০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২০, ২১:২৬ মিঃ
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভিশন-২০২১ ও ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা ডিজিটালাইজড করা হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা হচ্ছে শিক্ষার প্রথম ধাপ। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো তাদের শিক্ষাক্ষেত্রে ডিজিটাল ম্যাটারিয়াল ব্যবহার করে থাকে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে পুরো প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা ডিজিটালাইজড করা হয়েছে। ২০১০ খ্রিঃ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রামের উদ্যোগে ৭টি বিদ্যালয়ের ২৩ শিক্ষক দিয়ে পাইলট আকারে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম কার্যক্রম শুরু করা হয়। এ প্রোগ্রামের উদ্যোগে সারাদেশে প্রথম ধাপে ২৫ হাজারের বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়। এই ধারাবাহিকতায় ল্যাপটপ মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর দেওয়া হয় প্রতিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আইসিটি বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
বর্তমানে বাংলাদেশে ৬৫৫২৯ টি বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ ও মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর প্রদান করা হয়েছে এবং প্রতিটি বিদ্যালয়ে কমপক্ষে ০২ জন শিক্ষককে আইসিটি বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে এবং পিটিআইগুলোতে এই প্রশিক্ষণটি চলমান রয়েছে। প্রতিটি বিদ্যালয়ে একটি কক্ষকে ডিজিটাল ক্লাসরুম হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার ও ডিজিটাল পাঠভিত্তিক কনটেন্ট তৈরি করে তা শ্রেণিতে উপস্থাপনের ফলে শিক্ষার্থীদের পাঠের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি স্লাইডের পর স্লাইড দেখার কৌতুহলী ভাব বেড়েছে। অসংখ্য ছবি ও উদাহরণ দিয়ে দূর্বোধ্য পাঠকে সহজবোধ্য করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা নিজেরাও এ সরঞ্জামাদি ব্যবহারের মাধ্যমে দক্ষ হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের পড়াভীতি দূর হয়ে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হচ্ছে। সারা বিশ্বকে যেন মুহূর্তের মধ্যে শিক্ষার্থীদের সামনে হাজির করা যাচ্ছে। এইভাবে শিক্ষার্থীদের শিখন যোগতাগুলো অর্জিত ও মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন হচ্ছে।
ডিজিটাল ক্লাসরুম ও মাল্টিমিডিয়ার
ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে সুপারিশ সমূহ
০১) সকল আইসিটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকগণকে রিফ্রেশার প্রশিক্ষণ প্রদান। ০২) প্রতিটি বিদ্যালয়ে ডিজিটাল ক্লাসরুম-এর জন্য একটি করে নতুন কক্ষ বরাদ্দ ও তৈরি করা। ০৩) যে সকল বিদ্যালয়ে দপ্তরি কাম নিরাপত্তা প্রহরী নেই সেই সব বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ ও মাল্টিমিডিয়ার নিরাপত্তা রক্ষা ও চুরি রোধের জন্য দপ্তরি নিয়োগ করা। ০৪) যে সকল বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ ও মাল্টিমিডিয়া নষ্ট হয়ে গেছে তা তালিকা প্রাপ্তির প্রেক্ষিতে ঠিক করানোর ব্যবস্থা করা ও মেরামত সংক্রান্ত বাজেট প্রদান। ০৫) আইসিটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকগণের ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি ও পাঠদান-এর তথ্য প্রতি মাসে পিটিআই/ইউআরসি/টিআরসিতে প্রেরণ। ০৬) নিয়মিত ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি করে পাঠদান করা শিক্ষককে ‘ধন্যবাদ চিঠি’ প্রেরণ বা বাৎসরিকভাবে যে শিক্ষক সবচেয়ে ভালো কাজ করেছে তাকে উৎসাহমূলক পুরস্কার ও সম্মাননা প্রদান। ০৭) যে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ডিজিটাল যন্ত্রপাতি ব্যবহারে এগিয়ে থাকবে তাদেরকে উৎসাহ প্রদান ও পুরস্কৃত করা। ০৮) প্রতিটি বিদ্যালয়ে মডেম প্রদান। ০৯) প্রতি বছর ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি ও ব্যবহারের উপর প্রথমত ক্লাস্টার ও পরবর্তীতে উপজেলা ও জেলা ভিত্তিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা। ১০) প্রতিদিন দুই/তিনটি করে মাল্টিমিডিয়ায় ক্লাস পরিচালনা বাধ্যতামূলক বা ক্লাস রুটিনে অন্তর্ভুক্ত করা।
অধিক শিক্ষার্থী সম্বলিত শ্রেণি কক্ষে
ইংরেজী বিষয়ে পাঠদান পরিচালনা
অনেক সময় বড় ক্লাস পরিচালনা করা অনেক শিক্ষকের কাছে হয়ত একটু কঠিন হয়। সত্যিকার অর্থে বড় ক্লাস বিভিন্ন দিক থেকে সমৃদ্ধ হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষকের জন্য সহজে লেসন পরিচালনা করতেও সহায়তা করে থাকে। কারণ ক্লাসের প্রত্যেক শিক্ষার্থী স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী এবং ক্লাসে যত বেশী সংখ্যক শিক্ষার্থী থাকবে তত বেশী তাদের সুপ্ত প্রতিভাকে কাজে লাগানো যাবে। বড় ক্লাস পরিচালনা করা এবং প্রত্যেক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণের মাধ্যমে লেসনকে আরও সমৃদ্ধ করার কৌশলগুলো নিম্নরূপ।
ক) যে শিক্ষার্থীরা সামনের সারিতে বসেছে অথবা যারা ইংরেজিতে ভালো শুধু তাদের নয় বরং পুরো ক্লাসের সব শিক্ষার্থীকে শেখাতে হবে। খ) ক্লাসের সব শিক্ষার্থীর সাথে যোগাযোগ করতে সমস্যা হয় তবে তাদের বসার স্থান পরিবর্তন করতে হবে। যেমন: পেছনের সারিতে বসা শিক্ষার্থীদের সামনে এবং সামনের শিক্ষার্থীদের পেছনে বসার ব্যবস্থা করা হলে ক্লাসের সবাই অন্তত সামনে বসার সুযোগ পাবে। গ) প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে আলাদাভাবে তাদের জায়গা পরিবর্তন করে দিতে হবে যেন তারা বিভিন্ন শিক্ষার্থীর সাথে কাজ করার সুযোগ পায়। এই টিপসটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ শিক্ষার্থীরা প্রত্যেকে আলাদা এবং কেউই একেবারে দুর্বল বা পুরোপুরি সবল নয়। প্রত্যেক শিক্ষার্থীই বিভিন্ন দিক থেকে দুর্বল বা সবল হতে পারে। ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষার্থীর সাথে কাজ করতে দিলে তারা বিভিন্ন জনের কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয় শেখার সুযোগ পায় এবং উৎসাহিত হয়। ঘ) শিক্ষার্থীরা যে কাজই করুক না কেন, তাদের কাজের ইতিবাচক মন্তব্য করতে হবে। ক্লাসের বিভিন্ন সময়ে খুব ভাল বলে তাদের উৎসাহিত করতে হবে। শিক্ষার্থীরা ভুল করলে কখনও রাগান্বিত হওয়া যাবে না। তাদেরকে শুধু ভুলগুলো বুঝতে এবং তা শুধরে নিতে সাহায্য করতে হবে। ক্লাসরুমের পরিবেশ ভয় ভীতিকর নয় বরং প্রশান্তিময় ও উপভোগ্য রাখতে হবে। ঙ) ক্লাসে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশী হলে তাদেরকে আরও বেশী করে কথা বলার সুযোগ করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে তাদেরকে জোড়ায় কাজ ও দলীয় কাজের মাধ্যমে কাজ করতে দিতে হবে। এতে মনিটরিং করা সহজ হবে। এ সময় হয়তো এমন কিছু বিষয় নজরে আসবে যা কিনা সামনে দাড়িয়ে ক্লাস নিলে দেখতে পাওয়া সম্ভব নয়। চ) জুটিতে লেখার কাজ করা এবং জুটিতে নিজেদের কাজ যাচাই করে নেওয়াকে উৎসাহিত করতে হবে। এতে শিক্ষার্থীরা দায়িত্ব নিতে শিখে, স্বাধীনভাবে ও আত্মবিশ্বাসের সাথে কাজ করতে শেখে এবং শুধু শিক্ষকের উপর তাদের নির্ভরতার পরিমাণও কমে আসে। ছ) বড় ক্লাসের জন্য জোড়ায় কাজ এবং দলীয় কাজ বেশ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ লেসনে এর মাধ্যমে বেশীরভাগ শিক্ষার্থীই কথা বলার সুযোগ পায়। ক্লাসের সব শিক্ষার্থীই যাতে কমপক্ষে একবার কথা বলার সুযোগ পায় তা নিশ্চিত করতে হবে, কোন শিক্ষার্থী ক্লাসে ইংরেজিতে কথা না বলেই ক্লাস শেষ করা হচ্ছে কিনা তার দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে দায়িত্ব বোধ এবং মনোবল বাড়াতে শিক্ষার্থীদেরকেও নির্দিষ্ট কিছু Classroom Phrase এর ব্যবহার শেখাতে হবে। এতে করে শিক্ষার্থীরা কিছু বুঝতে না পারলেও তা জানতে পারবে। তাদেরকে কিছু কিছু Classroom Phrase এর সাথে পরিচিত করে তুলতে হবে এবং তা ব্যবহার করতে উৎসাহিত করতে হবে। এতে শিক্ষার্থীরা নিজেদের কথাগুলো বলতে উৎসাহিত হবে। লেসনে তাদের গুরুত্ব বুঝতে পারবে। তারা নিজেরা সক্রিয়ভাবে শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করবে এবং শিক্ষকের উপর চাপ কমবে।
লেখক: ফারজানা ববী, সহকারী ইন্সট্রাক্টর, উপজেলা রিসোর্স সেন্টার, সদর, গাজীপুর
সর্বস্বত্ব: এমআরএল মিডিয়া লিমিটেড
ঢাকা অফিস: মডার্ণ ম্যানসন (১৫ তলা), ৫৩ মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০
ময়মনসিংহ অফিস: হাসনাইন প্লাজা (দ্বিতীয় তলা), ৭ মদন বাবু রোড, ময়মনসিংহ-২২০০
সেলফোন: ০৯৬১১-৬৪৫২১৫, ০৯৬৯৭-৪৯৭০৯০
ই-মেইল: jagrota2041@gmail.com
ফোন :
ইমেইল :