০৬ জুলাই ২০২২, ১০:৩২ মিঃ
জীবনযাত্রার ব্যয় দ্বিগুণ বেড়ে যাওয়ায় সাভারের হেমায়েতপুর চামড়া শিল্প নগরীর শ্রমিকরা দিশেহারা। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কোনো সুবিধাই তাদের দেওয়া হয়নি। মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। অথচ শ্রমিক হাত না লাগালে কারখানার চাকা ঘুরবে না, তারা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এমনকি কোনো দুর্ঘটনায় পড়লে প্রাথমিক চিকিৎসারও ব্যবস্থা নেই পুরো শিল্প নগরীতে।
শিল্পনগরীর সব প্লট কারখানা গড়তে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধার কথা বিবেচনায় নিয়ে একটা প্রকল্প আসছে। এরই মধ্যে পরিকল্পনামন্ত্রীর দপ্তরে উঠেছে প্রকল্প। সেটা হলে হাসপাতাল-আবাসনসহ বিভিন্ন সুবিধা থাকবে।
বিসিক কর্তৃপক্ষ বলছে, শিল্প নগরে সব কারখানায় প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অন্য একটি প্রকল্প আসবে সেখানে শ্রমিকদের জন্য আবাসনসহ সব সুবিধা থাকবে।
শ্রমিকদের অভিযোগ, হাজারীবাগের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি জমি (প্লট বরাদ্দ) পেয়েছেন মালিকপক্ষ। মালিকদের ক্ষতিপূরণের অর্থ দেওয়া হয়েছে, প্রণোদনাও পেয়েছেন অনেকে এখনও পাচ্ছেন। অথচ শ্রমিকদের আবাসন, চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল, ক্যান্টিন, স্কুল, শ্রমিকের শিশু সন্তানদের জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার করা হয়নি। থাকা-খাওয়া, যাতায়াত (হাজারীবাগ থেকে শিল্প নগরী) খরচসহ সব ক্ষেত্রে জীবনযাত্রার ব্যয় দ্বিগুণ বেড়ে যাওয়ায় মানবেতর জীবন-যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
ট্যানারি শিল্প গড়ার দীর্ঘসময় পেরিয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত শ্রমিকদের জন্য দেওয়া প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন না থাকা দুঃখজনক। ট্যানারি শ্রমিকরা এমনিতেই বেশি অসুস্থ হন, সেখানে কেমিক্যালের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। অথচ প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থাও নেই। এটা পুরো প্রকল্পের ব্যর্থতাই বলতে হবে।
কথা হয় হেমায়েতপুর শিল্প নগরীর শ্রমিক ইউসুফ সরদারের সঙ্গে। দিন হাজিরায় কাজ করেন তিনি। সর্বসাকুল্যে তার বেতন আসে ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা। চামড়া শিল্পনগরীর শুরু থেকেই তিনি কাজ করছেন। এর আগে কাজ করতেন হাজারীবাগে।
তিনি বলেন, হাজারীবাগ থেকে এখানে আসার আগে স্কুল, শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র, আবাসন সুবিধা, হাসপাতাল দেওয়ার কথা ছিল। এগুলোর কোনোটিও বাস্তবায়ন হয়নি অথচ ছয় বছর চলে গেছে। আমরা হাজারীবাগ থেকে নিজ খরচে আসি এখানে, অনেকে বাস নিজেরাই রিজার্ভ করে নিয়ে আসেন প্রতিদিন। আমাদের আয়ের বড় অংশ যাতায়াতে চলে যায়, আবাসন সুবিধা থাকলে সেটার প্রয়োজন হতো না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকলে আমাদের সন্তানদের মানুষ করতে পারতাম।
তিনি বলেন, জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটছে ট্যানারিতে। খুব কম বেতন এখানে কিন্তু কাজ ছাড়তে পারিনি অন্য কাজও করতে পারি না। সবাই সুবিধা পায় আমরা বঞ্চিতই রয়ে যাই। এখানে বিসিক সবই জানে কিন্তু কিছুই করে না। কোনো কোনো মাসে চলতে ঋণ করা লাগে সংসার তো আছে। আশায় থাকি, কোরবানির সময় হলে বকশিশসহ বেশি কাজ করি। প্রায় দুই মাস বেশি কাজ চলে আয়টাও সে সময় বেশি হয়। এই দুই মাসের বাড়তি আয়ের টাকায় ঋণ শোধ করি। এভাবেই চলে আমাদের ট্যানারি শ্রমিকদের জীবন, যেখানে কোনো সঞ্চয়ের দেখা নেই।
ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সদস্য কামাল হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এ পেশায় আছি। সব মিলিয়ে প্রায় ১৪ হাজার টাকা আয় হয়। এখানে আবাসন সুবিধা না থাকায় হাজারীবাগ থেকে আসা-যাওয়া করা লাগে। প্রতিদিন ভোর ৫টার দিকে ঘুম থেকে উঠে কাজে আসার প্রস্তুতি নিতে হয়। যাতায়াত বাবদ দিনে ১৪০ টাকা খরচ হচ্ছে। আবার এখানে ক্যান্টিন না থাকায় বাইরে অটো ভাড়া করে খাবার খেতে যেতে আরও ১০ টাকার প্রয়োজন হয়। আবাসন সুবিধা না থাকায় এভাবেই আয়ের বড় অর্থ চলে যাচ্ছে। মাস শেষে হাজারীবাগের বাসাভাড়া আছে, সন্তানদের খরচ জোগাতে গিয়ে কোনো সঞ্চয় থাকে না আমাদের।
ট্যানারি শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কথা হয় শ্রমিক নেতা প্রকাশ দত্তের সঙ্গে। তিনি জাগো নিজকে বলেন, ট্যানারি শিল্প গড়ার দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত শ্রমিকের জন্য দেওয়া প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন না থাকা দুঃখজনক। ট্যানারি শ্রমিকরা এমনিতেই বেশি অসুস্থ হন, সেখানে কেমিক্যালের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। অথচ প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থাও নেই। এটা পুরো প্রকল্পের ব্যর্থতাই বলতে হবে। যেখানে শ্রমিকের হাতে কারখানার চাকা ঘুরবে সেখানে শ্রমিকই সুবিধাবঞ্চিত, এটা দুঃখজনক ঘটনা।
এ বিষয়ে বিসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহফুজুর রহমান রিজোয়ান জাগো নিউজকে বলেন, শিল্পনগরীর সব প্লট কারখানা গড়তে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধার কথা বিবেচনায় নিয়ে একটা প্রকল্প আসছে। এরই মধ্যে পরিকল্পনা মন্ত্রীর দপ্তরে উঠেছে প্রকল্পটি। সেটা হলে শ্রমিকদের হাসপাতাল-আবাসনসহ বিভিন্ন সুবিধা থাকবে।
সর্বস্বত্ব: এমআরএল মিডিয়া লিমিটেড
ঢাকা অফিস: মডার্ণ ম্যানসন (১৫ তলা), ৫৩ মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০
ময়মনসিংহ অফিস: হাসনাইন প্লাজা (দ্বিতীয় তলা), ৭ মদন বাবু রোড, ময়মনসিংহ-২২০০
সেলফোন: ০৯৬১১-৬৪৫২১৫, ০৯৬৯৭-৪৯৭০৯০
ই-মেইল: jagrota2041@gmail.com
ফোন :
ইমেইল :