স তখন ৮। ৩য় শ্রেণিতে পড়ি। মা-ই গৃহশিক্ষক। পরীক্ষার আগে সব বই পড়িয়ে দিতেন। প্রত্যেক পরীক্ষায় ভালোভাবেই উত্তীর্ণ হই। একদিন মাকে বলি, একটি পরীক্ষা একা পড়েই দেব। মা রাজি হন। সেই পরীক্ষার রেজাল্ট দেয়। দুই বিষয়ে ফেল করি। এ নিয়ে মা কিছুই বলেননি। আবার পড়ানো শুরু করেন। আমি-ই জানি, মা আমার কী। আজীবন পাশে রেখে শিখিয়ে গেছেন তিনি। মায়ের দোয়া ছাড়া কাজে সফলতা আসে না। এখন বয়স বিশ। এখনো মায়ের থেকে শিখি।’

খালেদ হোসেন বলেন, ‘রাতে ঘুমানোর সময় গল্প শোনাতেন মা। কারেন্ট চলে গেলে হাতপাখায় বাতাস করতেন। যেদিন আমি শহরে আসবো; সেদিন মা ব্যস্ত হয়ে যেতেন। কতশত জিনিস গুছিয়ে দিতেন। ছোটবেলা থেকে দেখছি—মায়ের কোনো আবদার নেই। কোনো অভিযোগ নেই। একবার মা অসুস্থ হয়ে গ্রামের হাসপাতালে ভর্তি হন। সবাইকে বলেছিলেন, আমাকে যেন না জানায়। পরে ফোনে জানতে পারি মায়ের অসুখ। সেদিন অনেক কেঁদেছি। বড় হয়ে মাকে ভালো ডাক্তার দেখাবো। মায়ের না বলা আবদার পূরণ করবো।’

জাবির সালেহীন দ্বীপ্র বলেন, ‘মধুর এক শব্দ মা। ১০ মাস ১০ দিন গর্ভে ধারণ করেন তিনি। পৃথিবীর আলো দেখান। তাকে নিয়ে আছে হাজারো স্মৃতি। খুব ছোটবেলায় স্কুল থেকে পিকনিকে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে নাগরদোলায় ওঠার ভীষণ বায়না করি। মা বাধ্য হয়ে আমাকে নিয়ে নাগরদোলায় ওঠেন। কিন্তু মজার কথা হলো- নাগর দোলা থেকে নেমে, মায়ের বদলে অন্য মহিলার হাত ধরে চলে যাই। বুঝে উঠতেই কান্না শুরু করি। এক পলকের জন্য মাকে হারিয়ে ফেলি। সেদিন বুঝেছি মা হারানোর কী কষ্ট। পরে মাকে খুঁজে পেয়ে অনেকক্ষণ জড়িয়ে কান্না করি।’

খালিদ হাসান বলেন, ‘ছোটবেলায় দুষ্টুমি করতাম অনেক। একদিন স্কুল থেকে বাড়ি না গিয়ে মাঠে খেলতে গেছি। খেলা শেষে ৫টা বাজে। এদিকে আমাকে না পেয়ে শিক্ষকরাসহ খোঁজাখুঁজি শুরু করেছে আম্মু। ওইদিন ভয়ে বাসায় যাইনি। দূরে এক বাড়িতে বসে টেলিভিশন দেখছি। তখন আম্মু আমাকে খুঁজে পান। সেদিন অনেক বকাঝকা ও মার খেয়েছি। পরদিন স্কুলে গিয়েও খেয়েছি মার। আম্মুর সেই বকাঝকা আর মার খাওয়া সোনালি শৈশবের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। মায়ের শাসনে থাকে ভালোবাসা।’

তাহমিদ খান বলেন, ‘মা আমাকে কথা বলা শিখিয়েছেন। ভালো স্কুলে ভর্তি করেছেন। প্রখর রোদে কিংবা বৃষ্টিতে ভিজে স্কুলের গেটে দাঁড়িয়ে থাকতেন। মায়ের জন্য নির্দিষ্ট কোনো দিন হয় না-কি? মা কখনো ব্যস্ততা দেখাননি। অবহেলা কি বুঝতে দেননি। স্বার্থহীনভাবে শত কষ্ট লুকিয়ে সন্তানের মুখে হাসি ফোটান মা।’

লেখক: ফিচার লেখক।

  • সর্বশেষ - ফিচার