০২ ডিসেম্বার ২০১৯, ১৭:২৯ মিঃ
দেশের বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে বৈঠকে অবলোপনকৃত ও খেলাপি ঋণ আদায় বাড়াতে ‘বিশেষ উদ্যোগ’ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি অর্থঋণ আদালতে এসব প্রতিষ্ঠানের বিচারাধীন মামলা ও অডিট আপত্তিগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির তাগিদও দেয়া হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, খেলাপি ঋণ আদায়ে আলাদা ব্যবস্থাপনা, মামলা দায়ের ইত্যাদি মিলে অতিরিক্ত টাকা খরচ হওয়ায় ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেড়ে যায়। এতে ভালো ও নতুন ঋণগ্রহীতাদের চড়া সুদ গুনতে হয়, যা মোটেই কাম্য নয়।
হিসাব অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর শ্রেণি ও অশ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ১৬ হাজার ১০৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের (বিকেবি) ৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) ২ হাজার ১০০ কোটি টাকা, কর্মসংস্থান ব্যাংকের ৯১০ কোটি টাকা ও আনসার ভিডিপি ব্যাংকের ৬৫০ কোটি টাকা। এছাড়া বিএইচবিএফসির শ্রেণিকৃত ও অশ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ ৫৬৯ কোটি টাকা, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ৮৩ কোটি টাকা, আইসিবির ১ হাজার ৩০ কোটি টাকা এবং পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ২ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা। এর বিপরীতে অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক জুলাই-সেপ্টেম্বরে শতকরা হিসাবে প্রতিষ্ঠানগুলো ১১ থেকে ৪৩ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ আদায় করতে সক্ষম হয়েছে; যা অনভিপ্রেত।
দেখা যাচ্ছে, দেশের তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও খেলাপি ঋণের রাশ টেনে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে, যা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। সাধারণত ব্যাংকগুলো দাবি করে থাকে, প্রচলিত নিয়ম-কানুন ও বিধিবিধান মেনে এবং ব্যাংকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তবেই ঋণ বিতরণ করা হয়। আমরাও তাই চাই। কিন্তু প্রশ্ন হল, সবকিছু মেনে এবং যাচাই-বাছাই করেই যদি ঋণ প্রদানের কাজটি করা হয়, তাহলে এভাবে খেলাপি ঋণের উল্লম্ফনের হেতু কী? নিশ্চয়ই এর মধ্যে বড় ধরনের গলদ থেকে যাচ্ছে। এটা ঠিক, বিশেষ কোনো কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভালো উদ্যোক্তারাও খেলাপিতে পরিণত হন; তবে খেলাপি ঋণের যে মোট পরিসংখ্যান দৃশ্যমান হচ্ছে, তা কতটা গ্রহণযোগ্য? এক্ষেত্রে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অবশ্যই তাদের দায় এড়াতে পারে না।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজই হচ্ছে আমানত সংগ্রহের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ ঋণ হিসেবে বিতরণ করে তা থেকে মুনাফা করা। কাজেই ব্যাংকগুলো অবশ্যই ঋণ দেবে। তবে ঋণ যাতে কুঋণে পরিণত না হয়, সে ব্যাপারে তাদের দায়িত্বশীল হওয়াটা জরুরি। শিল্পোদ্যোক্তারা ব্যাংকিং খাতের সহযোগিতায় নতুন নতুন শিল্প-কারখানা গড়ে তুলে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ভূমিকা রাখবেন, এটাই প্রত্যাশিত। এর ব্যত্যয় ঘটলে ব্যাংকিং খাতের ওপর থেকে আমানতকারীদের আস্থা হ্রাস পাওয়াটাই স্বাভাবিক। প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থা দেশের মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনে ব্যর্থ হলে, তা শুভ হবে না এবং এর ফলে বিনিয়োগ তথা দেশের অর্থনীতিতে প্রাণসঞ্চারের কাজটি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। আশঙ্কার বিষয় হল, খেলাপি ঋণ ও অবলোপনকৃত ঋণ বৃদ্ধির পাশাপাশি বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণ ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ করতে পারছে না। এটি সার্বিকভাবে এসব প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতা ও অদক্ষতার বহিঃপ্রকাশ, যা দ্রুত কাটিয়ে ওঠা উচিত। পাশাপাশি অবলোপনকৃত ও খেলাপি ঋণ আদায়ে বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর উদ্যোগ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।
সর্বস্বত্ব: এমআরএল মিডিয়া লিমিটেড
ঢাকা অফিস: মডার্ণ ম্যানসন (১৫ তলা), ৫৩ মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০
ময়মনসিংহ অফিস: হাসনাইন প্লাজা (দ্বিতীয় তলা), ৭ মদন বাবু রোড, ময়মনসিংহ-২২০০
সেলফোন: ০৯৬১১-৬৪৫২১৫, ০৯৬৯৭-৪৯৭০৯০
ই-মেইল: jagrota2041@gmail.com
ফোন :
ইমেইল :