মুক্তাগাছায় ৩২৯ টন চাল আত্মসাত : খাদ্য অধিদপ্তর নীরব থাকায় নানান প্রশ্নের সৃষ্টি
প্রকাশ :
আলোচিত মুক্তাগাছা খাদ্য গুদামের ৩২৯ টন চাল ও ১ হাজার ৮৭৫টি খালি বস্তা আত্মসাতের ঘটনায় খাদ্য অধিদপ্তর নীরব থাকায় নানান প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। তবে ঘটনার সাথে জড়িত কেউ ছাড় পাবেন না বলে দুদক নিশ্চিত করেছে। তদন্তে বেরিয়ে আসছে থলের বিড়াল। দায় এড়াতে কয়েকজনের বিরুদ্ধে কলকাঠি নাড়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অর্থনৈতিক মূল্য অনুযায়ী চাল ও খালি বস্তার মূল্য ১ কোটি ৭১ লাখ ৯২ হাজার ৩৮২ টাকা। রক্ষা করা হচ্ছে দায়িত্বে অবহেলার সাথে জড়িতকে। আত্মসাত ধরা পড়ার ৪ মাস পর দুর্নীতিবাজ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রেবেকা সুলতানা রুবীকে টাংগাইলের মির্জাপুরে বদলি করা হয়েছে। ব্যবস্থা না নিয়ে তাকে গুরুত্বপূর্ণ উপজেলায় বদলি করায় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ভূমিকায় প্রশ্ন উঠেছে। এতে দেশের অন্যান্য খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকরা আত্মসাত, দুর্নীতি ও অনিয়মে জড়ানোর উৎসাহ পেয়েছেন। দুদকের ময়মনসিংহ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ সহকারী পরিচালক আনিসুর রহমান আলোচিত মামলাটি তদন্ত করছেন। তদন্ত শেষে জড়িতদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করবেন বলে সোমবার দৈনিক জাগ্রত বাংলাকে জানিয়েছেন।
জানা যায়, খাদ্য অধিদপ্তরের সিস্টেম এনালিস্ট মঞ্জুর আলমের তদবিরের কারণে তার স্ত্রী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রেবেকা সুলতানা রুবীসহ অন্যরা আত্মসাতের দায় থেকে পার পেয়ে যাচ্ছেন। অথচ এ ধরণের আত্মসাতের ঘটনায় উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকসহ সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার শতভাগ নজির রয়েছে। এর আগেও ময়মনসিংহ বিভাগের কয়েকটি খাদ্য গুদামে চাল ও খালি বস্তা আত্মসাতের ঘটনা ঘটে। জড়িতরা আটক হয়ে কারাভোগ, চাকরিচ্যূত ও বিভাগীয় মামলায় পড়েন। খাদ্য অধিদপ্তরের সংস্থাপন শাখার ১৮-০৩-২০২৪ তারিখের আদেশে মুক্তাগাছার উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রেবেকা সুলতানা রুবীকে টাংগাইলের মির্জাপুর, সুনামগঞ্জের ধর্মপাশার মোহাম্মদ এরশাদুর রহমান খানকে মুক্তাগাছায় এবং টাংগাইলের মির্জাপুরের শ্যামল সরকারকে টাংগাইলের উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (কারিগরী) হিসেবে বদলি করা হয়। অন্যদিকে গ্রেফতার এড়িয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন আত্মসাতের ঘটনায় সরাসরি জড়িত মুক্তাগাছা খাদ্য গুদামের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাকিল আহমেদ।
সূত্র জানায়, মুক্তাগাছা গুদাম থেকে আত্মসাত হওয়া ৩২৯ টন চাল ও ১ হাজার ৮৭৫টি খালি বস্তার দায় থেকে বাঁচতে শুরু থেকেই কলকাঠি নাড়ার ঘটনা ঘটছে। গত বছরের ২১ নভেম্বর মুক্তাগাছা থানায় মামলা রেকর্ডের আগে রহস্যজনক কারণে দুই বার এজাহার পাল্টানো হয়। আত্মসাত দেখানো হয় ০৯-০৩-২০২১ থেকে ১৭-১০-২০২৩ তারিখের মধ্যে যেকোনো সময়। গুদাম, উপজেলা, জেলা ও আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের মজুদ অনুযায়ী ২ মাস আগে কেনা বোরো চাল আত্মসাত করা হয়। এর আগের ২ বছর ৫ মাসে ধান ও চাল বিলি এবং চলাচল কর্মসূচির মাধ্যমে মজুদ শেষ করা হয়েছিলো। সূত্র মতে, পুরাতন চাল মজুদ না থাকায় ওই সময় আত্মসাতের ঘটনা ঘটেনি। অথচ আত্মসাত দেখানো হয় ২ বছর ৭ মাসের যেকোনো সময়। শাকিল যোগদানের দিন থেকে পালিয়ে যাওয়ার তারিখ পর্যন্ত চাল ও খালি বস্তা আত্মসাত দেখানোর ঘটনা রহস্য সৃষ্টি করে। দুদকের এখতিয়ারভূক্ত হওয়ায় মামলাটি স্থানান্তর করা হয়। পরে মামলার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। কমিশনের নির্দেশে ০৬-০৩-২০২৪ তারিখে উপ সহকারী পরিচালক আনিসুর রহমান বাদি হয়ে ময়মনসিংহের আদালতে মূল মামলাটি দায়ের করেন। দন্ডবিধির ৪০৯, ৪২০ ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় দায়ের করা মামলার তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
জানা যায়, গত বছরের অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি ধরা পড়ে মুক্তাগাছা খাদ্য গুদামের চাল ও খালি বস্তা আত্মসাতের ঘটনা। ২০১৯ সালেও ঘটে একই ঘটনা। ৫০০ টন চাল কেলেঙ্কারী নিয়ে তোলপাড় হয়েছিলো। নিম্নমানের পুরাতন চাল কিনে মজুদ, মিল মালিকদের সাথে প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া হয়। ওই ঘটনার বিচার না হওয়ায় এবং দুর্নীতিবাজদের লাগাম না টানার কারণে ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে বলে অপরাধ বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত করেছেন। চালের মজুদ নিশ্চিত না হয়ে বিল প্রদান করে সরকারি টাকা আত্মসাতের সহযোগিতা করা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রেবেকা সুলতানা রুবীকে বাঁচানোর অপচেষ্টা চলে। কর্তৃপক্ষ তাকে দিয়েই ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাকিল আহমেদের বিরুদ্ধে থানায় ত্রুটিপূর্ণ মামলা দায়ের করায়। সূত্র মতে, ঘটনার দায় এড়াতে পারেন না গুদামের অন্যান্য স্টাফ, কারিগরী খাদ্য পরিদর্শক, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক।
সূত্র জানায়, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাকিল আহমেদ পালিয়ে যাওয়ার দিন ২ হাজার টন ধারণ ক্ষমতার ২ গুদামে ৩ হাজার ৩৭৯ টন চাল মজুদ ছিলো। ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি দীর্ঘ ২৭ দিন গুদাম ও ২৪টি খামাল পরিমাপ করে ৩২৮ টন ৯৮০ কেজী চাল এবং ১ হাজার ৮৭৫টি খালি বস্তা কম পায়। ঘটনার ২ মাস আগে শেষ হওয়া বোরো সংগ্রহ মৌসুমে ১৫ হাজার ৪৭২.৮৩০ টন চাল সংগ্রহ করা হয়। মূল ১৩ হাজার ৮৪৭.৯১০ ও অতিরিক্ত বরাদ্দ ১ হাজার ৬২৪.৯২০ টন। সূত্র মতে, অতিরিক্ত বরাদ্দের ৩০০ টন চাল সরবরাহ না নিয়েই উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের যোগসাজশে শাকিল বিল উত্তোলন করান। একই সময় অন্য এক মিলারের কাছ থেকে ২৯ টন চাল সরবরাহ না নিয়ে বিল উত্তোলন করানো হয়। সূত্র মতে, চালের মজুদ নিশ্চিত না হয়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রুবী বিল প্রদান করে বখরা আদায় করেন। তিনি খাদ্য অধিদপ্তরের সিস্টেম এনালিস্ট স্বামীকে দিয়ে তদবির করিয়ে ০২-১০-২০২২ তারিখে মুক্তাগাছায় যোগদান করেন। এর আগে ময়মনসিংহের ত্রিশালে কর্মরত ছিলেন।
জানা যায়, শাকিল আহমেদ রাজশাহী বিভাগ থেকে বদলি হয়ে ময়মনসিংহে এসে প্রভাবশালী এক মন্ত্রীকে দিয়ে তদবির করিয়ে ০৯-০৩-২০২১ তারিখে মুক্তাগাছা খাদ্য গুদামের দায়িত্ব নেন। ১৭-১০-২০২৩ তারিখ পর্যন্ত ২ বছর ৭ মাস মুক্তাগাছা গুদামে কর্মরত ছিলেন। নীতিমালা অনুযায়ী ২ বছর কর্মরত থাকার কথা থাকলেও শাকিল টাকার বিনিময়ে ৭ মাস অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন। অন্যদিকে মুক্তাগাছা খাদ্য গুদামের সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন সিন্ডিকেট প্রধান মোঃ আব্দুল হালিম। উপজেলা সদর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূর বাঘমারায় তার মালিকানায় ‘হালিম রাইস এন্ড ফ্লাওয়ার মিল’ থাকলেও শাসন করতেন ২৫টি রাইস মিল। কাবিখা, ভিজিডি, ভিজিএফ, খাদ্য বান্ধব, ওএমএস এবং রেশনের সকল চাল তার মাধ্যমে বিতরণ হতো। গুদাম থেকে চাল বিতরণ দেখিয়ে আবারো তা মজুদ করে বোরো ও আমন সংগ্রহ দেখানোর পর কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন প্রভাবশালী হালিম। আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক হয়েও খর্ব করেন সরকারের ভাবমূর্তি।
সূত্র জানায়, মুক্তাগাছা খাদ্য গুদামে সংযুক্ত থাকা সহকারী উপ খাদ্য পরিদর্শক তুহিন গুদামের মজুদ থেকে শুরু করে সব কিছুর দেখভাল করেন। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাকিল তার ওপর শতভাগ নির্ভর করতেন। মিলারদের কাছ থেকে চাল রিসিভ, বিল প্রস্তুত, ডিও ডেলিভারী সব কিছুই হতো তুহিনের হাত দিয়ে। এ সুযোগে দুর্নীতি ও অনিয়ম করে হাতিয়ে নিয়েছেন মোটা অংক। শাকিল পালানোর আগেই তুহিন বিষয়টি বুঝতে পারেন। তড়িঘড়ি মূল কর্মস্থল ময়মনসিংহ সিএসডিতে ফেরত আসেন। মোটা অংক দিয়ে খাদ্য অধিদফতরে তদবির করে টাংগাইলে বদলি হন। পোস্টিং নেন বাড়ির কাছের ধনবাড়ি খাদ্য গুদামে। ধুরন্ধর তুহিনের গ্রামের বাড়ি মধুপুরে। অজপাড়াগাঁওয়ের কৃষক পরিবারের সন্তান তুহিন আত্মসাত, দুর্নীতি ও অনিয়মের টাকায় বাড়িতে নির্মাণ করেন বহুতল ভবন।
জানা যায়, ময়মনসিংহ বিভাগের ৪ জেলার কয়েকটি খাদ্য গুদামে আগেও আত্মসাত, দুর্নীতি ও অনিয়মের ঘটনা ঘটে। প্রভাব বিস্তার ও মোটা অংকের বিনিময়ে কয়েকটি ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া হয়। প্রভাবশালীরা ধামাচাপা দিতে পারেনি ময়মনসিংহ সিএসডিসহ কয়েকটি গুদামের ঘটনা। বরখাস্ত হয়ে জেল খাটেন কয়েকজন। প্রভাব বিস্তার ও মোটা অংক দিয়ে রক্ষা পান সিএসডির সাবেক ২ সহকারী ব্যবস্থাপকসহ বিভিন্ন গুদামের ডজনখানেক চিহ্নিত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তাদের বিরুদ্ধে গুদামে পরিমাণে কম-বেশি চাল ও মিল মালিকদের সাথে আঁতাত করে উত্তরাঞ্চল থেকে চাল কিনে আনা, নিম্নমানের ধান ও চাল সংগ্রহ এবং বস্তা কম থাকার অভিযোগ ছিলো। অন্যদিকে দোষীদের চাকরিচ্যূত, বিভাগীয় মামলা, উচ্চপর্যায়ের তদন্ত ও গুদাম সিলগালা করার ঘটনা ঘটে। অনেকের ব্যক্তিগত ফাইল ও অফিস আদেশে তিরস্কার, বিরূপ মন্তব্য ও আপত্তি থাকলেও ঘষামাজা করে আবারো তারা গুদামের দায়িত্ব নেন। সূত্র মতে, গুদামে সরাসরি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার পদ না থাকায় বদলি বাণিজ্য সিন্ডিকেট কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এদের কারণে ইচ্ছা থাকার পরও দক্ষ খাদ্য পরিদর্শকরা গুদামের দায়িত্ব পান না। তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকরা। অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে অনেকেই অন্যায় আবদার মানতে বাধ্য হন।
জানা যায়, খাদ্য অধিদপ্তরের সিস্টেম এনালিস্ট মঞ্জুর আলমের তদবিরের কারণে তার স্ত্রী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রেবেকা সুলতানা রুবীসহ অন্যরা আত্মসাতের দায় থেকে পার পেয়ে যাচ্ছেন। অথচ এ ধরণের আত্মসাতের ঘটনায় উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকসহ সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার শতভাগ নজির রয়েছে। এর আগেও ময়মনসিংহ বিভাগের কয়েকটি খাদ্য গুদামে চাল ও খালি বস্তা আত্মসাতের ঘটনা ঘটে। জড়িতরা আটক হয়ে কারাভোগ, চাকরিচ্যূত ও বিভাগীয় মামলায় পড়েন। খাদ্য অধিদপ্তরের সংস্থাপন শাখার ১৮-০৩-২০২৪ তারিখের আদেশে মুক্তাগাছার উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রেবেকা সুলতানা রুবীকে টাংগাইলের মির্জাপুর, সুনামগঞ্জের ধর্মপাশার মোহাম্মদ এরশাদুর রহমান খানকে মুক্তাগাছায় এবং টাংগাইলের মির্জাপুরের শ্যামল সরকারকে টাংগাইলের উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (কারিগরী) হিসেবে বদলি করা হয়। অন্যদিকে গ্রেফতার এড়িয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন আত্মসাতের ঘটনায় সরাসরি জড়িত মুক্তাগাছা খাদ্য গুদামের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাকিল আহমেদ।
সূত্র জানায়, মুক্তাগাছা গুদাম থেকে আত্মসাত হওয়া ৩২৯ টন চাল ও ১ হাজার ৮৭৫টি খালি বস্তার দায় থেকে বাঁচতে শুরু থেকেই কলকাঠি নাড়ার ঘটনা ঘটছে। গত বছরের ২১ নভেম্বর মুক্তাগাছা থানায় মামলা রেকর্ডের আগে রহস্যজনক কারণে দুই বার এজাহার পাল্টানো হয়। আত্মসাত দেখানো হয় ০৯-০৩-২০২১ থেকে ১৭-১০-২০২৩ তারিখের মধ্যে যেকোনো সময়। গুদাম, উপজেলা, জেলা ও আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের মজুদ অনুযায়ী ২ মাস আগে কেনা বোরো চাল আত্মসাত করা হয়। এর আগের ২ বছর ৫ মাসে ধান ও চাল বিলি এবং চলাচল কর্মসূচির মাধ্যমে মজুদ শেষ করা হয়েছিলো। সূত্র মতে, পুরাতন চাল মজুদ না থাকায় ওই সময় আত্মসাতের ঘটনা ঘটেনি। অথচ আত্মসাত দেখানো হয় ২ বছর ৭ মাসের যেকোনো সময়। শাকিল যোগদানের দিন থেকে পালিয়ে যাওয়ার তারিখ পর্যন্ত চাল ও খালি বস্তা আত্মসাত দেখানোর ঘটনা রহস্য সৃষ্টি করে। দুদকের এখতিয়ারভূক্ত হওয়ায় মামলাটি স্থানান্তর করা হয়। পরে মামলার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। কমিশনের নির্দেশে ০৬-০৩-২০২৪ তারিখে উপ সহকারী পরিচালক আনিসুর রহমান বাদি হয়ে ময়মনসিংহের আদালতে মূল মামলাটি দায়ের করেন। দন্ডবিধির ৪০৯, ৪২০ ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় দায়ের করা মামলার তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
জানা যায়, গত বছরের অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি ধরা পড়ে মুক্তাগাছা খাদ্য গুদামের চাল ও খালি বস্তা আত্মসাতের ঘটনা। ২০১৯ সালেও ঘটে একই ঘটনা। ৫০০ টন চাল কেলেঙ্কারী নিয়ে তোলপাড় হয়েছিলো। নিম্নমানের পুরাতন চাল কিনে মজুদ, মিল মালিকদের সাথে প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া হয়। ওই ঘটনার বিচার না হওয়ায় এবং দুর্নীতিবাজদের লাগাম না টানার কারণে ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে বলে অপরাধ বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত করেছেন। চালের মজুদ নিশ্চিত না হয়ে বিল প্রদান করে সরকারি টাকা আত্মসাতের সহযোগিতা করা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রেবেকা সুলতানা রুবীকে বাঁচানোর অপচেষ্টা চলে। কর্তৃপক্ষ তাকে দিয়েই ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাকিল আহমেদের বিরুদ্ধে থানায় ত্রুটিপূর্ণ মামলা দায়ের করায়। সূত্র মতে, ঘটনার দায় এড়াতে পারেন না গুদামের অন্যান্য স্টাফ, কারিগরী খাদ্য পরিদর্শক, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক।
সূত্র জানায়, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাকিল আহমেদ পালিয়ে যাওয়ার দিন ২ হাজার টন ধারণ ক্ষমতার ২ গুদামে ৩ হাজার ৩৭৯ টন চাল মজুদ ছিলো। ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি দীর্ঘ ২৭ দিন গুদাম ও ২৪টি খামাল পরিমাপ করে ৩২৮ টন ৯৮০ কেজী চাল এবং ১ হাজার ৮৭৫টি খালি বস্তা কম পায়। ঘটনার ২ মাস আগে শেষ হওয়া বোরো সংগ্রহ মৌসুমে ১৫ হাজার ৪৭২.৮৩০ টন চাল সংগ্রহ করা হয়। মূল ১৩ হাজার ৮৪৭.৯১০ ও অতিরিক্ত বরাদ্দ ১ হাজার ৬২৪.৯২০ টন। সূত্র মতে, অতিরিক্ত বরাদ্দের ৩০০ টন চাল সরবরাহ না নিয়েই উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের যোগসাজশে শাকিল বিল উত্তোলন করান। একই সময় অন্য এক মিলারের কাছ থেকে ২৯ টন চাল সরবরাহ না নিয়ে বিল উত্তোলন করানো হয়। সূত্র মতে, চালের মজুদ নিশ্চিত না হয়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রুবী বিল প্রদান করে বখরা আদায় করেন। তিনি খাদ্য অধিদপ্তরের সিস্টেম এনালিস্ট স্বামীকে দিয়ে তদবির করিয়ে ০২-১০-২০২২ তারিখে মুক্তাগাছায় যোগদান করেন। এর আগে ময়মনসিংহের ত্রিশালে কর্মরত ছিলেন।
জানা যায়, শাকিল আহমেদ রাজশাহী বিভাগ থেকে বদলি হয়ে ময়মনসিংহে এসে প্রভাবশালী এক মন্ত্রীকে দিয়ে তদবির করিয়ে ০৯-০৩-২০২১ তারিখে মুক্তাগাছা খাদ্য গুদামের দায়িত্ব নেন। ১৭-১০-২০২৩ তারিখ পর্যন্ত ২ বছর ৭ মাস মুক্তাগাছা গুদামে কর্মরত ছিলেন। নীতিমালা অনুযায়ী ২ বছর কর্মরত থাকার কথা থাকলেও শাকিল টাকার বিনিময়ে ৭ মাস অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন। অন্যদিকে মুক্তাগাছা খাদ্য গুদামের সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন সিন্ডিকেট প্রধান মোঃ আব্দুল হালিম। উপজেলা সদর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূর বাঘমারায় তার মালিকানায় ‘হালিম রাইস এন্ড ফ্লাওয়ার মিল’ থাকলেও শাসন করতেন ২৫টি রাইস মিল। কাবিখা, ভিজিডি, ভিজিএফ, খাদ্য বান্ধব, ওএমএস এবং রেশনের সকল চাল তার মাধ্যমে বিতরণ হতো। গুদাম থেকে চাল বিতরণ দেখিয়ে আবারো তা মজুদ করে বোরো ও আমন সংগ্রহ দেখানোর পর কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন প্রভাবশালী হালিম। আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক হয়েও খর্ব করেন সরকারের ভাবমূর্তি।
সূত্র জানায়, মুক্তাগাছা খাদ্য গুদামে সংযুক্ত থাকা সহকারী উপ খাদ্য পরিদর্শক তুহিন গুদামের মজুদ থেকে শুরু করে সব কিছুর দেখভাল করেন। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাকিল তার ওপর শতভাগ নির্ভর করতেন। মিলারদের কাছ থেকে চাল রিসিভ, বিল প্রস্তুত, ডিও ডেলিভারী সব কিছুই হতো তুহিনের হাত দিয়ে। এ সুযোগে দুর্নীতি ও অনিয়ম করে হাতিয়ে নিয়েছেন মোটা অংক। শাকিল পালানোর আগেই তুহিন বিষয়টি বুঝতে পারেন। তড়িঘড়ি মূল কর্মস্থল ময়মনসিংহ সিএসডিতে ফেরত আসেন। মোটা অংক দিয়ে খাদ্য অধিদফতরে তদবির করে টাংগাইলে বদলি হন। পোস্টিং নেন বাড়ির কাছের ধনবাড়ি খাদ্য গুদামে। ধুরন্ধর তুহিনের গ্রামের বাড়ি মধুপুরে। অজপাড়াগাঁওয়ের কৃষক পরিবারের সন্তান তুহিন আত্মসাত, দুর্নীতি ও অনিয়মের টাকায় বাড়িতে নির্মাণ করেন বহুতল ভবন।
জানা যায়, ময়মনসিংহ বিভাগের ৪ জেলার কয়েকটি খাদ্য গুদামে আগেও আত্মসাত, দুর্নীতি ও অনিয়মের ঘটনা ঘটে। প্রভাব বিস্তার ও মোটা অংকের বিনিময়ে কয়েকটি ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া হয়। প্রভাবশালীরা ধামাচাপা দিতে পারেনি ময়মনসিংহ সিএসডিসহ কয়েকটি গুদামের ঘটনা। বরখাস্ত হয়ে জেল খাটেন কয়েকজন। প্রভাব বিস্তার ও মোটা অংক দিয়ে রক্ষা পান সিএসডির সাবেক ২ সহকারী ব্যবস্থাপকসহ বিভিন্ন গুদামের ডজনখানেক চিহ্নিত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তাদের বিরুদ্ধে গুদামে পরিমাণে কম-বেশি চাল ও মিল মালিকদের সাথে আঁতাত করে উত্তরাঞ্চল থেকে চাল কিনে আনা, নিম্নমানের ধান ও চাল সংগ্রহ এবং বস্তা কম থাকার অভিযোগ ছিলো। অন্যদিকে দোষীদের চাকরিচ্যূত, বিভাগীয় মামলা, উচ্চপর্যায়ের তদন্ত ও গুদাম সিলগালা করার ঘটনা ঘটে। অনেকের ব্যক্তিগত ফাইল ও অফিস আদেশে তিরস্কার, বিরূপ মন্তব্য ও আপত্তি থাকলেও ঘষামাজা করে আবারো তারা গুদামের দায়িত্ব নেন। সূত্র মতে, গুদামে সরাসরি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার পদ না থাকায় বদলি বাণিজ্য সিন্ডিকেট কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এদের কারণে ইচ্ছা থাকার পরও দক্ষ খাদ্য পরিদর্শকরা গুদামের দায়িত্ব পান না। তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকরা। অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে অনেকেই অন্যায় আবদার মানতে বাধ্য হন।