১১ জুন ২০২০, ০৮:২৪ মিঃ
প্রথম ও দ্বিতীয় প্রহরের কথা না হয় বাদই দিলো। জগলু তস্কর নয়, যোগীও নয়- তবু মাঝে মধ্যেই রাত্রির তৃতীয় ও ৪র্থ প্রহরে তার ঘুম ভেঙে যায়। আজও রাত্রির শেষ প্রহরে বিনা নোটিশে ঘুম ভেঙে গেল! শয়ন কক্ষের লাল অনুজ্জ্বল বাতিটা এবং বিদ্যুৎ খরচ কমানোর জন্য বাইরের সব নিরাপত্তা বাতি নিভানো বিধায় রুমে ঘুটঘুটে অন্ধকার বিরাজমান! অনুজ্জ্বল বাতিটা নীল হলে অবশ্য জ্বালিয়ে রাখতো। কানিজের এতো বাজে পছন্দ নয়! কে যে এই লাল রঙের বাতি কিনেছিল! আগের দিনের কোনো রাজা হলে এই ঠুনকো অপরাধে হয়তো লাল বাতি কেনার লোকটিকে শূলে চড়িয়ে বা গিলোটিনের ধারালো ব্লেডের নিচে রেখে শরীর থেকে ধড়টা আলাদা করে ফেলত! বৈদ্যুতিক পাখাটি মনে হয় অনাদিকাল থেকে অনবরত পতপত করে ঘুরছে! কিছুটা বেল-২০৬ হেলিকপ্টার ওড়ার শব্দের মত। এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে, পাখার পতপত আওয়াজ ছাড়া বিশ্বে আর কিছুই নেই। করতল গোল করে কান ঢাকলে যেমন শো-শো শব্দ হয়, তার চেয়ে বেশি! কালের অনন্ত যাত্রার মত আওয়াজ জগলুকে ভাবনার রাজ্যে নিয়ে যাচ্ছে! পাখাটা ও ডেসকোকে খুব আপন মনে হচ্ছে! সারারাত নিরবচ্ছিন্নভাবে সেবা দিচ্ছে!
থাক, কাজ নেই ডেসকো ও পাখার প্রতি মায়া বাড়িয়ে। মায়া বড় খারাপ জিনিস। হৃদয় থেকে এই মায়া জিনিসটা যদি উপড়ে ফেলতে পারতো, তাহলে জগলুর জীবনটা আরও গোছালো হতো! তবে একদিন হয়তো সে পারবে। বাবা বলেছিল, যেকোন পরিবেশে সর্বোচ্চ ভালো থাকার চেষ্টা করতে। তাই সে চার্লস আলবার্ট টিন্ডলির লেখা ভজন ‘আই উইল ওভারকাম সাম ডে’ গুনগুন করে নিচুস্বরে গাইতে লাগলো!
চারিদিক একদম নিরব নিস্তব্ধ! ইংরেজিতে যাকে বলে ‘কাম’। প্রবাদ আছে, ‘Calm, Quiet & Tranquil which brings serenity in mind.’ কতক্ষণ চুপ করে একাকিত্বের স্বাদ নিলো সে। ঝিঁ-ঝিঁ পোকার মত কিছু একটার শব্দ কানে এলো বটে কিন্তু একাকিত্বের ব্যাঘাত হলো না। একটু পরই টের পেলো একাকিত্বের সুখ হরণকারী আজন্ম গণশত্রু মশার অস্তিত্ব! পিঠের বামদিকে ও ডান বাহুতে দুজন বিনা অনুমতিতে রক্তপান করে চলেছে। মানুষের অসহায়ত্বের এর চেয়ে বড় উদাহরণ জগলুর জানা নেই! চার দেয়ালের মাঝে একটি মরা ঘাসের কণাও সে স্বয়ং সযতনে ধূলিপাত্রে ফেলতে ভুল করে না। তারপরও এদের নিত্য অত্যাচার তাকে ভাবায়! জানে আল্লাহপাক কোন কিছুই নিরর্থক সৃষ্টি করেননি! এই চরম বিরক্তিকর মশা নিয়ে বহুবার ভেবেছে!
নমরুদ হত্যাকারী এই মশার রয়েছে আধুনিক অঙ্গসজ্জা; যেমন শতাধিক চোখ, চার ডজনের মত দাঁত, তিনটি হৃদযন্ত্র, একাধিক শোষক নল, এক্স-রে ও রক্ত পরীক্ষার সুবিধা ইত্যাদি ইত্যাদি! ২৭০০ প্রজাতির মশার সবাই কামড়ায় না। স্ত্রী প্রজাতির মশা শুধু ডিম পাড়ার আগেই (খাবারের জন্য নয়, ডিমের পরিপুষ্টির জন্য) কামড়ায়। মশা সবার রক্তপান করে না! যার শরীরের রক্ত ভালো সেটা সে টেস্ট করে ফলাফল পছন্দ হলে পান করে! জগলুর উপর মশার আক্রমণের তীব্রতা দেখে বুঝতে পারে তার রক্ত ভালো! বৈশ্বিক মহামারী করোনার প্রকোপে মানুষের মানবিকতা যখন তলানীতে; তখনও কিন্তু মশাদের মশাবিকতা প্রশংসার দাবি রাখে। মশা কাউকে কামড়ানোর আগে স্থানটিকে তাদের নিজস্ব অ্যানেস্থেশিয়া দিয়ে অবশ করে নেয়। যাতে ব্যথা কম অনুভূত হয়! তা না হলে প্রতি কামড়ে কামড়ে মানুষের ‘ওরে বাবা, ওরে বাবা’ বলে চিৎকার করা লাগতো! মনে হয়, মশার জায়গায় মানুষ থাকলে অ্যানেস্থেশিয়া না দিয়ে এলোপাতাড়ি কামড়া-কামড়ি করে একটা অনাসৃষ্টি করে ফেলতো!
এই মুুহূর্তে আকাশে থোকা থোকা কোদালে মেঘ। ফাঁকা দু’এক জায়গায় তারা দেখা যাচ্ছে। সূর্য ছাড়া পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের তারার নাম প্রক্সিমা সেন্টোরাই! পৃথিবী থেকে ৪.২৫ আলোকবর্ষ দূরে। বিজ্ঞানীদের কথা অনুসারে ওটা আমাদের পৃথিবীর মত বা আমাদের পৃথিবীর ডুপ্লিকেট! আকারে কিছুটা বড় বটে! সেই সেন্টোরাই দ্বিতীয় আবাসস্থল হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে! যেদিন নিউজটি খবরের কাগজে পড়েছিল; সেদিন থেকেই মনে ক্ষীণ ইচ্ছা পুষতে লাগলো। সুযোগ পেলে সে সেখানে চলে যাবে। কিংবা কেপলার-১৬০ তারায় ও যাওয়া যেতে পারে! যদিও তার জানা আছে, ‘নো রিটার্ন ওয়ে!’ মানে ফেরার পথ নেই!
সর্বস্বত্ব: এমআরএল মিডিয়া লিমিটেড
ঢাকা অফিস: মডার্ণ ম্যানসন (১৫ তলা), ৫৩ মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০
ময়মনসিংহ অফিস: হাসনাইন প্লাজা (দ্বিতীয় তলা), ৭ মদন বাবু রোড, ময়মনসিংহ-২২০০
সেলফোন: ০৯৬১১-৬৪৫২১৫, ০৯৬৯৭-৪৯৭০৯০
ই-মেইল: jagrota2041@gmail.com
ফোন :
ইমেইল :