2024-05-07 05:12:55 pm

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে দ্বিগুণ রেমিট্যান্স

www.focusbd24.com

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে দ্বিগুণ রেমিট্যান্স

১১ এপ্রিল ২০২২, ১৬:০৮ মিঃ

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে দ্বিগুণ রেমিট্যান্স

দেশে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি। যাত্রার ৮ বছরে দেশের ২৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংক লাইসেন্স নিয়ে এ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ টাকা জমা, উত্তোলন, স্থানান্তর, পরিষেবা বিল পরিশোধ ও রেমিট্যান্সের টাকাসহ সাধারণ সব সেবাই পাচ্ছেন এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে।

ঘরের কাছে ব্যাংকিং সুবিধা পাওয়ায় দিন দিন বাড়ছে গ্রাহক সংখ্যা। একইসঙ্গে বাড়ছে আমানত ও ঋণের পরিমাণও। দেশে কার্যক্রম শুরুর মাত্র ৮ বছরেই এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে গ্রাহক ছাড়িয়েছে এক কোটি ৪০ লাখ। এ সেবার আওতায় গ্রাহক আমানত হিসেবে জমা করেছেন ২৪ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা। এছাড়া এক বছরে ব্যাংকের এজেন্টের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৮২ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা। এক বছরে অ্যাকাউন্ট বেড়েছে ৪৫.৬৭ শতাংশ, আমানত বেড়েছে ৫২ শতাংশ। প্রবাসী-আয় বেড়েছে ৬৮.৭১ শতাংশ। 

এজেন্ট ব্যাংকিং নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২১ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিকের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

dhakapost

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ২৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের লাইসেন্স নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ব্যাংকগুলোতে এজেন্ট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজারে ৯৫২টি। দেশব্যাপী ১৯ হাজার ২৪৭ আউটলেটে দেওয়া হচ্ছে ব্যাংকিং সেবা। এক বছর আগে এজেন্টের সংখ্যা ছিল ১১ হাজার ৯২৫টি আর আউটলেট ছিল ১৫ হাজার ৯৭৭টি। এক বছরের ব্যবধানে এজেন্ট বেড়েছে ২০২৭টি এবং আউটলেট ৩২৭০টি।  

২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে গ্রাহকের হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৪০ লাখ ৪৭ হাজার ৪৯১টি। ২০২০ সালের ডিসেম্বের হিসাব সংখ্যা ছিল ৯৬ লাখ ৪৩ হাজার ১৬৩টি। এক বছরে বেড়েছে ৪৪ লাখ ৪ হাজার ৩২৮টি বা ৪৫.৬৭ শতাংশ। এসব হিসাবে ২০২১ সালে আমানতের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৪ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা। তার আগের বছর আমানত ছিল ১৫ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে আমানত বেড়েছে ৮ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা বা ৫২ শতাংশ।

আমানতের পাশাপাশি ঋণ বিতরণও বেড়েছে। আলোচিত সময়ে এজেন্টের মাধ্যমে ব্যাংকগুলো ৫ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত যা ছিল এক হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে এজেন্টের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ বেড়েছে তিন হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা।

dhakapost

এজেন্ট ব্যাংকিং প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বিতরণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে ব্যাংকের এজেন্টের মাধ্যমে ৮২ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকার রেমিট্যান্স বিতরণ করা হয়েছে। এ অংক আগের বছরের চেয়ে ৬৮ দশমিক ৭১ শতাংশ বেশি। ২০২০ সাল এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ৪৮ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছিল।

এজেন্টের মাধ্যমে রেমিট্যান্স সংগ্রহের দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে আছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। এজেন্টের মাধ্যমে আসা মোট প্রবাসী আয়ের ৫৪ শতাংশ বা ৪৪ হাজার ১৬৫ কোটি টাকা এসেছে ব্যাংকটির মাধ্যমে। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক। এ ব্যাংকের এজেন্টের মাধ্যমে এসেছে ১৯ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকার রেমিট্যান্স। যা এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মোট রেমিট্যান্সের ২৪ শতাংশ। ৯ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা বা ১১ শতাংশ এসেছে ব্যাংক এশিয়ার মাধ্যমে; তাদের অবস্থা তৃতীয়। এছাড়া চতুর্থ অবস্থানে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক এবং পঞ্চম অবস্থানে আছে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক।
  
জানা যায়, বিশ্বের প্রথম এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু হয় ব্রাজিলে। আর বাংলাদেশে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু হয় ২০১৪ সালে। এর আগে ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর এজেন্ট ব্যাংকিং নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে ব্যাংক এশিয়া পাইলট প্রকল্প হিসেবে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলায় প্রথম এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, গ্রামীণ সুবিধা বঞ্চিত পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাংকিং সুবিধা পৌঁছে দিতে এজেন্ট ব্যাংকিং চালুর উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ও ব্যয়সাশ্রয়ী এ সেবায় গ্রাহক এজেন্ট আউটলেটে সহজেই তার বায়োমেট্রিক বা হাতের আঙুলের স্পর্শে হিসাব পরিচালনা করতে পারেন। ফলে কম খরচে সহজে ব্যাংকিং সেবা পাওয়ায় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কাছে এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ব্যাংকগুলোও এ সেবা প্রদানে আশারুপ আগ্রহ দেখাচ্ছে। সঠিকভাবে পরিচালনা করলে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমের মাধ্যমে আগামীতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিটি ঘরে ঘরে ব্যাংকিংসেবা পৌঁছে দেওেয়া সম্ভব হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে এমন ব্যক্তি এজেন্টশিপ নিতে পারেন। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হয় ন্যূনতম এইচএসসি বা সমমান পাস। এজেন্ট ব্যাংকিং পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সঙ্গে প্রত্যেক এজেন্টের একটি চলতি হিসাব থাকতে হয়। এ সেবার মাধ্যমে ছোট অঙ্কের অর্থ জমা ও উত্তোলন করা যায়। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স স্থানীয় মুদ্রায় বিতরণ, ছোট অঙ্কের ঋণ বিতরণ ও আদায় এবং এককালীন জমার কাজও করতে পারছেন। উপযোগ সেবা বিল পরিশোধের পাশাপাশি সরকারের অধীনে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অর্থ দিতে পারছেন এজেন্টরা। এ ছাড়া নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাংক হিসাব খোলা, ঋণ আবেদন, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের নথিপত্র সংগ্রহ করতে পারছেন এসব এজেন্ট।

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হিসাব খোলা, টাকা জমা ও উত্তোলন, টাকা স্থানান্তর (দেশের ভেতর), রেমিট্যান্স উত্তোলন, বিভিন্ন মেয়াদি আমানত প্রকল্প চালু, ইউটিলিটি সার্ভিসের বিল পরিশোধ, বিভিন্ন প্রকার ঋণ উত্তোলন ও পরিশোধ এবং সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় সরকারি সব প্রকার ভর্তুকি গ্রহণ করা যায়। এজেন্টরা কোনো চেক বই বা ব্যাংক কার্ড ইস্যু করতে পারে না। এজেন্টরা বৈদেশিক বাণিজ্যসংক্রান্ত কোনো লেনদেনও করতে পারেন না। এ ছাড়া এজেন্টদের কাছ থেকে কোনো চেকও ভাঙানো যায় না। মোট লেনদেনের ওপর পাওয়া কমিশন থেকেই এজেন্টরা আয় করেন।


উপদেষ্টা সম্পাদক: ডি. মজুমদার
সম্পাদক: মীর আক্তারুজ্জামান

সর্বস্বত্ব: এমআরএল মিডিয়া লিমিটেড
ঢাকা অফিস: মডার্ণ ম্যানসন (১৫ তলা), ৫৩ মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০
ময়মনসিংহ অফিস: হাসনাইন প্লাজা (দ্বিতীয় তলা), ৭ মদন বাবু রোড, ময়মনসিংহ-২২০০
সেলফোন: ০৯৬১১-৬৪৫২১৫, ০৯৬৯৭-৪৯৭০৯০ ই-মেইল: jagrota2041@gmail.com
ফোন :
ইমেইল :