০১ অক্টোবার ২০২১, ১০:৫০ মিঃ
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্তবর্তী এলাকায় সন্ধ্যা নামতেই ওপারের পাহাড় থেকে খাবারের সন্ধানে নেমে আসে হাতির পাল। তাণ্ডব চালায় ফসলি জমি ও ঘরবাড়িতে। শুরু হয় কৃষকদের সঙ্গে হাতির পালের যুদ্ধ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শতশত কৃষক টর্চলাইট লাঠি, মশাল, পটকা ও বাঁশি নিয়ে নেমে পড়েন হাতি তাড়াতে। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে এই একই অবস্থা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সীমান্তে হাতি আর মানুষের যুদ্ধ দীর্ঘদিনের। তবে সীমান্তবর্তী ভূবনকুড়া ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে বিগত কয়েক বছর হাতির আক্রমণ কিছুটা কম ছিল। তবে এ বছর প্রতি রাতে হাতির দলের লোকালয়ে চলে আসা যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। সন্ধ্যা হলেই দল বেঁধে অন্তত ৫০ থেকে ৭০টি বন্য হাতি খাবারের সন্ধানে চলে আসে লোকালয়ে। এতে আতঙ্কে রাত কাটে সীমান্তবর্তী এলাকার কৃষকদের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সন্ধ্যা নামতেই জামগড়া মহিষলেটি, কোচপাড়া, রঙ্গমপাড়া এবং কড়ইতলী এলাকায় চলে হাতির তাণ্ডব। এরই মধ্যে স্থানীয় কৃষকদের জমির রোপা আমন ধানে খেয়ে ফেলার পাশাপাশি নষ্ট হয়েছে হাতির পায়ের চাপে। এতে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, সীমান্তের অন্তত তিন কিলোমিটার এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া না থাকায় বন্য হাতির দল অবাধে লোকালয়ে প্রবেশ করে। এতে এসব এলাকার মানুষের সবসময় আতঙ্কে দিন কাটে। বোরো এবং আমন মৌসুমে ফসল রক্ষায় কাটাতে হয় নির্ঘুম রাত। তখন হাতি থেকে ফসল রক্ষা করার জন্য স্থানীয়ভাবে টর্চলাইট, মশাল, পটকা ও বাঁশি বাজিয়ে রাত জেগে পাহারা দিতে হয়। হাতি তাড়ানোর মতো আধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয়রা।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, যে জমি থেকে সারা বছরের খাদ্য চাহিদা পূরণ হতো এ বছর সেই জমির ধান সব নষ্ট করে দিয়েছে হাতি। এখন বছর পার করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। হাতি অবাধে জমিতে চলে আসার বিষয়টির স্থায়ী সমাধান চান তারা।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম সুরুজ মিয়া জানান, পরিষদের তহবিল থেকে কেরোসিন, টর্চলাইট ও পটকা সরবরাহ করা হয়েছে কৃষকদের। এছাড়াও স্থানীয়দের নিয়ে হাতি তাড়াতে গ্রামে টিম করে দেওয়া হয়েছে। তবে কৃষকদের ক্ষতির পরিমাণ কমাতে এ বিষয়ে একটি স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন বলেও জানান তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান জানান, হাতির আক্রমণে অন্তত ৪০ একর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।
হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম জানান, প্রতি বছরের চাইতে এ বছর হাতির অত্যাচার বেশি। এতে কৃষকদের ক্ষতিও বেশি হচ্ছে। এমন অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য স্থানীয় যুবকদের দিয়ে ‘হাতি প্রতিরোধ টিম’ গঠন করা হয়েছে। হাতি তাড়াতে প্রয়োজনীয় টর্চলাইট, লাঠি, মশাল, পটকা ও বাঁশি দেয়া হয়েছে। এগুলো নিয়ে রাত জেগে কৃষকরা পাহারা দেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা অনুযায়ী তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
এ বছর হাতির তাণ্ডব বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি জানান, রাত হলে ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকায় হাতি বেশি তাণ্ডব চালালে সীমান্তের গেট খুলে দেয় বিএসএফ। এতে বাংলাদেশে সীমান্তের কিছু এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া না থাকায় অবাধে হাতির পাল চলে আসে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। বিষয়টি বিজিবি এবং বনবিভাগ তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছে বলেও জানান তিনি।
সর্বস্বত্ব: এমআরএল মিডিয়া লিমিটেড
ঢাকা অফিস: মডার্ণ ম্যানসন (১৫ তলা), ৫৩ মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০
ময়মনসিংহ অফিস: হাসনাইন প্লাজা (দ্বিতীয় তলা), ৭ মদন বাবু রোড, ময়মনসিংহ-২২০০
সেলফোন: ০৯৬১১-৬৪৫২১৫, ০৯৬৯৭-৪৯৭০৯০
ই-মেইল: jagrota2041@gmail.com
ফোন :
ইমেইল :