নিয়োগ পরীক্ষার ভাইভা বোর্ডে থাকতে চবি ভিসির যত কাণ্ড!
প্রকাশ :

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত থাকার পরও শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার ভাইভা বোর্ডে থাকছেন উপাচার্য- গতকাল এ খবর প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই আলোচনা চলছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। আজ সেই খবরটিই সত্যি হলো। তবে আংশিক। উপাচার্য ভাইভা বোর্ডে অংশ নিয়েছেন, তবে নিজেকে দেখিয়েছেন ‘করোনা নেগেটিভ’। যদিও তিনি হাসপাতাল থেকে এখনো ছাড়পত্র নেননি!
অসুস্থ বোধ করায় গত ১৫ জানুয়ারি চট্টগ্রামের সিএসসিআর হাসপাতালে ভর্তি হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শিরীণ আখতার। হাসপাতালের নথিপত্র অনুযায়ী তিনি এখনো (শনিবার সন্ধ্যা) সেখানকার ভর্তি থাকা রোগী। কিন্তু আজ সকালে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ওশানোগ্রাফি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার ভাইভা বোর্ডে সভাপতিত্ব করেন শিরীণ আখতার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র না নিয়ে সকাল সকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েন উপচার্য শিরীণ আখতার। হাসপাতালের কর্মচারীদের তিনি বলে যান ‘কাজ আছে’।
ছাড়পত্র না নিয়ে হাসপাতাল ছাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিএসসিআর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. এমজাদ হোসেন।
তিনি বলেন, ‘গত ১৫ জানুয়ারি হাসপাতালটির ৭০৪ নম্বর কেবিনে ভর্তি হন উপাচার্য শিরীণ আখতার। এর পর থেকে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত বিভিন্ন সময় কাজের কথা বলে হাসপাতাল থেকে বের হয়েছেন তিনি। আজ সকালেও তিনি সেভাবেই বের হয়েছেন। তিনি এখনো হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নেননি।’
মাত্র ২ ঘণ্টায় আরটিপিসিআর-এ করোনা নেগেটিভ
সিএসসিআর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে হাসপাতালটির ৭০৪ নম্বর কেবিনে ভর্তি থাকা অবস্থায় করোনা ভাইরাসের আরটিপিসিআর পরীক্ষার জন্য জরুরি ভিত্তিতে নমুনা দেন উপাচার্য শিরীণ আখতার। নগরীর আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালের ল্যাবে এই নমুনা পরীক্ষা করা হয়। উপাচার্যের তাগাদায় রাত ৯টার মধ্যেই এই পরীক্ষার ফল প্রদান করা হয়। এতে উপাচার্যের করোনা নেগেটিভ আসে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট মেডিকেল সেন্টারের ল্যাবের ম্যানেজার মাসুদুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘উপাচার্য শিরীণ আখতারের নমুনা শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে জমা নেওয়া হয়। রাত ৯টার দিকে তার ছেলে এসে ফলাফল নিয়ে গেছেন। তার চাহিদা মেনে আমরা দ্রুত ফলাফল সরবরাহ করেছি।’
১৯ জানুয়ারি গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের উপাচার্যদের সমন্বয়ে গঠিত ‘বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদে’র স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যদের সঙ্গে তিনিও সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে যান। কিন্তু করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় চবি উপাচার্য ঢাকায় গিয়েও গণভবনে প্রবেশ করতে পারেননি।
ভর্তি চট্টগ্রামের হাসপাতালে, করোনা শনাক্ত ঢাকায়!
এদিকে, বিশ্বস্ত দুটি সূত্রে জানা গেছে, ১৫ জানুয়ারি চট্টগ্রামের সিএসসিআর হাসপাতালে ভর্তি হলেও উপাচার্য শিরীণ আখতারের করোনা শনাক্ত হয় ১৭ জানুয়ারি ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর)।
১৭ জানুয়ারি দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে আইইডিসিআরে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা জমা দেন অধ্যাপক শিরীণ। ওইদিন বিকেলে আরটিপিসিআর পরীক্ষায় তার শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়।
হাসপাতালে ভর্তি হয়েও ঢাকায় কেন?
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং উপাচার্যের পারিবারিক একটি সূত্রে জানা গেছে, অধ্যাপক শিরীণ গত সপ্তাহে (১৭ জানুয়ারি) কয়েক দিনের জন্য চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় যান।
১৯ জানুয়ারি গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের উপাচার্যদের সমন্বয়ে গঠিত ‘বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদে’র স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যদের সঙ্গে তিনিও সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে যান। কিন্তু করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় চবি উপাচার্য ঢাকায় গিয়েও গণভবনে প্রবেশ করতে পারেননি।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে উপাচার্য শিরীণ আখতারকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জ্যেষ্ঠ শিক্ষক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘অতীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে একাধিক ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। এতে নিয়োগ নিয়ে আর্থিক লেনদেনের কথা উঠে আসে। পরবর্তীতে তদন্তেও প্রমাণ হয় উপাচার্যের কাছের লোকজন লেনদেনে জড়িত ছিল। এবারের শিক্ষক নিয়োগে এ রকম কিছু হয়েছে কি না তদন্ত করা দরকার। না হয় হাসপাতালের বেড থেকে তড়িঘড়ি করে তাকে শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে অংশ নিতে হলো কেন?’
উল্লেখ্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত থাকা অবস্থায় আজকের (শনিবার) শিক্ষক নিয়োগের ভাইভা বোর্ডে উপাচার্যের অংশ নেওয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ নিয়ে গতকাল ‘করোনা আক্রান্ত ভিসি, তবুও স্থগিত হয়নি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার ভাইভা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।