, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ অনলাইন সংস্করণ

বিসমিল্লাহ গ্রুপের এমডিসহ ৭ আসামিকে ধরতে তৎপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

  নিজস্ব প্রতিবেদক

  প্রকাশ : 

বিসমিল্লাহ গ্রুপের এমডিসহ ৭ আসামিকে ধরতে তৎপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

অর্থপাচারের মামলায় দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আছেন জনতা ব্যাংকের সাবেক দুই কর্মকর্তা। তবে একই মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে পলাতক রয়েছেন বিসমিল্লাহ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) খাজা সোলেমান আনোয়ার চৌধুরীসহ সাত আসামি। এর আগে, ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রেড অ্যালার্ট জারির নির্দেশনা দিলেও আসামিদের গ্রেফতার করতে পরিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

সম্প্রতি ওই আদেশের অনুলিপি প্রকাশ করেছেন উচ্চ আদালত। এরই মধ্যে আদেশের কপি সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এখন আসামিদের ধরতে তৎপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরই অংশ হিসেবে আসামিদের ঠিকানা সংগ্রহ করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।

খাজা সোলেমান আনোয়ার চৌধুরী ছাড়াও অন্য ছয় আসামি হলেন- তার স্ত্রী ও গ্রুপের চেয়ারম্যান নওরীন হাবিব, গ্রুপের পরিচালক ও খাজা সোলেমানের বাবা সফিকুল আনোয়ার চৌধুরী, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আকবর আজিজ মুতাক্কি, মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আবুল হোসেন চৌধুরী, ব্যবস্থাপক রিয়াজউদ্দিন আহম্মেদ ও নেটওয়ার্ক ফ্রেইট সিস্টেম লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. আক্তার হোসেন।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক জাগো নিউজকে বলেন, তাদের গ্রেফতারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা খোঁজ খবর নিচ্ছেন। ঈদের আগে সংশ্লিষ্ট থানার একজন পুলিশ কর্মকর্তা কোর্টে এসে দেখা করে গেছেন। তারা গ্রেফতারের বিষয়ে তৎপর রয়েছেন বলেও জানিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি অর্থপাচার মামলার বিসমিল্লাহ গ্রুপের এমডিসহ সাত আসামিকে গ্রেফতার করতে রেড অ্যালার্ট জারির নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এ আদেশ কার্যকর করার বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই নির্দেশনা সম্বলিত আদেশের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সম্প্রতি প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।

মানি লন্ডারিং আইনে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় এক আসামির জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শেষে ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি এই অ্যালার্ট জারি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ। আদালতে ওই দিন আসামি পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান। দুদকের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিনউদ্দিন মানিক।

ওইদিন আমিন উদ্দিন মানিক জানান, বিসমিল্লাহ গ্রুপের এমডি-চেয়ারম্যানসহ সাতজনকে ধরতে রেড অ্যালার্ট জারির নির্দেশ ছাড়াও এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা ৫ এপ্রিল আদালতকে জানাতে পুলিশের আইজিপি ও র্যাবের ডিজি, ঢাকা মেট্রোপলিটনের পুলিশ কমিশনার ও নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি আসেনি।

প্রায় ১৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা পাচারের মামলায় বিসমিল্লাহ গ্রুপের এমডিসহ নয়জনকে ২০১৮ সালে ১০ বছর করে কারাদণ্ডের আদেশ দেন ঢাকার দশম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আতাবুল্লাহর আদালত। কারাদণ্ডের পাশাপাশি আসামিদের ৩০ কোটি ৬৭ লাখ ২৩ হাজার ৩৭৩ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।

এর মধ্যে জনতা ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা মোস্তাক আহমেদ খান ও এসএম শোয়েব-উল-কবীর এখন কারাগারে আছেন। নিম্ন আদালতের রায়ের পর ওই দুই ব্যাংক কর্মকর্তা হাইকোর্টে জামিন চেয়েছিলেন। কিন্তু ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ তাদের জামিনের আবেদন খারিজ করেন ও অবিলম্বে অন্যান্য পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। হাইকোর্ট থেকে সম্প্রতি ওই আদেশের অনুলিপি প্রকাশ করেছেন এবং আদেশ বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সেটি পাঠিয়েছে।

আদেশে হাইকোর্ট বলেছেন, যদি মনে হয় যে পলাতক আসামিরা দেশে পাওয়া যাচ্ছে না, তাহলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দেওয়া হলো। গ্রেফতারের জন্য ইন্টারপোল, ঢাকা অফিস থেকে একটি রেড নোটিশ জারি করা হয় ও তাদের দেশে আনার ব্যবস্থা করেন।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক জাগো নিউজকে বলেন, নিউমার্কেট থানা পুলিশ তাকে জানিয়েছে যে হাইকোর্টের আদেশের অনুলিপি পাওয়ার পরপরই তারা এটি নিয়ে কাজ শুরু করছে ও ঠিকানা সংগ্রহ করছে। পলাতক আসামিদের পাশাপাশি হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

তিনি আরও বলেন, এ মামলার শুনানির জন্য আগামী সপ্তাহে হাইকোর্টের দৈনিক ‘কায় তালিকায়’ আসার সম্ভাবনা রয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে হাইকোর্টে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

২০১৩ সালের নভেম্বরে এ মামলা করে দুদক। পরে তদন্ত শেষে নয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিলে আদালত আমলে নিয়ে ২০১৬ সালে বিচার শুরু করেন। দুদকের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন মোশাররফ হোসেন কাজল। ওই মামলায় ২৪ জন সাক্ষীর জবানবন্দি ও জেরা শেষ করে আদালত এ রায় দেন।

২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর বিসমিল্লাহ গ্রুপের পাঁচটি ব্যাংক থেকে প্রায় ১২ বিলিয়ন টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ৫৪ জনের বিরুদ্ধে মোট ১২টি মামলা করে দুদক। রাজধানীর রমনা, মতিঝিল ও নিউমার্কেট থানায় মামলাগুলো করেন দুদকের পরিচালক ইকবাল হোসেন।

  • সর্বশেষ - অন্যান্য