2024-05-05 08:33:02 am

খরচ বাড়লো ভর্তা-ভাতের

www.focusbd24.com

খরচ বাড়লো ভর্তা-ভাতের

২৬ অক্টোবার ২০২১, ১৯:২০ মিঃ

খরচ বাড়লো ভর্তা-ভাতের

নিত্যপণ্যের লাগামহীন দামে নাভিশ্বাস উঠছে নিম্নআয়ের মানুষের। দফায় দফায় বাড়ছে চাল, ডাল, তেল, চিনি, পেঁয়াজের দাম। এতে সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষের নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। ঊর্ধ্বমূল্যের বাজারে অনেকের মুখে মাছ-মাংস জুটছে না দিনের পর দিন। দিনভর হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দু’মুঠো ভর্তা-ভাত জোটাতেও হিমশিম খাচ্ছেন অনেকে। পেঁয়াজ-তেল-চিনি-ডিমের পর রাজধানীর বাজারগুলোতে আলুর দাম বাড়ায় এখন ভর্তা-ভাতেও বেড়েছে খরচ। এ নিয়েই যত দুশ্চিন্তা সীমিত আয়ের মানুষের।

আলুর এ বাড়তি দাম দরিদ্র মানুষের জন্য মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। খেটে খাওয়া মানুষেরা বলছেন, মাছ-মাংস ও সবজির যে দাম তাতে বেশিরভাগ সময় ভর্তা-ভাত খেয়েই তাদের দিনাতিপাত হয়। হঠাৎ আলুর দাম বাড়ায় ভর্তা-ভাতের খরচ জোগাড়ও কষ্টকর হবে তাদের জন্য।

মঙ্গলবার (২৬ অক্টোর) সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫-২৭ টাকায়, যা দুদিন আগেও ছিল ১৮-২০ টাকা।

আলুর দাম বাড়ার বিষয়ে মালিবাগ হাজীপাড়ার ব্যবসায়ী মো. জাহাঙ্গীর বলেন, গত রোববারও এক কেজি আলু ২০ টাকা বিক্রি করেছি। কিন্তু পাইকারিতে দাম বাড়ায় এখন ২৫ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন কোল্ড স্টোরেজে আলুর মজুত প্রায় শেষ হয়ে গেছে তাই দাম বাড়ছে। সামনে আলুর দাম আরও বাড়তে পারে।

কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ী সাইদুর বলেন, আলুর মজুত শেষের পথে তাই মজুত করা আলুর দাম বেড়েছে। তবে এখন বাজারে নতুন আলু আসবে। ইতোমধ্যে কিছু নতুন আলু এসেছে। এখন যে নতুন আলু আসছে তার কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা। সামনে নতুন আলুর সরবরাহ বাড়লে দাম কমতে পারে।

আলুর আকস্মিক দাম বাড়ায় ভোক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাজারে সংশ্লিষ্টদের নজরদারি না থাকায় হঠাৎ দাম বেড়েছে। অথচ শ্রমজীবী মানুষের উপার্জন বাড়ছে না। ফলে এখন ভর্তা-ভাত খেয়ে বাঁচাও তাদের পক্ষে কঠিন হবে।

রাজধানীর রামপুরা বাজারে আলুর দাম শুনে বিরক্তি প্রকাশ করতে দেখা যায় মো. মিঠুন নামের এক ভোক্তাকে। তিনি বলেন, বাজারে সবকিছুর দাম অস্বাভাবিক। তেল, পেঁয়াজ, চিনির দাম তো আকাশচুম্বী। বয়লার মুরগির কেজিও ২০০ টাকার কাছাকাছি। এখন আলুর দামও বেড়েছে। এভাবে সবকিছুর দাম বাড়লে আমরা সংসার চালাবো কীভাবে?

তিনি বলেন, ‘আমি ১০ বছর ধরে ঢাকায় আছি। আগেও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়তো। কিন্তু এবার দাম বাড়ার প্রবণতা তুলনামূলক অনেক বেশি। অথচ করোনায় আমাদের মতো মানুষদের আয়ও কমেছে। সীমিত আয়ের মানুষদের পক্ষে ঢাকায় টিকে থাকাই মনে হচ্ছে অসম্ভব।’

রিকশাচালক সামাদ বলেন, বাড়তি দামের কারণে গরু ও ছাগলের মাংস খাওয়া অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছি। মাসে দু-একদিন ব্রয়লার মুরগি খেতাম, তাও বন্ধ। বেশিরভাগ সময় আলু ভর্তা আর ডাল দিয়ে ভাত খাই। এখন সে পথও বন্ধ হবে মনে হচ্ছে। আলুর দাম বাড়ছে। এ ঊর্ধ্বমূল্য কোথায় গিয়ে থামবে, বলা মুশকিল।

তিনি বলেন, দিন দিন সবকিছুর দাম শুধু বাড়ছেই, কমার কোনো লক্ষণ নেই। এভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় আমরা খুব কষ্টে আছি। সারাদিন রিকশা চালিয়ে যা আয় করি চাল, তেল, নুন (লবণ) কিনতেই শেষ হয়ে যায়। ছেলে-মেয়ের সামান্য আবদারও পূরণ করতে পারি না। ওদের জন্য একটু ভালো খাবার, ভালো পোশাক দিতে পারি না। কী কষ্টে যে দিন পার করছি, বলে বোঝাতে পারবো না।

পোশাককর্মী আলেয়া বলেন, দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে ন্যায্যমূল্যের দোকান থেকে চাল ও আটা কিনি। পেঁয়াজ ও তেল টিসিবির ট্রাক থেকে কেনার চেষ্টা করি। এরপরও কুলিয়ে উঠতে পারছি না। করোনার কারণে একদিকে আমাদের আয় কমেছে, অন্যদিকে সবকিছুর দাম বাড়ছে। মাসে যে টাকা বেতন পাই, তা ভর্তা-ভাত খেয়েই ফুরোয়। অনেক দিন মাংস চোখেও দেখিনি! এরপরও মাস শেষে হাতে টাকা থাকে না। এখন আলুর দাম বাড়ায় আমাদের মতো মানুষের কষ্টটা আরও বাড়লো।

স্বস্তি নেই মুরগি-সবজিতে

রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করছেন ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকা কেজি দরে। পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগির কেজি ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকা। লাল লেয়ার মুরগির কেজি ২২০-২৩০ টাকা।

মুরগির পাশাপাশি সবজির দামও এখন বেশ চড়া। ব্যবসায়ীরা মানভেদে টমেটো ও গাজরের কেজি বিক্রি করছেন ১০০ থেকে ১৬০ টাকায়। শীতের আগাম সবজি শিমের কেজি ৮০ থেকে ১২০ টাকা। ঝিঙে বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা কেজি দরে। ছোট ফুলকপি ও বাঁধাকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকায়। মুলার কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা।

এছাড়া করলা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ থেকে ৬০, পটল ৪০ থেকে ৫০, ঢেঁড়স ৪০ থেকে ৬০ ও বরবটি ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া কাঁচকলার হালি ৩০-৩৫ টাকা, লালশাকের আঁটি ১০ থেকে ২০ টাকা, মুলা শাকের আঁটি ১৫-২০ টাকা আর কলমি শাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ১০ টাকায়।













উপদেষ্টা সম্পাদক: ডি. মজুমদার
সম্পাদক: মীর আক্তারুজ্জামান

সর্বস্বত্ব: এমআরএল মিডিয়া লিমিটেড
ঢাকা অফিস: মডার্ণ ম্যানসন (১৫ তলা), ৫৩ মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০
ময়মনসিংহ অফিস: হাসনাইন প্লাজা (দ্বিতীয় তলা), ৭ মদন বাবু রোড, ময়মনসিংহ-২২০০
সেলফোন: ০৯৬১১-৬৪৫২১৫, ০৯৬৯৭-৪৯৭০৯০ ই-মেইল: jagrota2041@gmail.com
ফোন :
ইমেইল :