০৫ এপ্রিল ২০২৩, ২০:৫৫ মিঃ
সুইট কর্ন বা মিষ্টি ভুট্টা নামে পরিচিত ভূট্টার একটি নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অধ্যাপক ড. মো. রুহুল আমিন। উচ্চমানের সুগার, প্রোটিন সমৃদ্ধ ও ক্যানসার প্রতিরোধ গুণাবলী সম্পন্ন মিষ্টি এই ভুট্টা দেশের প্রোটিন চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে দাবি করেছেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্টোমলজি বিভাগের অধ্যাপক অধ্যাপক ড. মো. রুহুল আমিন জানান, ২০১৪ সালে তিনি কোরিয়া থেকে মিষ্টি ভুট্টার মাত্র ১৪টি ইনব্রিড বীজ এনে প্রবর্তনের জন্য টবে চাষ করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা মাঠে বীজের চাষ করে দেখা গেছে এ দেশের আবহাওয়ায় এটি অভিযোজিত হয়েছে এবং ইতিবাচক ফলনও পাওয়া গেছে। পরে এর সংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ‘বিইউ মিষ্টি ভূট্টা’ নামে এই জাতটি চার বছর গবেষণা মাঠে চাষ করে দেশিয় উপযোগী ও উচ্চ ফলন দেখেন তারা। বর্তমানে প্রবর্তন প্রক্রিয়ায় মিষ্টি ভুট্টার একটি জাত হিসেবে আবমুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়াধীন।
তিনি বলেন, মিষ্টি ভুট্টা সাধারণ কাঁচা বা পুড়িয়ে খাওয়া যায়। দেশের প্রচলিত জাত গুলোর তুলনায় এ জাতের ভুট্টায় চিনি, প্রোটিনের পরিমাণ বেশি। এছাড়া উচ্চ ফলনশীল ও রোগ বালাই নেই বলে কৃষকরা এ জাতের ভুট্টা চাষে আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারেন। ইতোমধ্যে কৃষক পর্যায়ে ২০২২ সালে টাঙ্গাইলের গোপালপুর, সুপ্রীম সীড কোম্পানির মাধ্যমে ময়মনসিংহের ত্রিশাল, নীলফামারী, পঞ্চগড়ের কাউয়াপুকুর এলাকায় এবং বিএডিসি’র মাধ্যমে ঠাকুরগাও এবং মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া এলাকায় চাষাবাদ করা হচ্ছে। কৃষক পর্যায়েও এ জাতের ভুট্টার ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
এ ব্যাপারে গবেষক অধ্যাপক ড. মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘উচ্চমানের সুগার সমৃদ্ধ ও ক্যানসার প্রতিরোধ গুণাবলীর জন্য মিষ্টি ভুট্টা জাপান, কোরিয়া, চীন, ফিলিপাইনসহ বিভিন্ন দেশের মানুষের অত্যন্ত জনপ্রিয় খাবার। কোনো রকম প্রক্রিয়া ছাড়াই এটি কাঁচা বা সিদ্ধ করে চিবিয়ে খাওয়া যায়। এছাড়া সালাদ, স্যুপ এবং সবজি হিসেবেও এর ব্যবহার রয়েছে। আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশে এ মিষ্টি জাতের ভুট্টার আবাদ বাড়ানো হলে শিশুসহ সব বয়সী মানুষের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করা যাবে।’
তিনি আরও বলেন,সাধারণত বীজ রোপণের ১০০ থেকে ১১০ দিনের মধ্যে বিইউ মিষ্টি ভুট্টার মোচার দানা দুধালো দশায় উপনীত হয়। তখন এগুলা বাজারজাত করা যায়। এছাড়া মোচাগুলোর সবুজ খোসা, গাছ, পাতা গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। নতুন উদ্ভাবিত জাতে রোগ বালাই কম থাকায় কোনো কীটনাশক প্রয়োগের প্রয়োজন নেই। হেক্টর প্রতি গড় ফলন ১২ দশমিক ৫ টন হয়ে থাকে। আমাদের দেশে প্রচলিত জাতগুলো পশুখাদ্য হিসেবে বেশি প্রচলিত। তবধ সধুং প্রজাতির এ জাতটি সুইট কর্ণ বা পোল কর্ণ নামে পরিচতি।
অঙ্গ সংস্থানিক বৈশিষ্ট্য: বিইউ মিষ্টি ভুট্টার গাছ গাঢ় সবুজ রঙের। উৎগমন কালে থোবার (টাসেলের) বর্ণ গোলাপী থাকে তবে বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে বাদামী রং ধারণ করে। পরিপূর্ণ গাছের উচ্চতা ১৫৫-১৬০ সেন্টিমিটার এবং প্রতিটি গাছে গড়ে ১০-১২টি পাতা পরিলক্ষিত হয়। একটি গাছ সবুজ বর্ণের খোসা বিশিষ্ট ১-২টি মোচা ধারণ করে। মোচাগুলো গড়ে ১৬ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ৪ সেন্টিমিটার বেড় বিশিষ্ট হয়। প্রতি কবে গড়ে ৫৩৭টি সাদা বর্ণের দানা থাকে এবং পরিপক্ক ও শুষ্ক একটি দানার ওজন ২০০ মিলিগ্রাম।
পুষ্টি উপাদান: রাসায়নিক উপাদান হিসেবে প্রতি ১০০ গ্রাম মিষ্টি ভুট্রায় পানি ৭৫.৯৬ গ্রাম,কার্বহাইড্রেট ১৯.০২ গ্রাম, সুগার ৩.২ গ্রাম,আঁশ ২.৭ গ্রাম,চর্বি ১.১৮ গ্রাম,আমিষ ৩.২ গ্রাম,ভাইটামিন সি ৬.৮ মিলিগ্রাম এবং ভাইটামিন এ, বি১, বি৩ বিদ্যমান থাকে। মিষ্টি ভুট্টায় আয়রণ, পটাসিয়াম, ম্যাংগানিজ প্রভৃতি খনিজ উপাদান বিদ্যমান থাকে। ১৮টি অ্যামাইনো এসিড সমৃদ্ধ এই ভুট্রা রান্না করলে তার অন্তর্গত ফেরুলিক এসিড’র মাত্রাবৃদ্ধি ঘটে- যা মানুষের শরীরে এন্টি ক্যানসার হিসেবে কাজ করে। এই ভুট্টার একটি কব (ফল) খাবারের ফলে মানুষের শরীরে ৮৬ কিলোক্যালরি শক্তি সঞ্চিত হয়। দানার পরিপক্কতার সঙ্গে মিষ্টি ভুট্টার সুগার সরল শর্করা স্টার্চে রূপান্তর ঘটে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গিয়াস উদ্দিন মিয়া বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এখন পর্যন্ত ৬৮টি বিভিন্ন ফসলের নতুন জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। নতুন বিইউ মিষ্টি ভূট্টা জাতটি অবমুক্ত করা হলে দেশের মানুষের পুষ্টিমান তথা পুষ্টির চাহিদা নিশ্চিত করা যাবে। ভুট্টা ফসলের (বৈজ্ঞানিকনাম) প্রজাতি তবধ সধুং। এই প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত ৬টি উপ-প্রজাতি রয়েছে। তাদের ইংরেজি নামগুলো হলো ডেন্ট কর্ণ, ফ্লিন্ট কর্ণ, পডকর্ণ, পপ কর্ণ, ফ্লাওয়ার কর্ণ এবং সুইটকর্ণ। নতুন এ মিষ্টি ভুট্টা চাষের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ভুট্টা খাওয়ার অভ্যাস তৈরি হবে।
উপদেষ্টা সম্পাদক: দীপক মজুমদার
সম্পাদক: মীর আক্তারুজ্জামান
সর্বস্বত্ব: এমআরএল মিডিয়া লিমিটেড
ঢাকা অফিস: মডার্ণ ম্যানসন (১৫ তলা), ৫৩ মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০
ময়মনসিংহ অফিস: হাসনাইন প্লাজা (দ্বিতীয় তলা), ৭ মদন বাবু রোড, ময়মনসিংহ-২২০০
সেলফোন: ০৯৬১১-৬৪৫২১৫, ০৯৬৯৭-৪৯৭০৯০
ই-মেইল: jagrota2041@gmail.com
ফোন :
ইমেইল :