, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ অনলাইন সংস্করণ

মুক্তাগাছায় আসাদ হত্যাকাণ্ড নিয়ে ষড়যন্ত্র ও ধুম্রজাল সৃষ্টির পাঁয়তারা : ২ জনের স্বীকারোক্তি

  শাহ মোহাম্মদ রনি

  প্রকাশ : 

মুক্তাগাছায় আসাদ হত্যাকাণ্ড নিয়ে ষড়যন্ত্র ও ধুম্রজাল সৃষ্টির পাঁয়তারা : ২ জনের স্বীকারোক্তি

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় যুবলীগ কর্মী আসাদুজ্জামান আসাদ হত্যাকাণ্ড নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র ও ধুম্রজাল সৃষ্টির পাঁয়তারা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। মহলটি পরিকল্পিতভাবে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এ ঘটনায় উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ বেকায়দায় পড়েছে। বাড়ানো হয়েছে পুলিশের টহল। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে মুক্তাগাছা শহরে ১৪৪ ধারা জারী করা হয়েছিল। মাহাবুবুল আলম মনিকে মামলার আসামি করার প্রতিবাদ জানিয়ে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইউসুফ খান পাঠান মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তিনি বলেন, আসাদ হত্যাকাণ্ডে জেলা পরিষদের অন্যতম সদস্য যুবলীগ সভাপতি মনি কোনো অবস্থাতেই জড়িত নন। ঘটনার সময় তিনি ময়মনসিংহ নগরীর নেক্সাস কার্ডিয়াক হাসপাতালে ছিলেন। সিসিটিভির ফুটেজে বিষয়টির শতভাগ প্রমাণ রয়েছে। এদিকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত মুক্তাগাছা থানা পুলিশ ৩ জন এবং জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সুনামগঞ্জ থেকে ২ জনকে গ্রেফতার করেছে। ২ জন দোষ স্বীকার এবং হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। এর আগে হত্যাকাণ্ডের ৩ দিন পর গত ৩১ আগস্ট সন্ধ্যায় ৩০ জনকে আসামি করে নিহত আসাদের নাবালক ছেলে তাইব হাসান আনন্দের দায়ের করা মামলায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল ও প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। হত্যাকাণ্ডের পর পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল হামলায় ১৫-১৬ জন অংশ নিয়েছিল। ব্যক্তিগত বিরোধের জেরে আসাদ হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেও প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বাবু, পৌর মেয়র আলহাজ্ব বিল্লাল হোসেন সরকার ও তার মেয়ের জামাতা উপজেলা যুবলীগ সভাপতি মাহাবুবুল আলম মনিসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের ফাঁসানো হয়েছে। এটি সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী এবং উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল হাই আকন্দ গ্রুপের দীর্ঘ দিনের দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ। বিষয়টি এখন মুক্তাগাছায় ‘টক অব দ্য টাউন’।
মঙ্গলবার নিহত আসাদের গ্রামের বাড়ি তারাটি পূর্বপাড়া, ঘটনাস্থল এবং বিভিন্ন এলাকা ঘুরে চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। কথা হয় ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকা কয়েকজন ব্যক্তির সাথে। কয়েকজন বলেন, হত্যাকাণ্ডের সাথে যারা জড়িত তাদের অনেকের বাড়ি আসাদের এলাকায়। কয়েকজন তার ঘনিষ্ট ছিল। আধিপত্য এবং মাদক নিয়ে তাদের সাথে আসাদের দ্বন্দ্ব ছিল। অন্যরা জানান, থানায় দায়ের হওয়া মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের মধ্যে ১৫-১৬ জন ঘটনাস্থলে ছিলেন না। মুক্তাগাছা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মাহাবুবুল আলম মনি, কামরুজ্জামান জামান, শুভ্র দে, মোঃ সিয়ামসহ ১৫-১৬ জন হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত নন। অপর একটি সূত্র জানায়, মনি, জামান, শুভ্র ও সিয়াম রোগী দেখার জন্য ময়মনসিংহ নগরীর নেক্সাস কার্ডিয়াক হাসপাতালে ছিলেন। সন্ধ্যা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত সিসিটিভির ফুটেজ দেখে পুলিশ বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। পুলিশ বলেছে, নিহতের ছেলের আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলায় ওই ৪ জনকে আসামি করা হয়। বিস্তারিত তদন্তের পর এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ইন্সপেক্টর তদন্ত মোঃ মোজাম্মেল হক মঙ্গলবার দৈনিক জাগ্রত বাংলা’কে জানান, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী গুরুত্ব দিয়ে মামলাটি তদন্ত করা হচ্ছে। দ্রুত অন্য আসামিদের গ্রেফতার করা হবে। পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা বলেন, নির্দোষ কাউকে পুলিশ হয়রানি করবে না। পুলিশ তার নিজস্ব গতিতে চলবে।


হত্যাকাণ্ডের ৮ ঘণ্টার মাথায় ২৯ আগস্ট ভোরে মুক্তাগাছা থানা পুলিশ ৩ জনকে গ্রেফতার করে। এরা হলো- শহীদুল ইসলাম (৪৫), সামিউল ইসলাম (৪০) ও রাজিব আহম্মেদ (৩৫)। মঙ্গলবার তাদের ৫ দিনের রিমাণ্ড আবেদনের শুনানি হয়। বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট আবেদন নামঞ্জুর করেন। অপরদিকে ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) রবিবার মধ্য রাতে সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার চান্দালিয়াপাড়া থেকে হত্যাকাণ্ডের জড়িত ২ জনকে গ্রেফতার করে। এরা হলো- মুক্তাগাছার তারাটি ফকিরপাড়ার মোখলেছুর রহমান ভুট্টোর ছেলে ৮ নম্বর আসামি সাখাওয়াত হোসেন লিমন (২৬) ও একই এলাকার মঞ্জুরুল হকের ছেলে ৯ নম্বর আসামি মোঃ মমিনুল হক (২৪)। সোমবার দুপুরে তাদের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রেরণ করা হয়। দুপুর দেড়টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫ টা পর্যন্ত তারা বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট রাজিব হাসান তালুকদারের কাছে দোষ স্বীকার করে হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। এরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে মনি, জামান, শুভ্র ও সিয়ামের নাম উল্লেখ করেনি বলে মঙ্গলবার নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে। অন্যদের সহযোগিতায় তারা ২ জন সরাসরি আসাদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলো বলে বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে স্বীকার করে।
গত ২৮ আগস্ট সোমবার রাত সাড়ে ৮ টায় মুক্তাগাছা শহরের আটানী বাজারে দুস্কৃতিকারীদের হামলায় মারাত্মক আহত হন যুবলীগ কর্মী আসাদুজ্জামান আসাদ (৩৭)। মারাত্মক আহত আসাদকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। রাতেই তিনি মারা যান। নিহত আসাদ উপজেলার তারাটি পূর্বপাড়ার শামসুল হকের ছেলে। তিনি মুক্তাগাছা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল হাই আকন্দ গ্রুপের যুবলীগের কর্মী ছিলেন। হামলার সময় আসাদ কয়েকজনকে নিয়ে চা খাচ্ছিলেন। পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল ১৫-১৬ জন যুবক চাইনিজ কুড়াল, রড ও হকিস্টিক নিয়ে আসাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। ৩ দিনের মাথায় ঘটনার মোড় পাল্টে যায়। ষড়যন্ত্রের ডালপালা ছড়িয়ে পড়ে। প্রশ্নবিদ্ধ মামলায় আসামি করা হয় উপজেলা যুবলীগ সভাপতি মাহাবুবুল আলম মনিসহ নির্দোষ ১৫-১৬ জনকে।


  • সর্বশেষ - আলোচিত খবর