, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ অনলাইন সংস্করণ

ময়মনসিংহে দুই উপজেলার ৩০ গ্রাম প্লাবিত

  নিজস্ব প্রতিবেদক

  প্রকাশ : 

ময়মনসিংহে দুই উপজেলার ৩০ গ্রাম প্লাবিত

টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে ২ মাসের মাথায় আবার প্লাবিত হয়েছে ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী দুই উপজেলা হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া। দুই দিন ধরে চলা অতিবৃষ্টি আর ঢলে প্লাবিত হয়েছে উপজেলা দুটির অন্তত ৩০ গ্রাম। সেই সঙ্গে পানির নিচে রয়েছে অন্তত ৩৫০ হেক্টর ফসলি জমি।

বুধবার (২৫ আগস্ট) বিকেল থেকে টানা বৃষ্টি ও মধ্যরাতে পাহাড়ি ঢলে শুরু হয় বন্যা। শুক্রবারও (২৭ আগস্ট) অব্যাহত বৃষ্টিপাতের ফলে রয়েছে পানি বাড়ার আশঙ্কাও। পানি কয়েকদিন স্থায়ী হলে ফসলের চরম ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

চলতি বছরের গত জুলাইয়ের শুরুতে পাহাড়ি ঢলে বাঁধ ভেঙে এ দুই উপজেলার অন্তত ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। হাজারো মানুষকে পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন কাটাতে হয়। সেই ক্ষতি সামলে ওঠার আগেও ফের প্লাবন দেখা দিয়েছে দুটি উপজেলায়। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ধোবাউড়া উপজেলায় নেতাই নদীর বেড়িবাঁধ সংস্কারের আগেই আবার পানি বেড়ে প্লাবিত হয়েছে অন্তত ২০ গ্রাম। ঘোষগাঁও, পোড়াকান্দুলিয়া ও বাঘবেড় ইউনিয়নের গ্রামগুলো বেশি প্লাবিত হয়েছে।

গত বুধবার বিকেল থেকে বর্ষণের সঙ্গে রাতে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের স্রোতে ঘোষগাঁও ইউনিয়নের ভালুকাপাড়া গ্রামে বাঁধে ভাঙন দেখা দেয়। পানিতে নদীর ঘোঁষগাও-কলসিন্দুর বেড়িবাঁধে রায়পুর, পূর্ব ভালুকাপাড়া এবং ভালুকাপাড়ার তিনটি স্থানে ভাঙন দেখা দেয়।

এছাড়া গামারীতলা ইউনিয়নের কলসিন্দুর এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা বিল্লাল হোসেনের বাড়ির পাশে এবং কামালপুর এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। এতে ভারুকাপাড়া, বল্লভপুর, জরিপাপাড়া, রায়পুর, চকপাড়া, লাঙ্গলজোড়া, আংগড়াকান্দা, পাতাম, মদনপুর, গবিনপুর, বেতগাছিয়া, বহভিটা, ঘোষগাঁও, গলইভাঙাসহ অন্তত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

গলইভাঙা গ্রামের বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক শামীম আহমেদ বলেন, বিকেল থেকে বৃষ্টি হলেও রাত ১২টার দিকে হঠাৎ পাহাড়ি ঢলে তার মাছের ঘের তলিয়ে যায়। বাড়িতে পানি ওঠে। দুই দফায় প্লাবনে তার অন্তত ১৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

ঘোষগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল হক বলেন, পূর্বে ভেঙে যাওয়া নেতাই নদীর বাঁধ সংস্কারের আগেই আবারও বন্যা দেখা দিয়েছে। এবারের পানিতে কৃষকের চরম ক্ষতি হবে। 

হালুয়াঘাটের ভূবনকুড়া, গাজীরভিটা, নড়াইল, কৈচাপুর এলাকার অন্তত ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে রাত ১২ টার দিকে পাহাড়ি ঢল শুরু হলে প্লাবিত হয় বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রাম গুলো। এতে উপজেলাটির আড়াইশ হেক্টর আমন ধানের জমি পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে বলে জানিয়ে কৃষি বিভাগ। 

গাজিরভিটা গ্রামের কৃষক রহমান মিয়া ও শহীদ মিয়া জানান, মাত্র কিছু দিনের ব্যবধানে দু’বার পানির ধাক্কা সামলাতে হচ্ছে। প্রথমবারের ধকল সামলে উঠার আগেই আবারও পানিতে সব তলিয়ে গেছে। 

হালুয়াঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ১৪৬ মিলিমিটারের বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে ২৫০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। তবে পানি কমে গেলে তেমন ক্ষতি হবে না। পানি না কমলে ফসলের ক্ষতি হবে। 

ধোবাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোলাম সারোয়ার তুষার বলেন, পানিতে অন্তত ১২০ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। পানি স্থায়ী হলে ক্ষতি হবে কৃষকের। 

হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রেজাউল করিম বলেন, প্লাবনে ১০টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুই দিন পানি বাড়লেও এখন কিছুটা কমতে শুরু করেছে। 

ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাফিকুজ্জামান বলেন, কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ফসলি জমিও পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। তবে বড় কোনো ক্ষতি এখনও হয়নি।

  • সর্বশেষ - ময়মনসিংহ অঞ্চল